নারী পুলিশের সাইকেলযাত্রার ছবি ফেইসবুকে ভাইরাল

নারী পুলিশের সাইকেলযাত্রার ছবি ফেইসবুকে ভাইরাল

তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার কনস্টেবল লুৎফা বেগমের সাইকেলে করে কর্মক্ষেত্রে যাওয়ার ওই ছবি সোমবার সকালে ফেইসবুকে পোস্ট করেন ঢাকা মহানগর পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার মোশতাক আহমেদ।

সেখানে তিনি লেখেন, “পুলিশে পরিবর্তন বিস্মিত, অভিভূত আমি!! আজ সকালে আমি অফিসে আসার সময় মগবাজার মোড়ে দেখলাম একজন নারী কনস্টেবল সাইকেল চালিয়ে অফিসে যাচ্ছেন। তার কাঁধে ব্যাগ, মাথায় হেলমেট।

১৬ বছরের চাকরি জীবনে পুলিশে বহু ইতিবাচক পরিবর্তন দেখলেও সাইকেলে করে এক নারী সহকর্মীর কর্মস্থলে যাওয়ার এই ঘটনা আলোড়িত করেছে বলে ফেইসবুকে লিখেছেন মোশতাক।

“আমি বিশ্বাস করি লুৎফার এরূপ কর্মস্থলে গমন বাংলাদেশ পুলিশের পরিবর্তন ও উন্নয়নের এক অবিস্মরণীয় মাইলফলক। তার সহকর্মী হতে পেরে আমি গর্বিত।”

 

তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার কনস্টেবল লুৎফা বেগম জানান, বেশ কিছু দিন ধরেই তিনি সাইকেলে যাতায়াত করছেন।

“সাইকেল চড়েই অফিস, কোর্টসহ অফিসিয়াল ডিউটিতে যাই, ঢাকায় অনেক যানজট দেখে বেশ কিছুদিন ধরে সাইকেলেই যাতায়াত করছি।”

২০০৮ সালের ৪ মার্চ পুলিশে নিয়োগ পাওয়া এই তরুণীর বাড়ি সিলেটের বালাগঞ্জ থানায়। এখন থাকছেন রাজারবাগে, পুলিশ হোস্টেলে। চাকরির পাশাপাশি হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর করছেন।

নিজেকে একজন সাধারণ কৃষকের মেয়ে হিসেবে বর্ণনা করে এ পুলিশ সদস্য জানান তার সংগ্রামী জীবনের কথা।

“ছোট বেলা থেকেই সংসারে অনেক অভাব অনটন ছিল, আমি সব সময় ভাবতাম কী করা যায় নিজে থেকে। বেকারত্বকে সবসময় ঘৃণা করে এসেছি, একটা দিনও বেকার থাকতে চাইনি। নবম শ্রেণি থেকেই টিউশনি করে নিজের খরচ নিজে চালিয়েছি।”

এভাবেই ২০০৪ সালে সিলেটের বোয়ালপুর বাজার উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক আর ২০০৬ সালে বালাগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা পাশ করেন লুৎফা।

“২০০৭ সালে যখন শুনলাম পুলিশের সার্কুলার দিয়েছে, আমার বাবা-মা কেউ রাজি ছিলেন না। মেয়েরা পুলিশে চাকরি করবে- তা আমাদের এলাকায় কেউ কল্পনাও করতে পারত না।”

শেষ পর্যন্ত বড় ভাই লুৎফাকে পরীক্ষা দিতে নিয়ে যান। পরীক্ষায় টিকেও যান তিনি। ২০০৭ সালে রংপুর পুলিশ ট্রেনিং কেন্দ্রে ছয় মাসের প্রশিক্ষণ শেষে ঢাকা মহানগরীতে পুলিশে কনস্টেবল পদে যোগ দেন তিনি।

“জীবনে শত বাধা প্রতিকূলতার মধ্যেও থেমে থাকিনি। কারও সাহায্য কিংবা দয়া চাইনি, হাত পাতিনি কারও কাছে। সবসময় চেষ্টা ছিল নিজে থেকে কিছু একটা করার। পুলিশে কাজ করার সুযোগ পেয়ে আমি নিজেকে ধন্য মনে করি”

Archive Calendar
MonTueWedThuFriSatSun
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031