এ’ দিনে — খন্দকার মমতাজ হাসান

আনন্দ সঞ্চারের জন্য এ লেখা নয়। দুঃখ বিস্তারেরও উদ্দেশ্য নহে। চলে যাওয়ার রীতি সব সময?ই আসে। আমারও তাই হতে চলেছে। মনে হচ্ছে সেই কর্মস্থলের প্রথম দিন আর শেষতক্? যেন একটি মাত্র পূর্ণ কর্ম দিন। যেমন রাত প্রভাতের পর ক্রমে আলো আর্বিভূর্ত হয়। অতঃপর ক্রমে দিনের দ্বি-প্রহর, পড়ন্ত বেলা পার হয?ে সন্ধ্যা অতিক্রান্ত হয়ে রাত্রি নামে। সে রকম মনে হচ্ছে “সাড়ে তিন যুগেরও বেশী” সময়টাকে – আমার কর্মক্ষেত্রকে মতিঝিলস্থ বাংলাদেশ ব্যাংকে।
আজ মনে হয় দিন কতো ছোট, কতো ছোট্ট জীবন পরিধি। জীবনের রূঢ় বাস্তবের ছোঁয়া বস্তুত কতখানি পেয়েছি জানি না । তবে জীবন মানেই কঠিন ও রূঢ়তা। যেমন নতুন বছরে মিডিয়ার মুখোমুখি হলে গণ মানুষেরা বলে থাকেন চলে যাওয়া দিনটি ভাল; কালকের দিনটা তা নাও হতে পারে। ৩৫ বছর অপেক্ষা পূর্বে যাঁদেরকে এই সোনার ব্যাংকটিতে দেখেছিলাম তাদের মধ্যে যারা তখন প্রায় প্রবীণ ছিলেন তাঁরা তো অনেকে আজ নেই; যাদের স্মৃতি ঝাপ্সা হয?ে গেছে। আর পরেও যারা মধ্য বয়সী ছিলেন তাদেরও দেখা যায় না, মানস নয়ন পটে। অনেকে আমার চাকরী জীবনে একই সময় যোগদান করেও কর্মজীবন পরিণতা প্রান্তি হওয়ার পূর্বেই চির বিদায় নিয়েছেন। তাদের কথা ভুলিই বা কিভাবে। চোখ বুজে স্মৃতি চারণ করলেই মনে হয়। যেমনঃ “ভৈরব নিবাসী’ মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন সাহেব; যিনি অফিসের মধ্যেই সেদিন হঠাৎ অসুন্থ হয?ে স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুকে বরণ করেছিলেন। ১৯৮১তে প্রধান কার্যালয?ের নিরীক্ষা ও পরিদর্শন (অডিট ব্যতীত বড় অংশটি) বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক, সদরঘাট ভবনে স্থানান্তরিত হলে সিরাজগঞ্জবাসী মিতভাষী মোঃ ইসমাইল হোসেন সাহেব যিনি সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক মতিঝিল অফিসের উপ মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) হতে বিদায় নিয?ে এইচআরডিতে ‘লিভ রিজার্ভে’ আছেন। তীর স্থলে সেদিন ১৯৮১ তে আসা সুনীল কুমার বিশ্বাস (স্বর্গীয় তরুণ) লোকটির কথা। শুনেছি প্রকৌশলে চান্স পেয?েও যিনি বাংলাদেশ ব্যাংকে জীবিকায? যুক্ত হয়েছিলেন। এই ফরিদপুরবাসী – যাক্? মা-বাবা আর পরিবারের সহায়তায় প্রথম ৫/৭ বছর তারপর নিজের সংসারিক সহযোগিতায় বাকী ২৯ বছর এভাবে চলে আসলো। দুইয়ে দুইয়ে চার আবার দুই দ্বিগুণে চার, এটা গানের কলিতে জানলেও বাস্তবে তেমন উপলব্ধি করে সময় পার করিনি। অনেকটা গোয়ালের গরুর মত সায?াহ্নে গৃহে ফিরে এসেছি। মনে হয় এর বাইরে কর্ম জীবনে বেশী ভাবনার অবকাশ তেমন থাকে না। অবচেতন বা সচেতন মনে বিদ্যালয? যাওয়া অপেক্ষা কর্ম ক্ষেত্রে যাওয়াই যেন গুরুত্ব বেশী হয়ে যায়। বঙ্গবন্ধু যুগ পার হয়ে জিয়ার কালের শেষার্ধে যোগদান আর ২টি সেনা সমর্থিত শাসনকাল কর্ম জীবনে পার হয়ে আমি বাংলাদেশের স্থপতি-দুহিতার সোনালী শাসনকালে বর্তমানে পার হয়ে চলেছি এখন। পারাপার কিভাবে সমাপ্ত হবে আমার কে জানে? ‘ভবি’র কথা’ কেহ কি বলতে পারে। আবহাওয?ার মতন সত্যাসত্য বিজ্ঞান কেবল “চৎবফরপঃরড়হ” বা ভবিষ্যত বাণী করতে পারে। যা হয় কখনো
