শাহজালাল বিমানবন্দরের মূল ভবনে আগুন নিয়ন্ত্রণে

বিমানবন্দরের মূল ভবনে আগুন লাগার পর ফায়ার সার্ভিসের দশটি ইউনিট দেড় ঘণ্টার চেষ্টায় তা নিয়ন্ত্রণে এনেছে

তবে ওই দেড় ঘণ্টা সময়ে প্রধান বিদ্যুৎ লাইনের সরবরাহ এবং বহির্গমন কার্যক্রম বন্ধ থাকায় আন্তর্জাতিক রুটের অন্তত ছয়টি ফ্লাইট বিলম্বিত হয়েছে।

ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জানান, শুক্রবার জুমার নামাজের পরপর বেলা দেড়টার দিকে বিমানবন্দরের মূল ভবনের তৃতীয় তলায় এয়ার ইন্ডিয়ার অফিস কক্ষে আগুনের সূত্রপাত হয়।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পুরো বিমানবন্দরের বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। ধোঁয়ায় চারদিক আচ্ছন্ন হয়ে যাওয়ায় বিভিন্ন ফ্লোরের অধিকাংশ কর্মী বাইরে বেরিয়ে আসেন এবং বহির্গমনের কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয় বলে বিমানবন্দরের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা রাশেদা সুলতানা জানান।

কুর্মিটোলা ফায়ার স্টেশনের সিনিয়র অফিসার আব্দুল মান্নান জানান, ফায়ার সার্ভিসের দশটি ইউনিট বেলা ৩টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে আগুন লাগার কারণ বা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তিনি জানাতে পারেননি।

বিমানবন্দরের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা রাশেদা বলেন, “আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর বিদ্যুৎ সরবরাহ আবার চালু করে দেওয়া হয়েছে। আমাদের অ্যারাইভাল খোলাই ছিল। ডিপারচারও এখন খুলে দেওয়া হয়েছে।”

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের জনসংযোগ কর্মকর্তা রেজাউল করিম ফ্লাইট অপারেশনের বিঘ্ন নিয়ে স্পষ্ট কিছু না বললেও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দেশের প্রধান এই বিমানবন্দরের কার্যক্রম কার্যত থমকে যায়।

বিমানবন্দরের ওয়েবসাইটে দেখা যায়, বেলা ১টা ২৫ মিনিটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট জেদ্দার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। এরপর বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত থাই এয়ার, চায়না ইস্টার্ন, হংকং এয়ারলাইন্স, মালডিভিয়ান এয়ারলাইন্স ও টার্কিশ এয়ারলাইন্সের আরও পাঁচটি আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের ঢাকা ত্যাগ করার কথা ছিল। কিন্তু বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত কোনোটিই যায়নি।

চায়না ইস্টার্নের স্টেশন সুপারভাইজার আবু হানিফ বলেন, “বেলা ২টা ৩৫ এ আমাদের একটি ফ্লাইটের কুনমিং যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিদ্যুৎ বন্ধ থাকায় সেটা বিলম্বিত হয়েছে। সব এয়ারলাইন্সেরই এক অবস্থা।  আশা করছি সন্ধ্যার মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।”

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে জানানো হয়, বেলা ১টা ২৫ মিনিটে তাদের জেদ্দাগামী বিজি ৭০৫৭ ফ্লাইটটি বাতিল হয়েছে। অগ্নিকাণ্ডের কারণে অন্য কোনো ফ্লাইট বাতিল না হলেও অভ্যন্তরীণ রুটের কয়েকটি ফ্লাইট বিলম্বিত হয়েছে।

সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলতে বিমানবন্দরের পরিচালক কাজী ইকবাল করিমের সঙ্গে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। এসএমএসেরও জবাব দেননি।

বিমানবন্দরে দায়িত্বরত এপিবিএন এর একজন সদস্য জানান, মূল ভবনের তৃতীয় তলায় যেখানে আগুন লেগেছে, সেখানে এয়ার ইন্ডিয়া ও সৌদিয়াসহ কয়েকটি বিমান পরিবহন সংস্থার কার্যালয় রয়েছে।

ওই ফ্লোরের একটি বিমান পরিবহন সংস্থার বিপণন কর্মকর্তা জানান, বেলা দেড়টার দিকে ফায়ার অ্যালার্ম শুনে বেরিয়ে এসে তিনি দেখতে পান, তৃতীয় তলা ধোঁয়ায় ছেয়ে গেছে। বিমানবন্দরের অটো ফায়ার ডিটেকটরের ডিসপ্লেতে তখন লেখা দেখাচ্ছিল- ‘ফায়ার অন এয়ার ইন্ডিয়া ফ্লোর’।

বিমানবন্দরের ভেতরের একটি দোকানের এক কর্মচারী জানান, চারদিকে ধোঁয়ায় ছেয়ে গেলে যাত্রী আর কর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়। পরে নিরাপত্তা কর্মীরা সবাইকে বেরিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন।

বাইরে অপেক্ষায় থাকা বেশ কয়েকজন যাত্রী জানান, অগ্নিকাণ্ডের কারণে তাদের ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।

আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর এয়ার ইন্ডিয়ার কাস্টমার সার্ভিসের কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম বলেন, “আমাদের পুরো অফিস পুড়ে গেছে। লকার, কাগজপত্র ও টাকাপয়সা যা ছিল, সব পুড়ে গেছে। আমাদের পাশে কাতার এয়ারের একটি কক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।”

তবে কীভাবে আগুনের সূত্রপাত হয়েছিল, সে বিষয়ে কোনো ধারণা দিতে পারেননি এয়ার ইন্ডিয়ার এই কর্মকর্তা।

উত্তরা ফায়ার ব্রিগেডের স্টেশন অফিসার শফিকুর ইসলাম জানান, এ ঘটনায় কেউ হতাহত হননি। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করতে আরও সময় লাগবে।

Archive Calendar
MonTueWedThuFriSatSun
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930