রাঙ্গামাটি জেলায় মৃতের সংখ্যা ১১৩, ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শনে পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী ও সেনাবাহিনীর ইসিবি প্রধান

॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ রাঙ্গামাটিতে ব্যাপক পাহাড় ধ্বসের ঘটনায় বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের ক্ষতিগ্রস্থ অংশে দ্রুত সংস্কার করে আগামী তিন দিনের মধ্যে হালকা যানবাহন ও এক মাসের মধ্যে ভারী যানবাহন চলাচলের উপযোগী করে খুলে দেয়া হবে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের চীফ মেজর জেনারেল সিদ্দিকুর রহমান শনিবার রাঙ্গামাটিতে পাহাড় ধ্বসে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা ও রাস্তা পরিদর্শণে এসে তিনি রাঙ্গামাটি সার্কিট হাউজে সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
তিনি জানান, রাঙ্গামাটি চট্টগ্রাম সড়কে ১৪৫ টি পয়েন্টে পাহাড় ধ্বসে রাস্তার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ সড়ক যোগাযোগ পুন স্থাপনার জন্য সেনা বাহিনীর ও সড়ক জনপথ বিভাগের সদস্যরা সর্বশক্তি দিয়ে কাজ করছে। বৃষ্টিপাত না হলে এই কাজ দ্রুত সম্পন্ন হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এ সময় সেনাবাহিনীর চট্টগ্রাম এরিয়া কমান্ডার ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল জাহাঙ্গীর কবির তালুকদার ও রাঙ্গামাটি রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল গোলাম ফারুক উপস্থিত ছিলেন।
চট্টগ্রামের এরিয়া কমান্ডার জিওসি মেজর জেনারেল জাহাঙ্গীর কবির তালুকদার বলেন, রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম সড়কসহ অভ্যন্তরীন সড়কগুলোও দ্রুত চালু করার জন্য ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এছাড়া  কাপ্তাই রাঙ্গামাটি নৌ পথে পানি, জ্বালানী তেল ও পন্য পরিবহনসহ লোকজনের চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিনি সকলের সমন্বিত প্রয়াজে দূর্যোগ মোকাবেলা করা সম্ভব হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। পরে সেনাকর্মকর্তারা রাঙ্গামাটির মানিকছড়ির আর্মি ক্যাম্পের পার্শ্বস্থ সড়কের ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা ও যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও সুখী নীলগঞ্জের রাঙ্গাপানি ভাবনা কেন্দ্রে আশ্রয় কেন্দ্র পরিদর্শন করেন ও ক্ষতিগ্রস্থ লোকজনেরর সঙ্গে কথা বলেন ।
জেলা প্রশাসনের কন্ট্রোল রুম থেকে প্রাপ্ত তথ্যে গত ৫ দিনে রাঙ্গামাটির পুরো জেলায় পাহাড় ধ্বসে নিহতের সংখ্যা এখনো পর্যন্ত ১১৩। জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার খন্দকার ইফতেখার উদ্দিন আরাফাত জানান, শুক্রবার রাতে জুরাছড়ি উপজেলার দূর্গম দুমদুমিয়া ইউনিয়নে দুইটি মরদেহ উদ্ধার করেছে স্থানীয়রা। তবে রাঙ্গামাটি শহরে আর কোন মরদেহ পাওয়া যায়নি।
এ নিয়ে রাঙ্গামাটি সদরে ৬৬ জন, জুরাছড়ি উপজেলায় ৬জন, বিলাইছড়ি উপজেলায় ২জন, কাপ্তাই উপজেলায় ১৮জন এবং কাউখালী উপজেলায় ২১ জন মিলে মোট ১১৩ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে শিশু-৩৩, মহিলা-৩২, পুরুষ ৪৮ জনের মরদেহ রয়েছে বলে তিনি জানান।
