॥ নন্দন দেবনাথ ॥ পাহাড় ধ্বসের ঘটনায় পর্যটক শূণ্য হয়ে পড়েছে রাঙ্গামাটি জেলা। পাহাড় ধ্বসের ঘটনার পর থেকে রাঙ্গামাটি জেলায় কোন পর্যটক নেই। এই গত ১০ দিনে রাঙ্গামাটি জেলায় পর্যটন শিল্পে ক্ষতি হয়েছে ৫কোটি টাকারও বেশী। আগামী ঈদ মৌসুমে রাঙ্গামাটিতে যদি পর্যটক আসে তাহলে ক্ষতিটা কিছুটা পুশিয়ে নেয়া যাবে বলে ধারণা করছেন হোটেল মালিকরা। অন্যদিকে রাঙ্গামাটির পর্যটনের সাথে জড়িত বোট চালকদেরও সংসার চালাতে হিমশিক খেতে হচ্ছে। পর্যটক না থাকায় বোট গুলো নিথর বসে আছে ঘাটে।
রাঙ্গামাটি জেলা শহরে ছোট বড় মিলে মোট ৫৭ টি হোটেল রয়েছে। এই হোটেল গুলো চলতি রোজার মাসে কিছু কিছু পর্যকট পেতো কিন্তু রাঙ্গামাটিতে পাহাড়ী ধ্বসের কারণে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ থাকায় পর্যটন শিল্পে নেমে এসেছে বড়ো বিপর্যয়। রাঙ্গামাটি চট্টগ্রাম সড়কের ধ্বসে যাওয়া অংশ সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং সেনাবাহিনী হালকা যানবাহন চলাচলের জন্য চালু করলেও সরাসরি বাস রাঙ্গামাটি শহরে ঢুকতে না পারায় আরো ক্ষতির আশংকা করছেন হোটেল মালিকরা।
অপরদিকে রাঙ্গামাটি ঈদ মৌসুমে পর্যটন শিল্পের ব্যবসার জন্য তাকিয়ে আছে রাঙ্গামাটির প্রতিটি সেক্টরের মানুষ। রাঙ্গামাটির তাঁত বস্ত্র শিল্প, হোটেল মালিক, খাবার হোটেল, সিএনজি চালক সহ প্রতিটি সেক্টরের মানুষ এই মৌসুমের জন্য মুখিয়ে থাকে। তবে এই বিপর্যায়ের মাঝে কি পরিমান পর্যটক রাঙ্গামাটি আসবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রাঙ্গামাটির প্রতিটি মানুষ।
রাঙ্গামাটি হোটেল মালিক সমিতির আহবায়ক কমিটির সদস্য সচিব ইমতিয়াজ সিদ্দিক আসাদ জানান, রাঙ্গামাটির পর্যটন শহর খুবই সুন্দর একটি শহর। সাম্প্রতিক সময়ে ঘুণির্ঝড় মোরা ও শহরের পাহাড় ধ্বসের কারণে রাঙ্গামাটি শহর ৮ দিন বন্ধ ছিলো। এই বন্ধের কারণে রাঙ্গামাটির কোন হোটেলেই বর্ডার ছিলো না। এই কারণে রাঙ্গামাটি শহরে প্রায় ৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। গত ২১ জুন খুলে দেয়ার পরও রাঙ্গামাটি শহরে কোন পর্যটক নেই। তিনি জানান শহরের হোটেল গুলো আগামী ঈদ মৌসুম ধারার জন্য হোটেলে সংস্কার কাজ শেষ করেছে। আশা করছি রাঙ্গামাটি সড়ক যোগাযোগ ভালো হওয়ায় পর্যটকরা রাঙ্গামাটি আসবে।
তিনি বলেন, এবার বৃষ্টিপাত বেশী হওয়ায় প্রায় ফিরে পেয়েছে সুভলং ঝর্ণা। এতো বছর সুভলং ঝর্ণা রাঙ্গামাটির পর্যটকদের মন ভরাতে পারতো না এবার পর্যটকরা সুভলং ঝর্ণা দেশে আশাহত হবে না। ঝর্ণা পর্যটকদের আনন্দ দেবে। তিনি বলেন, এবার আমরা রাঙ্গামাটির এই মৌসুমকে নাম দিয়েছি রোমাঞ্চকর ভ্রমণ। রাঙ্গামাটি এই ভ্রমন হবে আরো মধুময় রাঙ্গামাটি কাপ্তাই হ্রদের পানি এখন ভরপুর। পর্যটকরা চাইলে কাপ্তাই থেকে নৌপথে রাঙ্গামাটি আসতে পারবে। রাঙ্গামাটির সাজেক ঘুরে বাঘাইছড়ি ও লংগদু হয়ে রাঙ্গামাটি আসতে পারবে। এছাড়া রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম সড়কতো আছেই। আমরা পর্যকটদরে আগমনের আপেক্ষোয় আছি। তিনি বলেন, আশা করছি প্রতিটি হোটেলে অনেক বুকিং আছে। পর্যটকরা যদি আসে তাহলে রাঙ্গামাটির পর্যটন শিল্প প্রাণ ফিরে পাবে।
হোটেল প্রিন্স এর স্বত্বাধিকারী নেছার আহাম্মদ জানান, গত ১০ দিন আমাদের ব্যবসা নেই বললেই চলে। ঈদের মৌসুমে আমরা যেই ব্যবসা করতাম তা অনেকটা কমে গেছে। তিনি বলেন, ঈদের জন্য আমাদের হোটেলে শতভাগ বুকিং ছিলো। কিন্তু কিছু কিছু বুকিং এখনো বাতিল করে নি তারা আসতেও পারে না আসতেও পারে। আশা করছি ঈদের মৌসুমের রাঙ্গামাটি জেলায় অনেক পর্যটক আসবে।
এদিকে রাঙ্গামাটি পর্যটন কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপক আলোকময় চাকমা জানান, সম্প্রতি অতি বৃষ্টি ও পাহাড় ধ্বসে রাঙ্গামাটি পর্যটনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পর্যটনের বিভিন্ন এলাকায় পাহাড় ধ্বস হয়েছে। তিনি বলেন, রাঙ্গামাটি পর্যটনের ৮৬ টি রুম আছে পাহাড় ধ্বসের কারণে ৮ দিন সড়ক যোগাযোগ বন্ধ থাকায় কোন রুমে বর্ডার ছিলো না। গতকাল মাত্র ২টি রুম ভাড়া হয়েছে। আমাদের প্রতিদিন স্টাফ বেত সহ বিভিন্ন আনুসাঙ্গিক খরচ হয়েছে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকার মতো।