ধ্বংসস্তুপে পরিণত মেঘের রাজ্য সাজেক, দিনের আলোয় স্পষ্ট ক্ষতচিহ্ন

॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ পাহারের অন্যতম দর্শনীয় পর্যটন কেন্দ্র মেঘের রাজ্য সাজেক এখন অনেকটাই ধ্বংসস্তুপে পরিণত। দিনের আলো পুড়তেই বেড়িয়ে আসে ভয়াবহ অগ্নিকা-ের ক্ষতচিহ্ন। রির্সোট, কটেজ, দোকান, ঘরবাড়িসহ আগুণে পুড়ে গেছে অনেক স্থাপনা। দুইদিন আগেও যে পর্যটক কেন্দ্র সাজেক মুখোরিক ছিলো তা এখন ধ্বংসস্তুপে পরিণত। চারিদিকে পোড়া গন্ধ বের হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসনের তথ্য মতে পাহাড়ের অন্যতম দর্শনীয় স্থান সাজেক ভ্যালিতে লাগা আগুণে প্রায় শতাধিক রির্সোট, কটেজ, দোকান ও ঘরবাড়ি। সর্বস্ব হারিয়ে বিনিয়োগকারীরা এখন নিঃস্ব ও খোলা আকাশের নীচে। এতে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৮০ কোটি টাকারও বেশি বলে জানান হোটেল-মোটেল মালিক ব্যবসায়ীরা। তারা চায় সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া হোক। শতরঞ্জি রিসোর্টের মালিক নাইমুল ইসলাম বলেন, ফেব্রুয়ারির ২৮ তারিখ রিসোর্ট উদ্বোধন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আজকের আগুনে সব স্বপ্ন শেষে হয়ে গেছে। এতে আমার প্রায় ৬০ লাখ টাকা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
মেঘের ঘর রিসোর্টের মালিক জয়নাল আবেদীন বলেন, আমার সব কিছুই শেষ হয়ে গেছে। দুপুরে দেখলাম অবকাশ রিসোর্টের কিছু দূরে আগুন। সেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে এবং দুটি রিসোর্ট ও একটি রেস্টুরেন্ট মুহূর্তে পুড়ে যায়। পরে জ্বলতে থাকে একের পর এক রিসোর্ট। আমরা একবারে নিঃস্ব হয়ে গেছি।
সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারী) দুপুর ১টার দিকে অবকাশ রিসোর্ট থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। মুহুর্তেই আগুন আশপাশের রিসোর্টে ছড়িয়ে পড়ে। প্রথমে স্থানীয়দের সহায়তায় সেনাবাহিনী, বিজিবি সদস্যরা আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। পরে দীঘিনালা থেকে ফায়ার সার্ভিস এসে সন্ধ্যায় আগুণ নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। আর আগুনের কারণে তাৎক্ষণিক রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসন থেকে পর্যটক ভ্রমনে নিরুসাহিত করা হলেও মঙ্গলবার তা আরো তুলে নেয় জেলা প্রশাসন।
এদিকে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক পর্যটন কেন্দ্রে সোমবারের ভয়াবহ অগ্নিকা-ের ঘটনা তদন্তের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। প্রয়োজন হলে কমিটি অতিরিক্ত সদস্য কো-অপ্ট করার ক্ষমতা রাখে।
এই ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসন, পর্যটক ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। আগুনের উৎস ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণের পাশাপাশি ভবিষ্যতে এই ধরনের দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করবে তদন্ত কমিটি।
বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার শিরিন আক্তার জানান, সাজেক ভ্যালিতে দমকলের কোনো স্টেশন না থাকায় এবং পানির অভাবে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সময় লেগেছে। তিনি আরও জানান, প্রাথমিকভাবে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও স্থানীয়রা মিলে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে। পরে খবর পাওয়ার পর নিকটবর্তী দমকল স্টেশন খাগড়াছড়ি দীঘিনালা উপজেলা থেকে একটি ইউনিট রওনা দেয়। পাহাড়ি পথে ফায়ার সার্ভিসের ইউনিট পৌঁছাতে সময় লাগে প্রায় দুই ঘণ্টা। এরপর আগুন নেভানোর কাজ শুরু করলেও পানি না থাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণে বেগ পেতে হয়েছে। পরে খাগড়াছড়ি সদর থেকে আরও দুইটি ইউনিট আগুন নেভানোর কাজে অংশ নেয়। সন্ধ্যার দিকে আগুণ নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়।
তিনি আরো জানান, আগুন কীভাবে লেগেছে সেটি এখনো জানা যায়নি, এই বিষয়ে তদন্ত টিম কাজ করছে। এখনো ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের কাজ চলছে। শেষ হলে বিস্তারিত জানানো যাবে। কমিটির রিপোর্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। সেখান থেকে যে নির্দেশনা আসবে সেভাবে কাজ করা হবে।’
রাঙ্গামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ বলেন, সব মিলে ৯০-৯৫টির বেশী রিসোর্ট, দোকান ও বসতঘর পুড়ে গেছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে হেলিকপ্টারের মাধ্যমে পানি ছিটানোর আলোচনা হলেও সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ায় সেটা করা হয়নি। এই ঘটনায় হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের কাজ চলছে।

Archive Calendar
MonTueWedThuFriSatSun
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31