রাঙ্গামাটি রাজবন বিহারে বাংলায় সমগ্র ত্রিপিটক গ্রন্থের মোড়ক উম্মোচন

॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বৌদ্ধদের ধর্মীয় গ্রন্থ ত্রিপিটকের এই প্রথম বাংলায় অনুবাদ করে সমগ্র ত্রিপিটক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। ত্রিপিটকের ৫৯টি খন্ডকে বাংলা অনুবাদ করে ২৫ খন্ডে পবিত্র ত্রিপিটক নামে বাংলায় এই বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ত্রিপিটক পাবলিশিং সোসাইটি।
শুক্রবার (২৫ আগষ্ট) দুপুরে রাঙ্গামাটি রাজবন বিহারে ধর্মীয় অনুষ্ঠানে মাধ্যমে বাংলায় সমগ্র ত্রিপিটক প্রকাশনার মোড়ক উম্মোচন করা হয়। প্রয়াত বনভান্তের শিষ্য প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবির ও চাকমা রানি ইয়ান ইয়ান বাংলা ত্রিপিটকের মোড়ক উম্মোচন করেন।
অনুষ্ঠানে বিধুর মহাস্থবির, করুনাবংশ স্থবির, ভিক্ষু সংঘ, রাজবন বিহারের সভাপতি গৌতম দেওয়ান, সাবেক পার্বত্য উপমন্ত্রী মনি স্বপন দেওয়ান, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য নিরুপা দেওয়ানসহ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী নারী পুরুষ যোগ দেন।
বাংলায় সমগ্র ত্রিপিটক প্রকাশনা কমিটির আহবায়ক শ্রীমৎ ইন্দ্রগুপ্ত মহাস্থবির বলেন, পবিত্র ত্রিপিটকের ৫৯টি খন্ডের মধ্যে এতদিন মাত্র ৬টি খন্ড বাংলায় অনুবাদিত ছিল। অন্যান্য খন্ডগুলো বাংলায় অনুবাদ ছিল না।
তিনি বলেন, বৌদ্ধদের পবিত্র ধর্মীয় গ্রন্থের নাম হলো ত্রিপিটক। এটি তিনটি ত্রিপিটকের সমন্বয়ে রচিত। এখানে রয়েছে মোট ৫৯টি গ্রন্থ। ত্রিপিটক কেবল বৌদ্ধদের কাছে ধর্মীয় গ্রন্থ নয়, এটি জ্ঞানগর্ভ ও সর্বজনীণ বিষয়বস্তু। ত্রিপিটক সর্বদেশে ও সর্বজনের অনুসন্ধিৎসু মনকে আলোকিত করে, আর্কষণ করে, পুলকিত করে এবং বিমুগ্ধ করে। তাই ত্রিপিটক বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় অনুদিত হয়েছে। এটি ১৮শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে অক্সফোর্ড ভিত্তিক সংস্থা লন্ডন পালি টেক্স সোসাইটি কর্তৃক ইংরেজী অনুবাদ ও পালি সংরক্ষণ প্রকাশিত হতে থাকে যা এখনও অব্যহত রয়েছে।
বৌদ্ধ ভিক্ষু শ্রীমৎ ইন্দ্রগুপ্ত আরো বলেন, বাংলায় ত্রিপিটক অনুবাদের ইতিহাসে প্রায় দেড়শত বছরের। ১৯৮৭ সালে ১ম পালি থেকে বাংলায় অনূদিত হয়। এটি অনুবাদ করেন ধর্মরাজ বড়–য়া। এর পর ১৯১৬ সালে ঈশান চন্দ্রঘোষ জাতক ৬ খন্ড বাংলায় অনুবাদ করেন। তবে ১৯২৮ সালে অগ্রমহাপন্ডিত প্রজ্ঞালোক মহাস্থবির সমগ্র ত্রিপিটক বাংলায় অনুবাদ করার এক মহা উদ্যোগ গ্রহণ করে মায়ানমারে রেঙ্গনে বৌদ্ধ প্রেস মিশন প্রতিষ্ঠা করেন। সাথে সাথে সমগ্র ত্রিপিটক বাংলায় অনুবাদ ও প্রকাশের জন্য একদল অভিজ্ঞ অনুবাধক গোষ্ঠি গড়ে তোলেন। তারই উদ্যোগে সেখান থেকে কিছু কিছু ত্রিপিটক গ্রন্থ বাংলায় অনুবাদ ও প্রকাশ করা হয়। আর অগ্রমহাপন্ডিত প্রজ্ঞালোক মহাস্থবিরের সেই উদ্যোগ সেখানেই সমাপ্তি ঘটে। পরে আর কোন ত্রিপিটকের গ্রন্থ বাংলায় অনুবাদ হয়নি। রাজবন বিহারের প্রয়াত ধর্মীয়গুরু বনভন্তের ইচ্ছাতেই পুনরায় ত্রিপিটকের পুরো খন্ডকে বাংলায় অনুবাদ করার প্রচেষ্টা নেয়া হয়। রাঙ্গামাটি রাজবন বিহারের ত্রিপিটক পাবলিশিং সোসাইটির ২৩জন অনুবাদক দীর্ঘ আড়াই বছর চেষ্টা চালিয়ে ত্রিপিটকের ৫৯ খন্ডকে ২৫ খন্ডে বিভাজিত করে সম্পূর্ণ বাংলায় পবিত্র ত্রিপিটক প্রকাশ করে। যা শুক্রবার ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতায় প্রকাশনার মোড়ক উম্মোচন করা হলো।

Archive Calendar
Mon Tue Wed Thu Fri Sat Sun
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031