৪০% থেকে ৬০% সত্য হয় আবার কখনো তাও হয় না। যে দিন গ্রেড-২ করনিকে নির্বাচনের পর ১৯৮০ সনের নভেম্বরে অফিসে যোগদান করার জন্য পার্সোনেল ডিপার্টমেন্টে (বর্তমানে এইচআরডি) মরহুম ময়নাল হক খান (আল্লাহ তার রুহের মাগফিরাত করুন)। তখনকার প্রথম শ্রেণীর রিক্রুটমেন্ট কর্মকর্তার সামনে বসারত। সে সময? হঠাৎ স্যার আমার পরীক্ষার খাতা বের করে ০২টি লাইন উচ্চারণ করে নিজ আসনে বসে আমায় শোনালেন । আমি তা লিখলাম। চেকের সহি মিলাবার মতো তাৎক্ষণিকভাবে মরহুম স্যার তা মিলালেন এবং আমাকে ” একজন সফল সিপাহীর মত তারিফ করলেন”। আমি অনভ্যন্ত কর্ম জীবনে হাঁটি হাটি পা পা করে এগোলাম। তখন কিন্ত বি.এ (পার্সকোর্স) উত্তীর্ণ নহে অবতীর্ণ আগেই হয়েছিলাম ৩য় বারের বার। আর ৮১ সনের মে মাস শেষে জানতে পারি যে পাস করি ২য? বিভাগে । বাবা তখন সদ্য অবসরে। “সর্প্রথমবার তো পিতা পাসের (ভুয়া) সংবাদ শুনে করতালি দেন খুশীতে, আমি তা হতে পারি নাই” । অন্য একজন সহপাঠী বন্ধুর মতামত শুনে মা-বাবাকে মিথ্যা পাসের ‘নিউজ’ দিয়েছিলাম। পরে মনে হল, সত্য জেনে বাবা আমার স্বস্তি পাক, আর আমিও মুক্তি পাই। বাবা তো অবাক “পাস করিস নি । তবে এই যে একটু আগে বললি যে! তখন মা শোনালেন। যাক পাস করেনি ভবিষ্যতে করবে- ইন্শাল্লাহ।“
কর্ম জীবনের প্রথম সাড়ে ৮ বৎসর পার হয়ে আমি ইসিডিতেও অনুরূপ দীর্ঘকাল কাটিয়ে শেষে এলাম ঊঈউ(ওহাবংঃসবহঃ)। সে সময? সরাসরি নির্বাচিত অফিসার কে যেন বললেন “এর পর কোথায় বদলি হয়ে যাবেন” ? অতঃপর এলাম গবেষণা বিভাগের জ্ঞান মন্দিরে । দেখে তো অবাক, যেই অর্থনীতির কারণে আমার ছাত্র জীবনে ফেলের পঙতিমালা, এখানে প্রায় সবাই অর্থনীতির মাস্টার্সে উচ্চ শিক্ষিত। কর্মজীবনে কাজে আমি বিশেষ পারঙ্গমতা কোন দিনই দেখাতে পেরেছি বলে মনে করি না। তবে সফল না হলেও অধিকাংশ সময়েই যতœশীল হওয়ায় ইচ্ছেটা পোষন করেছি। ব্যাংকিং ডিপ্লেমা বা এম.এ কোনটাই আমার ৩৫ বছরের কর্ম জীবনে নেয়া সম্ভব হয়নি। তবে বিবিটিএ তে এই সময়কালে অন্তত সাতবার অংশ নিই। আমার ইন্টারভিউকালে যতখানি স্মরণ হয়, স্যার জেড হাসান সিদ্দিকী মহোদয় “ভাইবা – বোর্ডে’ ছিলেন বলে মনে হয়। ১৯৮৮ সালে যখন টঢ় এৎধফধঃরড়হ মাধ্যমে অফিসার পদে উন্নীত হই । তখন দেখি সিদ্দিকী স্যার (১৯৮৯ সনের শেষার্ধে) বিবিটিএ তে যখন ক্লাস নিতে ঢুকতেন – মুগ্ধতম হয়ে তরুণী ও তরুণরা সবাই শ্রবণ করতো । ধূমবেষ্টিত হয়ে স্যার বক্তব্য রাখতেন।
