তিনি শনিবার এক আলোচনা অনুষ্ঠানে বলেছেন, “যদি এদেশে বিএনপির নিবন্ধন বাতিল হয়, সে দেশে আমার মনে হয়, কোনো দলের নিবন্ধন সেদিন থাকবে না,” বলেছেন তিনি।
দশম সংসদ নির্বাচন বর্জনকারী বিএনপি রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন টিকিয়ে রাখতে একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে বলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় একথা বলেন বিএনপি নেতা।
রাজনৈতিক দলগুলোকে নিবন্ধন দেওয়া ও বাতিলের এখতিয়ার সাংবিধানিক সংস্থা নির্বাচন কমিশনের। নিবন্ধন না থাকলে রাজনৈতিক দল হিসেবে সক্রিয় থাকা গেলেও ভোটে অংশ নেওয়া যায় না।
আ্ইন অনুযায়ী, পরপর দুটি নির্বাচন বর্জন করলে তার নিবন্ধন বাতিল হবে।
নির্দলীয় সরকারের অধীনে না হওয়ায় দশম সংসদ নির্বাচন বর্জনের পর এখন নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের দাবি তুলেছে বিএনপি। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা এখনও তাদের রয়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মোশাররফ আওয়ামী লীগ নেতাদের উদ্দেশে বলেন, “নির্বাচনকালীন সময়ে নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা করেই আমরা ইনশাল্লাহ নির্বাচন করব, সেখানে নিবন্ধন বাতিলের প্রশ্ন উঠবে না।
“সেই পরিস্থিতিতে দিকে যদি সরকার এদেশকে ঠেলে দেন, তা হলে তার জন্য এই সরকারকেই দায়ী থাকতে হবে, শেখ হাসিনা দায়ী থাকবেন। আপনি ব্যক্তি স্বার্থে, ব্যক্তি লোভে দেশকে নৈরাজ্যের দিকে ঠেলে দেন, তার জন্য আপনাকে দায়ী থাকতে হবে।”
একাদশ সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে তিনি বলেন, “বিএনপি সবসময় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত দল। যদি অংশগ্রহণমূলক, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু নির্বাচন হয়, যে কোনো সময়ে নির্বাচনে যাওয়ার জন্য আমরা প্রস্তুত।”
জাতীয় প্রেস ক্লাবে জাতীয়তাবাদী নাগরিক দলের উদ্যোগে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন মোশাররফ।
তিনি বলেন, “খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলাগুলোর তথ্য-উপাত্ত-যুক্তি নেই। ওই সব মামলার সবটাই বানোয়াট ও মিথ্যা, কোনোটাই প্রমাণ করতে পারবে না সরকার। তারা এই মামলা দিয়ে দেশনেত্রী উপর মানসিকভাবে চাপ সৃষ্টি করে আমাদেরকে দুর্বল করতে চায়।”
মামলায় শাস্তি দিয়ে সরকার খালেদা জিয়াকে নির্বাচনের বাইরে রাখতে চাইছে দাবি করে মোশাররফ বলেন, “আপনারা এই চেষ্টা থেকে বিরত থাকুন। সহজ পথে আসুন, গণতন্ত্রের পথে আসুন।
“অন্যথায় জনগণের যে রোষ ও জনগণের যে ক্ষোভ, তা বেশিদিন ঘরের ভেতরে অবস্থান করবে না। অতি শিগগিরই গণঅভ্যুথানের মাধ্যমে বিস্ফোরণ ঘটবে।”
যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার প্রতিবেদনে বাংলাদেশে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও বিচার বিভাগের দুর্বলতা নিয়ে সমালোচনার প্রসঙ্গটিও আনেন সাবেক মন্ত্রী মোশাররফ।
“দুর্বল বিচার বিভাগকে আজকে এই সরকার জুজুর ভয় হিসেবে জনগণের সামনে দাঁড় করিয়েছে। বিচারালয়ে নাটক হচ্ছে। দেশনেত্রীকে বিশেষ আদালতে নিয়ে সারাদিন বসিয়ে রাখা হচ্ছে, মানসিকভাবে তার উপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে।”
জাতীয়তাবাদী নাগরিক দলের সভাপতি সৈয়দ মো. ওমর ফারুকের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, বিএনপি ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান, নির্বাহী কমিটির সদস্য খালেদা ইয়াসমীন, আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, নিপুর রায় চৌধুরী বক্তব্য রাখেন।
‘নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে বিএনপি’
জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের এক অনুষ্ঠানে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, নির্বাচনকালীন সরকার নিরপেক্ষ হলে তার দলও তাতে অংশ নেবে।
“নিরপেক্ষ সরকার হতে হবে, সেই রকম নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নিশ্চয়ই বিএনপি নির্বাচনে যাবে।”
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের জবাবে রিজভী বলেন, “আপনি বলেছেন, বিএনপি যদি না আসে রেজিস্ট্রেশন বাতিল হয়ে যাবে। আরে রেজিষ্ট্রেশন কী? আপনারা যখন ’৭৯ সালে, ’৮৬ সালে নির্বাচনে গিয়েছিলেন, কোন রেজিস্ট্রেশনের উপরে নির্বাচনে গিয়েছিলেন? একটি রাজনৈতিক প্রতি জনগণের ইচ্ছা-অনিইচ্ছাটাই বড় রেজিস্ট্রেশন।
“মইনুদ্দিন-ফখরুদ্দিনরা একটা বৃহৎ ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে এই রেজিস্ট্রেশন প্রথা চালু করেছিল। কারণ তাদের কাছে তাদের প্রভুরা যেভাবে বলেছেন, বিএনপিকে এমনভাবে বাঁধ তারা যাতে তাদের পাতানো নির্বাচনে, প্রহসনের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে থাকে। আর আজীবন ক্ষমতার রাজ সিংহাসনে শেখ হাসিনা রাজত্ব করবে।”
“এই দেশটি ছোট হলেও সাড়ে ১৬ কোটি মানুষকে আপনি রেজিস্ট্রেশনের ফিতায় বাঁধবেন- সেই সুখ স্বপ্ন কোনোদিন আপনাদের পূরণ হবে না,” কাদেরের উদ্দেশে বলেন রিজভী।
মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাতের সভাপতিত্বে ‘লিডারশিপ ওয়ার্কশপ’ এই অনুষ্ঠানে বিএনপির আবদুস সালাম আজাদ, যুবদলের নুরুল ইসলাম নয়ন, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ খান বক্তব্য রাখেন।