মুসার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

বিতর্কিত ব্যবসায়ী মুসা বিন শমসের যেন দেশত্যাগ করতে না পারেন সেজন্য পুলিশ প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছে শুল্ক গোয়েন্দা তদন্ত অধিদপ্তর

এ বিষয়ে অধিদপ্তর থেকে মঙ্গলবার পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) প্রধানকে চিঠি পাঠানো হয়েছে, যাতে ইমিগ্রেশন পুলিশের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।

গুলশান থানার মুদ্রাপাচার প্রতিরোধ আইনের একটি মামলায় তদন্তের স্বার্থে মুসা বিন শমসেরের দেশত্যাগের কথা বলা হয়েছে চিঠিতে।

“আপনার সদয় অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, শুল্ক ও তদন্ত অধিদপ্তর কর্তৃক গুলশান থানায় দায়ের করা মামলার (মামলা নং-২৮, তারিখ-৩১ জুলাই ২০১৭) তদন্তকারী কর্মকর্তা শাহরিয়ার মাহমুদ তদন্তের স্বার্থে মামলার আসামি মুসা বিন শমসেরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা অপরিহার্য।

“এমতাবস্থায় উল্লিখিত মামলার তদন্ত কার্যক্রম চলমান থাকাকালে মামলার আসামি যেন দেশত্যাগ করতে না পারে সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সবিনয় অনুরোধ করা হল।”

শুল্ক ফাঁকি দিয়ে একটি গাড়ি ব্যবহারের ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের দুই মাস পর মুসা বিন শমসেরের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় মুদ্রাপাচার প্রতিরোধ আইনে ওই মামলা দায়ের করে শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা (এআরও) জাকির হোসেন।

‘কারনেট ডি প্যাসেজ’ সুবিধায় জনৈক ফারুক উজ-জামান চৌধুরীর নামে নিবন্ধিত ওই রেঞ্জ রোভার গাড়ি গত ২১ মার্চ মুসার ছেলের শ্বশুর বাড়ি থেকে উদ্ধার করে শুল্ক গোয়েন্দারা। তারপর মুসাকে কাকরাইলে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের কার্যালয়ে তলব করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

ভোলা বিআরটিএ’র কয়েকজন কর্মকর্তার যোগসাজশে ভুয়া কাগজ দিয়ে ওই গাড়ি রেজিস্ট্রেশন এবং বেনামে অবৈধ আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ার কথা ওই সময়ই জানিয়েছিল শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তর।

মুসা বিন শমসের ১৭ লাখ টাকা শুল্ক পরিশোধ দেখিয়ে ভুয়া বিল অব এন্ট্রি প্রদর্শন করে গাড়িটি বেনামে রেজিস্ট্রেশন করেন। কিন্ত শুল্ক গোয়েন্দাদের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ওই গাড়িতে ২ কোটি ১৭ লাখ টাকার শুল্ক প্রযোজ্য।

শুল্ক গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদে মুসা লিখিতভাবে জানান, সুইস ব্যাংকে তার ৯৬ হাজার কোটি টাকা গচ্ছিত আছে।

কিন্তু তিনি এই টাকার কোনো ব্যাংক হিসাব বা বৈধ উৎস দেখাননি। কয়েকবার নোটিশ দিলেও তিনি তা জমা দেননি।

ওই তদন্ত ও জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে মুসার বিরুদ্ধে মামলা করতে দুর্নীতি দমন কমিশনকে সুপারিশও করে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের বেয়াই মুসা বিন শমসেরের সম্পদ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা রয়েছে।

জনশক্তি রপ্তানি দিয়ে মুসার ব্যবসার শুরু হলেও তার পরিচয় দিতে গিয়ে অস্ত্র ব্যবসার কথাই বেশি আসে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে। বিলাসী জীবন-যাপনের কারণে বিদেশি গণমাধ্যমে অনেক সময় তাকে বলা হয় ‘প্রিন্স অব বাংলাদেশ’।

১৯৯৭ সালে যুক্তরাজ্যে নির্বাচনে লেবার পার্টির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী টনি ব্লেয়ারের নির্বাচনী প্রচারের জন্য ৫ মিলিয়ন ডলার অনুদান দেওয়ার প্রস্তাব দিয়ে আলোচনায় আসেন বাংলাদেশের এই ব্যবসায়ী।একটি দৈনিকে সুইস ব্যাংকে মুসা বিন শমসেরের ৫১ হাজার কোটি টাকা থাকার খবর ছাপা হয়েছিল। তবে দুদকে জিজ্ঞাসাবাদের পর গত বছর মুসা সাংবাদিকদের বলেছিলেন, বাংলাদেশে বসে কেউ এত অর্থ উপার্জন করতে পারবে না।

মুসার বিরুদ্ধে একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনীকে সহায়তা করার অভিযোগও রয়েছে, যার অনুসন্ধান করছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।

সম্প্রতি তার ‘যুদ্ধাপরাধের তথ্য’ সম্বলিত নথি তদন্ত সংস্থার কাছে হস্তান্তর করেছেন সাংবাদিক সাগর লোহানী ও প্রবীর সিকদার।

তবে মুসার দাবি, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে বন্দি ছিলেন তিনি।

Archive Calendar
MonTueWedThuFriSatSun
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930