চট্টগ্রামে নৌবাহিনীর মামলায় চার শিক্ষার্থী গ্রেফতার

চট্টগ্রামঃ-নৌবাহিনীর কাজে বাধা প্রদানের অভিযোগে চার শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করেছে চট্টগ্রামের ইপিজেড থানা পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, নৌবাহিনীর সদস্যরা বৃহস্পতিবার (৪ মে) রাতে ওই শিক্ষার্থীদের থানায় সোপর্দ করেছে।
শুক্রবার (৫ মে) বিকেলে ওই চারজনকে চট্টগ্রাম কিশোর আদালত-১ এর বিচারক এসএম পারভেজের আদালতে হাজির করে পুলিশ। আদালত তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে করা জামিন আবেদন নাকচ করে দেন। পাশাপাশি আদালত তাদের পুলিশ পাহারায় চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
চার শিক্ষার্থী হলেন, চট্টগ্রামের বিএফ শাহীন কলেজের ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী আশিকুল হক (১৮), কুমিল্লা রেসিডেন্সিয়াল কলেজের ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী মিরাজুল হাসান, চট্টগ্রাম বেপজা পাবলিক স্কুল ও কলেজ থেকে সদ্য এসএসসি পাশ করা সীমান্ত বড়ুয়া ও ‘এলএমএফ’ কোর্সে (চিকিৎসা বিদ্যায় লাইসেন্সশিয়েট মেডিকেল ফ্যাকাল্টি) অধ্যায়নরত প্রশেনজিত মজুমদার। আশিকুল, মিরাজুল ও প্রশেনজিত চট্টগ্রামের বেপজা পাবলিক স্কুল ও কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী ছিলেন।
নৌবাহিনীর পক্ষ থেকে চট্টগ্রামের ইপিজেড থানায় করা মামলার বাদী হলেন মো. রনি মিয়া, পি এম-২, সঃ সংখ্যা ২০১৫০২০১, নেভাল প্রভোস্ট মার্শাল, চট্টগ্রাম এরিয়া।
মামলার বিবরণীতে উল্লেখ করা হয়, নাবিক কলোনীর রোডে বাসমতি হোটেলের সামনে ৪ মে (বৃহস্পতিবার) অনুমানিক বিকেল ৫টা ৪০ মিনিটের (১৭ : ৪০) দিকে ১০-১২ জন ছেলে কোচিং করে ফিরতে থাকা মেয়েদের ইভটিজিং করছিল। তখন মো. রনি তাদের জিজ্ঞাসা করেন, ‘আপনারা এখানে গোল হয়ে আড্ডা দিচ্ছেন কেন?’ এ সময় ওই ছেলেদের মধ্যে থেকে প্রশেনজিত বলে, ‘আপনার সমস্যা কি?’ তখন মামলার বাদী বলেন, ‘এইটা তো নৌবাহিনীর রাস্তা। এই রাস্তায় আড্ডা মারা নিষেধ। মেয়েদের ইভটিজিং করেন কেন?’ এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রশেনজিত বলে, ‘তোর কি হয়েছে?’
