মানবিকতার মূল্যবোধ না জাগলে পরিবর্তন আসবে না-পার্বত্য উপদেষ্টা

॥ ডেস্ক রিপোর্ট ॥ পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা বলেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের কৃষকরা তাদের উৎপাদনের সঠিক মূল্য পায় না। মিডলম্যানরা তা শুষে নিচ্ছে। মানুষের মধ্যে মানবিকতার মূল্যবোধ থাকতে হবে। মানবিকতার মূল্যবোধ না জাগলে পরিবর্তন আসবে না।
মঙ্গলবার (১৩ আগষ্ট) ঢাকায় বাংলাদেশ সচিবালয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা’র সাথে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেওয়া পার্বত্য চট্টগ্রামের ছাত্ররা স্বউদ্যোগে মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার সাথে সাক্ষাৎকালে উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা আরো বলেছেন, সমাজকে বৈষম্যহীন করে গড়ে তুলতেই অন্তর্বতীকালীন সরকার গঠন করা হয়েছে। তিনি বলেন, রাজনীতিতে ইমোশনের কোনো জায়গা নাই। ভুল করারও সুযোগ নাই। উপদেশ হলো, অনেক কাজ হয়েছে। এখন সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমাদের পাশে সাহসী লোকজন আছে। এদেশটা আমার-আমাদের। ভেদাভেদ বলতে কিছু নাই। কোয়ালিটি দরকার। আমাদের কর্মক্ষম লোক দরকার। তিনি ছাত্রদের বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে উন্নয়নের কোনো পরামর্শ থাকলে আমাদের দিবেন।
উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা আরও বলেন, সকলের মধ্যে কনফিডেন্স গড়ে তুলতে হবে। প্রত্যেকে ভাই ভাই সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। তিনি বলেন, সকলের মনে ইকুইটি গড়ে তুলতে প্রয়োজন লিডারশীপ। উপদেষ্টা বলেন, আমাদের শিক্ষার প্রতি বেশি নজর দিতে হবে। আমাদের আগের পলিসি সংস্কার করে নতুন পলিসি করা প্রয়োজন। তিনি বলেন, সকল পলিসিই হতে হবে মানব কল্যাণে। তিনি আরও বলেন, ডিজিটালাইজড ফর্মে সকল ছাত্রছাত্রীদের আনা হবে। তিনি খাগড়াছড়িতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এফিলিয়েটেড ভার্সিটি গড়ে তোলার উপর গুরুত্বারোপ করেন। অতি সহজেই একজন পাহাড়ের ছাত্র যেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট লাভ করতে পারে সে ব্যবস্থা করার ইচ্ছা পোষণ করেন তিনি।
উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা বলেন, পাহাড়ি এলাকায় এখন উচ্চফলনশীল ও উপকারি গাছ লাগাতে হবে। তিনি বলেন, পরিবেশ ও সামাজিক ভারসাম্য ঠিক রেখে বনায়ন করতে হবে। তিনি বাঁশ চাষের প্রতি গুরুত্বারোপ করে বলেন, বাঁশ হচ্ছে পরিবেশ বান্ধব। পানির প্রবাহের জন্য বাঁশ চাষের গুরুত্ব অনেক বেশি। এছাড়া আমাদের খাল, নদী, ঝিরিগুলোর প্রবাহকে সচল রাখতে হবে। সে লক্ষ্যে আমাদের কাজ করতে হবে। উপদেষ্টা আরও বলেন, পার্বত্য এলাকায় তামাক চাষকে নিরুৎসাহিত করতে আমাদেরকে বেশি বেশি ইক্ষু, কফি, কাজু বাদাম, আঙ্গুর চাষ, তুলা চাষ এছাড়া আম, কাঁঠাল বাগান সৃজন এবং বাঁশ চাষের উপর গুরুত্ব দিতে হবে। তিনি বলেন, প্রথমেই আমাদের পরিবেশকে ঠিক করতে হবে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব এ কে এম শামিমুল হক ছিদ্দিকী বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অবদান রাখা ছাত্রদের উদ্দেশে তার নিজের ইচ্ছা ব্যক্ত করে বলেন, পার্বত্য অঞ্চলের মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও স্বাবলম্বি হতে কিছু স্কিম গ্রহণ করতে হবে। তিনি বলেন, পার্বত্য তিন জেলার রাস্তার উভয় পাশে ফলের চারা লাগানো দরকার। রাস্তার পাশের ফলের মালিকানার অংশীদার হবেন রাস্তার পাশের দরিদ্র জনগোষ্ঠী। এজন্য পরিচর্যা বাবদ তারা ভাতাও পাবেন। সচিব আরও প্রস্তাব করেন, গরিব প্রসূতি মায়েদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে আনা নেয়ার জন্য তিন পার্বত্য জেলা থেকে অর্থের একটি থোক বরাদ্দ রাখা প্রয়োজন। নবজাতক শিশুদের জন্য একটি গিফট বক্স রাখারও প্রস্তাব করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক সচিব এ কে এম শামিমুল হক ছিদ্দিকী। তিনি বলেন, নতুন ও আধুনিক পার্বত্য চট্টগ্রাম আমরা গড়তে চাই।
ছাত্ররা উপদেষ্টার কাছে পার্বত্য অঞ্চলের পানির সংকট নিরসন, চাঁদাবাজি বন্ধ করা, শিক্ষা ব্যবস্থায় লবিং ও দুর্নীতি বন্ধ করার আহ্বান জানান। উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা মনোযোগ দিয়ে ছাত্রদের কথা শুনেন এবং এসব বিষয়ে কাযর্করি ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানান।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পার্বত্য চট্টগ্রামের পক্ষে মোহাম্মদ এরফানুল হক, শাহাদাৎ ফরাজী, মিনহাজ মুরশীদ, থোয়াইচিংমং চাক, রফিকুল ইসলাম, জিয়াদ, রামখুমলিয়ান মংপা বম, মো. রাসেল মাহমুদ, ইরফান ও মিনহা ত্বৌকি উপস্থিত ছিলেন।
এসময় অন্যান্যের মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব এ কে এম শামিমুল হক ছিদ্দিকী, অতিরিক্ত সচিব মো. আমিনুল ইসলাম, অতিরিক্ত সচিব প্রদীপ কুমার মহোত্তম এনডিসি, যুগ্মসচিব সজল কান্তি বনিক, উপসচিব কংকন চাকমা, উপসচিব মোহাম্মদ শরীফুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

Archive Calendar
MonTueWedThuFriSatSun
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30