চাকরীর বয়স ৫০ পৌঁছার পূর্বেই দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেটের অফিসে বদলী আমার জন্য অভিজ্ঞতা আনে। সেদিন হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা প্রায় বেশের মত ই অদ্ভুত সাজে বেলা সাড়ে বারোটায় ঢাকা হতে সিলেটে শ্যামলী পরিবহনের (এসি) বাসে পৌঁছি। একা একা ০২টি বছর সিলেটে যেয়ে থাকতে পারলাম তা আল্লাহর নিকট শুকরিয়া জানাই। সিলেট পবিত্র মাজার শরীফের শহর। নয়নাভিরাম অঞ্চল। আমাদের ০৩ ভাই-বোনের ওখানে বিয়ে হলেও যোগাযোগ তেমন গড?ে ওঠেনি। কেবল একদিন মায?ের নিকট হতে খবর পেয়ে অফিস অনতি দূরে অনুজ ভাইয?ের নানা শ্বশুর সাহেবের বাড়ী বেড়াতে যাই। নানা শ্বশুরের বাসাটি মরহুম কর্ণেল এম.এজি ওসমানীর [মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায?ক) স্মৃতি যাদুঘরের ঠিক উল্টো দিকে । শুনেছি যাদুঘরের রক্ষণাবেক্ষণকারীদের হতে বঙ্গবীরের পিতা নাকি কর্মজীবনে ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন। বাবাও ১৯৪৬ সানে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করে ১৯৫১ বা ১৯৫০ সনে সাব-ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হয়ে কর্ম জীবনে প্রবেশ করেছিলেন। যদিও অডিটর হিসাবে গভমেন্ট এ চাকুরী এবং ময?মনসিংহের ত্রিশাল, দরিরামপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে তিনি ২/১ বছর শিক্ষকতাও করেছিলেন। কেবল নিজের একটি বোন (অগ্রজ) ছাড়া সব ভাই বোনেরা কর্ম ও সংসার জীবনে কর্মব্যাস্ত ছিল/আছে। যদিও এই বোনটির ছিল হয়তো সর্বোত্তম ডিগ্রী অর্জন হওয়ার কথা, তবে তা হয?নি। অবসর-উত্তর সময়টা বই পড?েও স্বাস্থ্যটা ভাল রেখে যে কয়দিন পারি চালিয়ে নেবার ইচ্ছা। সব ইচ্ছা তো পূরন হয় না “গধহ ঢ়ৎড়ঢ়ড়ংবং, এড়ফ ফরংঢ়ড়ংবং”
(“আশা তার একমাত্র ভেলা”)।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মহোদয় কবিতায় বলেছেন, শুধু বলে রাখা যেতে দিতে হয়, যদিও যেতে দিতে ইচ্ছা নাহি। আমারও বলতে ইচ্ছে করে “চলে যাওয়ার সময় হলে (প্রয়াত শিল্পী-সুরকার আনোয়ার উদ্দীন খানের গানের ভাষায়)” আমার কফিন সাজিও দিও তোমার চোখের জলে । হয়তো জলে নয় তা হউক মনের মানসিক বলে।

খোদা – খোদা – তুমি মুক্তি ও শান্তি দাও,
দাও শক্তি এই জনপদে —– বাংলার ব-দ্বীপে।
খোদা হাফেজ

খন্দকার মমতাজ হাসান
যুগ্ম ব্যবস্থাপক, মতিঝিল অফিস, ঢাকা।
(*২০১৬ সনে রচিত)

রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসককে বদলিজনিত ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়েছে রাঙ্গামাটি প্রেস ক্লাব কর্মময় জীবনে জেলাবাসীর পাশাপাশি সাংবাদিকরাও অনেক সাহায্য করেছেন —–মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন খান জেলা প্রশাসক হিসেবে তিনি বিভিন্ন ধরনের সমস্যা শক্তহাতে সমাধান করেছেন —-এ কে এম মকছুদ আহমেদ

Archive Calendar
Mon Tue Wed Thu Fri Sat Sun
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031