ছাত্র রাজনীতির প্রতি আস্থাহীনতা শুভ নয়: রাষ্ট্রপতি

ছাত্র রাজনীতির প্রতি আস্থাহীনতা শুভ নয়: রাষ্ট্রপতি

বাংলাদেশের উচ্চ শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তনে তিনি বলেছেন, “ডাকসু ইলেকশন ইজ মাস্ট, তা না হলে ভবিষ‌্যৎ নেতৃত্ব শূন্য হয়ে যাবে।”

শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্রের খেলার মাঠে ৫০তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে একথা বলেন বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আচার্য আবদুল হামিদ।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অনেক বাঁক বদলের সাক্ষী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই যুগের বেশি সময় ধরে ছাত্র সংসদ নির্বাচন না হওয়ায় রাজনীতিকদের মধ্যে খেদ রয়েছে।

ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে নাম লেখানো আবদুল হামিদ তার সময়কার এবং বর্তমানের তুলনা করে হতাশা প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, “আমাদের সময়ের রাজনীতি আর আজকের ছাত্র রাজনীতির মধ্যে তফাৎ অনেক বেশি। ষাটের দশকে আমরা যারা ছাত্র রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলাম তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল দেশ-জাতির কল্যাণ। দেশের মানুষকে পরাধীনতার নাগপাশ থেকে মুক্ত করে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। এক্ষেত্রে ব্যক্তি বা গোষ্ঠী স্বার্থের কোনো স্থান ছিল না।

“ছাত্ররাই ছাত্র রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করত, নেতৃত্ব দিত। লেজুড়বৃত্তি বা পরনির্ভরতার কোনো জায়গা ছিল না। সাধারণ মানুষ ছাত্রদের সম্মানের চোখে দেখত।”

এখনকার অবস্থা তুলে ধরে করে আবদুল হামিদ বলেন, “ছাত্র রাজনীতির বর্তমান হালচাল দেখে মনে হয় এখানে আদর্শের চেয়ে ব্যক্তি বা গোষ্ঠী স্বার্থের প্রাধান্য বেশি। কিছু ক্ষেত্রে অছাত্ররাই ছাত্র রাজনীতির নেতৃত্ব দেয়, নিয়ন্ত্রণ করে। “ফলে ছাত্র রাজনীতির প্রতি সাধারণ মানুষের, এমনকি সাধারণ শিক্ষার্থীদের আস্থা, সমর্থন ও সম্মান হ্রাস পাচ্ছে।”

“এটি একটি দেশ ও জাতির জন্য শুভ নয়। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে ছাত্র রাজনীতিকে সঠিকপথে পরিচালিত করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে,” বলেন রাষ্ট্রপতি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে রাজনীতির সূতিকাগার অভিহিত করে তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অনেক বরেণ্য রাজনীতিবিদের জন্ম দিয়েছে। তারা মহান মুক্তিযুদ্ধসহ বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও জাতীয় উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। এখনও পথ প্রদর্শক হিসেবে দেশ ও জাতিকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।

ছাত্র রাজনীতির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে তিনি বলেন, “দেশ ও জাতির উন্নয়নে রাজনৈতিক নেতৃত্বের বিকল্প নেই। গণতন্ত্র ও উন্নয়ন একে অপরের পরিপূরক। একটি ছাড়া অপরটি অচল। তাই গণতন্ত্রের ভিতকে মজবুত করতে হলে দেশে সৎ ও যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে তুলতে হবে। আর সেই নেতৃত্ব তৈরি হবে ছাত্র রাজনীতির মাধ্যমেই। আদর্শভিত্তিক ও কল্যাণমুখী ছাত্র রাজনীতির নিরবচ্ছিন্ন চলার পথ নিশ্চিত করতে হবে। ছাত্রসমাজকেই এ ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।”

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদানের কথা তুলে ধরে আব্দুল হামিদ বলেন, “যে কোনো অন্যায়, অবিচার ও অপশাসনের প্রতিবাদে এবং আমাদের মুক্তিসংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি যে কোনো হুমকি মোকাবিলায় এ দেশের ছাত্রসমাজ বারবার এগিয়ে এসেছে। এজন্য অনেক নিপীড়ন-নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। জেল-জুলুম ভোগ করতে হয়েছে। কিন্তু তারুণ্যের জোয়ার কখনো থেমে থাকেনি এবং ভবিষ্যতেও থেমে থাকবে না।” সন্ত্রাসবাদ ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, “মুক্তিযুদ্ধে আমরা বিজয়ী হলেও পঁচাত্তরের হত্যাযজ্ঞের ফলে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ও বিপক্ষের শক্তির লড়াই, প্রগতি ও প্রতিক্রিয়া, শুভ ও অশুভ এবং ধর্মপরায়ণতা ও ধর্মান্ধতার লড়াই আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে শেষ হয়ে যায়নি। আজকের লড়াইয়ে শুভশক্তি জয়ী না হলে রাষ্ট্র হিসেবে, জাতি হিসেবে আমরা আবার পিছিয়ে যাব। মুখ থুবড়ে পড়বে আমাদের অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অগ্রগতির চাকা।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন বিভাগ, ইনস্টিটিউট ও গবেষণাকেন্দ্র খোলার প্রশংসা করেন রাষ্ট্রপতি।

এবারের সমাবর্তনে মোট ১৭ হাজার ৮৭৫ জন স্নাতক অংশ নিচ্ছেন। এরমধ‌্যে ৮০ জন কৃতি শিক্ষার্থীকে ৯৪টি স্বর্ণপদক এবং ৬১ জনকে পিএইচডি ও ৪৩ জনকে এমফিল সনদ দেওয়া হয়।

অনুষ্ঠানে সমাবর্তন বক্তা হিসেবে বক্তব‌্য দেন কানাডার ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টার্ন অন্টারিওর প্রেসিডেন্ট ও উপাচার্য অধ্যাপক অমিত চাকমা। তাকে দেওয়া হয় সম্মানসূচক ডক্টর অব সায়েন্স ডিগ্রি।

অনুষ্ঠানে অন‌্যদের মধ‌্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আআমস আরেফিন সিদ্দিক ও  উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) নাসরীন আহমাদ বক্তব্য দেন।

Archive Calendar
MonTueWedThuFriSatSun
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30