এরপর মো. রনি তার (প্রশেনজিত) ও তার বাবার পরিচয় জানতে চাইলে প্রশেনজিত তাদের ‘মানুষ’ বলে পরিচয় দেয়। একপর্যায়ে ওদের সঙ্গে থাকা আশিকুল হক নামের একজন মামলার বাদীর গালে থাপ্পর মারে উচ্চস্বরে বলে, ‘গুলি করে ফেলে দিব।’ তখন মো. রনি আশিকুল হককে ধরে ফেলে। এ সময় অন্যরা রনিকে এলোপাতাড়ি মারতে শুরু করে। তার ইউনিফর্মের বোতাম ছিঁড়ে ফেলে, পরিচয়পত্র, এনপি ব্যাজ ছিঁড়ে ফেলে এবং মাথার টুপি ফেলে দেয় বলে মামলার বিবরণীতে উল্লেখ করা হয়।
এরপর ওই ১০-১২ জন ছেলের মধ্যে চারজনকে উপস্থিত সাধারণ মানুষের সহযোগিতা আটক করা হয়। পরে ওই চারজনকে বানৌজা ঈসা খা গার্ড রুমে নিয়ে যাওয়া হয় বলেও বিবরণীতে উল্লেখ করেন মো. রনি।
এদিকে, ওই শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা অভিযোগ করেছেন, থানায় সোপর্দ করার পূর্বে ওই শিক্ষার্থীদের নির্যাতন করা হয়েছে।
অভিভাবকদের দাবি, থানায় সোপর্দ করার প্রায় ৩ ঘন্টা আগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নেভি গেইট এলাকায় অবস্থিত বাসমতি রেস্টুরেন্টের সামনে আড্ডা দেওয়ার কারণে নৌবাহিনীর লোকজন ওই শিক্ষার্থীদের গার্ড রুমে ধরে নিয়ে যায়। সেখানে তাদের ওপর নির্যাতন চালানো হয়। এ ছাড়া তাদের মাথা মুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
ওই চার শিক্ষার্থীর মধ্যে মিরাজুল হাসান বলেছেন, “বন্ধু সীমান্ত বড়ুয়ার এসএসসি’র ফল প্রকাশ হলে তাকে নিয়ে আমরা ৫-৭ জন বন্ধু নেভি হাসপাতাল গেইটে অবস্থিত বাসমতি রেস্টুরেন্ট খাবার খেতে যাই। সন্ধ্যার দিকে খাবার শেষ করে রাস্তায় বের হলে ওখানে কর্মরত নৌবাহিনীর এক সদস্য আমাদের ডাক দিয়ে বলে ‘রাস্তা কি তোদের বাবার? রাস্তায় এতজন মিলে কিসের আড্ডা দিস?’ আমরা বললাম, ‘আংকেল গালাগালি করতেছেন কেনো, আপনি ভালোভাবে বললে আমরা এমনি চলে যেতাম।’ একথা শুনে নেভির আংকেলটা বললেন, ‘আমার মুখে মুখে কথা। এরপর তিনি তার সঙ্গী অফিসারদের ডেকে এনে আমাদের চারজনকে বেধড়ক মারধর করে বানৌজা ঈসা খাঁ গার্ড রুমে নিয়ে যায়। এরপর ওখানে উপস্থিত আরও কয়েকজন নৌবাহিনীর আংকেল আমাদের হাত-পা বেঁধে মাটিতে ফেলে অমানুষিকভাবে নির্যাতন চালায়। তারপর আমাদের মাথার চুলও কেটে ফেলেন তারা। এভাবে নির্যাতনের এক পর্যায়ে তারা আমাদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে থানায় হস্তান্তর করেছেন।’
আরেক শিক্ষার্থী সীমান্ত বড়ুয়ার পিতা প্রভাত বড়ুয়া অভিযোগ করে বলেছেন, ‘আমার ছেলেসহ তার বন্ধুদের পৈশাচিক এই নির্যাতনের বিচারের জন্যে প্রয়োজনে আমরা হাইকোর্টে রিট করব। এমন অমানবিক নির্যাতনের যেন আমরা সঠিক বিচার পাই সে ব্যাপারে আমরা আপনাদের অর্থাৎ মিডিয়া ভাইদের সহযোগিতা কামনা করছি। আমরা চাই এই নির্যাতনের প্রতিবাদে সকলেই আমাদের পাশে থাকবে।’
এ বিষয়ে প্রতিবেদকের সাঙ্গে মোবাইল ফোনে আলাপকালে মামলার বাদী মো. রনি মিয়া ওই ৪ জনকে নির্যাতনের বিষয়টি অস্বীকার করেন।
‘তারা কিভাবে আহত হয়েছে?’ জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে জানেন না বলে এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম ইপিজেড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল বশার জানিয়েছেন, নৌবাহিনীর কাজে বাধা প্রদান করায় চার কিশোরের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। তবে ওই চারজনকে নির্যাতনের বিষয়ে এখনো কিছু জানতে পারেননি বলে জানান তিনি।

Archive Calendar
MonTueWedThuFriSatSun
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930