এদিকে, রাঙ্গামাটিতে পাহাড় ধ্বসের ঘটনায় নিহতদের উদ্ধার তৎপরতা আনুষ্ঠানিক সমাপ্ত ঘোষণা করা হলেও স্থানীয় লোকজনের দাবী মুখে শনিবার (১৭ জুন) সকাল থেকে দফায় দফায় রাঙ্গামাটি ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা শহরের ভেদভেদী মুসলিম পাড়া ও লোকনাথ মন্দির এলাকায় আরো মরদেহের সন্ধানে উদ্ধার তৎপরতা চালান।
রাঙ্গামাটি ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক গোলাম মোস্তফা জানান, স্থানীয় লোকজনের দাবী এই দুইটি এলাকায় কয়েকজন নিঁেখাজ থাকতে পারে। এ কারণে রাঙ্গামাটি ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা শহরের দুইটি এলাকায় পাহাড় ধ্বসে নিহত ও নিখোঁজ ব্যক্তিদের সন্ধানে কাজ অব্যাহত রেখেছেন।
তিনি জানান, পাহাড় ধ্বসে নিহতদের মরদেহ পানিতে ভাসছে এমন তথ্যের ভিত্তিতে তারা উদ্ধার তৎপরতায় চালিয়েও এখনো পর্যন্ত কোথাও কোন মরদেহের সন্ধান পাওয়া যায়নি। ফায়ার সার্ভিসের দুইটি দল ভেদভেদী মুসলিম পাড়া ও লোকনাথ মন্দির এলাকায় অনুসন্ধান চালিয়ে বিকাল পর্যন্ত কোন মরদেহের সন্ধান না পাওয়ায় বিকেলে উদ্ধার তৎপরতা শেষ করে।
এদিকে পাহাড়া ধ্বসের বিপর্যয়ের ঘটনায় রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম সড়ক, রাঙ্গামাটি-খাগড়াছড়ি সড়ক, রাঙ্গামাটি-বড়ইছড়ি ও রাঙ্গামাটি-কাপ্তাই সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা এখনো বিছিন্ন রয়েছে। সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোর ও সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মীরা রাস্তার যোগাযোগ পুনস্থাপনের জন্য কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
অন্যদিকে, রাঙ্গামাটির ১২টি আশ্রয় কেন্দ্রে এ পর্যন্ত ২ হাজারের বেশী মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। সেনাবাহিনী আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে পানি ও খাবার সরবরাহ করছে। শহরে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা স্বাভাবিক রয়েছে। সড়ক যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে গেলেও রাঙ্গামাটি কাপ্তাই পানি পথে সীমিত পন্য পরিবহন শুরু করা হয়েছে।
রাঙ্গামাটি শহরের অভ্যন্তরীন সড়কে পর্যটন সড়ক, আনন্দ বিহার, পুরাতন হাসপাতাল, রিজার্ভ বাজার উন্নয়ন বোর্ড, সমাজ সেবা অফিস, রাজবাড়ী শিল্পকলা একাডেমী, কল্যাণপুর, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি সাংস্কৃতিক ইনষ্টিটিউট, ভেদভেদী আনসার ক্যাম্প, বেতার কেন্দ্র, শিমুলতলী, ভেদভদী যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, মনোঘর এলাকায় সড়কের বিশাল অংশ জুড়ে রাস্তার পার ধ্বসে গিয়ে চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। কিছু কিছু অংশে রাস্তার উপর মাটি স্তুপ পড়ে থাকায় তা সরিয়ে নেয়ার কাজ চলছে। এদিকে রাঙ্গামাটি শহরের ডিসি বাংলো, পুলিশ সুপারের বাংলো, বিএফডিসি রেষ্ট হাউজ, রাঙ্গামাটি সার্কিট হাউজ, বাংলাদেশ বেতার ভবন, আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, বাংলাদেশ টেলিভিশন রাঙ্গামাটি উপকেন্দ্রের স্থাপনা সমূহের জায়গায় বিশাল অংশজুরে ব্যাপক পাহাড় ধ্বসের সৃষ্টি হয়েছে। বর্ষা মৌসুমে আরো বৃষ্টি হলে এইসব স্থাপনায় আরো পাহাড় ধ্বসের আশংকা রয়েছে। এছাড়া পাহাড়ের বেশকিছু স্থানে আরো অসংখ্য বাড়ি-ঘর ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।

Archive Calendar
Mon Tue Wed Thu Fri Sat Sun
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031