মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে সরকারি বাহিনীর দমন-পীড়নের শিকার হয়ে বাড়িঘর ছেড়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা নিপীড়ন-নির্যাতন-সহিংসতার শিকার হতে পারে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ।
জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় (ইউএনএইচসিআর) গত বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ বিষয়ে সতর্ক করা হয়। বাংলাদেশে সংস্থাটির প্রতিনিধি শিনজি কুবো বলেছেন, “দ্রুত ও যথোপযুক্ত ব্যবস্থা না নিলে বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা শিশু শ্রম, লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা ও পাচারের শিকার হতে পারে।”
ইউএনএইচসিআরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত বাংলাদেশের বিভিন্ন আশ্রয় শিবির ও অস্থায়ী শিবিরে ৭৪ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছে। বর্ষা শুরুর আগে তাদের অনেকেরই যথাযথ আশ্রয় প্রয়োজন।
গত বছর অক্টোবর মাসে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে পুলিশের একটি সীমান্তচৌকিতে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সেখানে নতুন করে রোহিঙ্গাদের ওপর দমন-পীড়ন শুরু হয়। জাতিসংঘ ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের ভাষ্য অনুযায়ী, সরকারি বাহিনীর ব্যাপক হারে হত্যা, ধর্ষণ, গণধর্ষণ, লুটতরাজ, অগ্নিসংযোগের কারণে গত বছরের শেষ নাগাদ ৪৩ হাজার রোহিঙ্গা প্রাণভয়ে পালিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থা (ওএইচসিএইচআর) গত ফেব্রুয়ারি মাসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনেও জানায়, মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর দমন-পীড়ন থেকে শিশুরাও রক্ষা পায়নি। ওই প্রতিবেদনে জানানো হয়, বহু প্রত্যক্ষদর্শী এবং ভুক্তভোগী ওএইচসিএইচআরকে সাক্ষাৎকারে বলেন, সরকারি বাহিনী তাদের ওপর দমন-পীড়নের সময় নানা ধরনের কথাই বলেছে, যেমন তোমরা বাংলাদেশি, তোমাদের ফিরে যাওয়া উচিত।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ওপর ইউএনএইচসিআরের সাম্প্রতিকতম প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, গত পাঁচ বছরে মিয়ানমার থেকে ১ লাখ ৬৮ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে গিয়ে থাকতে পারে। এই অঞ্চলে শরণার্থী জীবন বেছে নেওয়া এবং অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গার সংখ্যা যথাক্রমে ৪ লাখ ২০ হাজার এবং ১ লাখ ২০ হাজার। ২০১২ সাল থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে মালয়েশিয়ায় পৌঁছাতে ১ লাখ ১২ হাজার ৫০০ রোহিঙ্গা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় করে বঙ্গোপসাগর ও আন্দামান সাগর পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করে।
ইউএনএইচসিআরের প্রতিবেদনে মালয়েশিয়া, ভারত এবং ইন্দোনেশিয়ায় অবস্থানরত রোহিঙ্গা নারী ও কিশোরীদের জীবনচিত্রও তুলে ধরা হয়েছে। ৮৫ জন নারী ও কিশোরীর সঙ্গে কথা বলে ওই চিত্রটি তুলে ধরা হয়। এতে জানা যায়, তাদের বেশির ভাগেরই ১৬ অথবা ১৭ বছর বয়সে বিয়ে হয়ে গেছে এবং গড়ে ১৮ বছর বয়সে তাঁরা সন্তানের মা হয়েছেন। এক-তৃতীয়াংশই অভিযোগ করেছেন, তাঁরা পারিবারিক নির্যাতনের শিকার।
ইউএনএইচসিআর বলেছে, সহাবস্থান এবং নাগরিকত্ব-সম্পর্কিত বিষয়গুলো চিহ্নিতকরণ ও সমাধানে তারা সরকারের চেষ্টায় সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রয়েছে।