রাঙ্গামাটি সরকারী কলেজের অগ্রযাত্রায় অধ্যক্ষ প্রফেসর জাফর আহম্মদ

॥ সুলতান মাহামুদ বাপ্পা, রাঙ্গামাটি ॥ পাহাড় হ্রদ ঘেরা অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের লীলভুমি রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা। অর্থনৈতিক ও শিক্ষার দিক থেকে পিছিয়ে থাকা পার্বত্য চট্টগ্রামবাসীর প্রাণের দাবী হিসেবে ১৯৬৫ সালে রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৯৭০ সালে জাতীয়করনের ফলে এটি সরকারি কলেজ হিসেবে আতœপ্রকাশ করে। প্রতিষ্ঠার পর এর অগ্রযাত্রা কখনো থেমে থাকেনি। কালের প্রবাহে এলাকবাসীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এ কলেজটি আজ দেশের ৭০ টি ¯œাতকোত্তর কলেজের একটির স্বীকৃতি পেয়েছে।
কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ প্রফেসর জাফর আহম্মদ এই কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান থাকাকালীন ২০০৫ সালে তার বন্ধু ও ব্যাচ ম্যাট মাধ্যমিক উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের বর্তমান পরিচালক (প্রশাসন) এ প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় হিসাব বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে অর্নাস খোলার মাধ্যমে অর্নাস কলেজ হিসেবে এ কলেজের যাত্র শুরু হয়। সে চলার পথ থেমে থাকেনি শুধু সামনে এগিয়ে চলার গৌরবময় ইতিহাস।
বর্তমান অধ্যক্ষ প্রফেসর জাফর আহম্মদ ২০১৬ সালের ২ মার্চ এই কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন। চাকুরী জীবনের একটি সুর্দীঘ সময় রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজে অতিবাহিত করার সুবাধে এবং পাশ্ববর্তী চট্টগ্রাম জেলার অধিবাসী হিসেবে এই কলেজের প্রতি তাঁর অভিজ্ঞতা, দায়িত্ববোধ ও মমতাবোধ তাকেঁ কলেজের উন্নয়নের সাথে একাত্ব হতে অনুপ্রানিত করেছে। স্বল্প সময়ে তিনি স্থানীয় সংসদ সদস্য ফিরোজা বেগম চিনুর সহযোগিতায় এবং এক সময় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (অর্থ) হিসেবে কাজ করার সুবাধে প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট সকলকে কাজে লাগিয়ে কলেজে বহুমাত্রিক উন্নয়নমূলক সারা দেশের সরকারি কলেজসমূহ যখন শিক্ষক সংকটে দিশেহারা সেখানে পার্বত্য জেলার একটি কলেজ হওয়া সত্ত্বেও এখানে বর্তমানে কর্মরত শিক্ষকের সংখ্যা ৫২ জন মোট অনুমোদিত পদ-৬২)। শুধু বর্তমান অধ্যক্ষের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় কলেজ বিভিন্ন বিষয়ে ১৪ জন শিক্ষক ও সার্বক্ষনিক খেলাধুলার জন্য ১জন ক্রীড়া শিক্ষক যোগদান করেছেন।
পাবর্ত্য জেলায় ছাত্র-ছাত্রীদের অনেকেই আর্থিক কারণে বাইরে গিয়ে লেখাপড়া করতে পারেনা। আবার অনেকে পরিবেশগত কারণে বাইরে গিয়ে লেখাপড়া করতে চায় না। ফলে অনেকের উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ন অপূর্ন থেকে যায়। তাই পার্বত্য রাঙ্গামটিবাসীর সন্তানদের উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ন বিষয়ে অনার্স খোলেন এবং কলেজে চলমান অর্নাস বিষয়গুলোর আসন সংখ্যা বৃদ্ধি করেন ৮০০। ফলে অনার্স পর্যায়ে আরো ১০০০ এর মতো ছাত্র-ছাত্রী লেখাপড়ার সুযোগ পায়।
আর্থিক পরিবেশগত কারণে বাইরে গিয়ে ¯œাতকোত্তর পর্যায়ে অধ্যায়নের সুযোগ পায়না বলে এখানকার অনেক ছাত্র-ছাত্রীর ¯œাতক ডিগ্রী অর্জনের পর লেখা-পড়া বন্ধ হয়ে যায়। তাদের কথা মাথায় রেখে কলেজ হিসাব বিজ্ঞান, ব্যবস্থাপনা ও ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে প্রিলিমিনারি এবং অর্থনীতি ইংরেজি, উদ্ভিদ বিজ্ঞান ও ইতিহাস বিভাগে মার্স্টাস খোলা প্রায় সমাপ্তির পথে।
৭ বিষয়ে প্রিলি ও মার্ষ্টাস খোলার ব্যাপার অধ্যক্ষ বলেন, এ বিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য ফিরোজা বেগম চিনু প্রাক্তন প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার মহোদয়ের দারুন সহযোগিতা দিল। এ ছাড়া কলেজের উপাধ্যক্ষ প্রফেসর বিধান চন্দ্র বড়–য়া সকল শিক্ষক ও কর্মচারী এবং ছাত্র সংগঠনের নেতৃবন্দ এ ব্যাপারে আন্তরিক সহযোগিতা করেছে। সকলের সহযোগিতা আমাকে একসাথে এই বিশাল কাজ করার শক্তি যোগিয়েছে।
তিনি আরো বলেন এই কলেজ অচিরেই ১২টি বিষয়ে অর্নাস, ৭টি বিষয়ে মাস্টার্স ও ৩টি বিষয়ে প্রিলি নিয়ে একটি বড় ম্যাপের উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্টানের রূপ পরিগ্রহ করবে এবং এটি এই অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার চাহিদা পূরণ করবে।
কলেজের অবকাঠামো উন্নয়নের ক্ষেত্রে বর্তমানে যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণকরা হয়েছে। বর্তমান অধ্যক্ষের কার্যকালীন সময়ে অনেক কাজ হয়েছে এবং হচ্ছে। এ সকল কাজের পরিমান এতবেশী যে যা রেকর্ড হয়ে থাকবে। যেমন- ৫তলা বিশিষ্ট প্রশাসনিক ভবন কাম কম্পিউটার ন্যায় অন্যতম। এ ছাড়া পুরাতন দুটি ভবনের মেরামত দুটি ভবনের বৈদুতিক সিস্টেমের আধুনিকায়ন ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার্থে ২নং ভবনের সিড়ি প্রসস্তকরন ও ব্যবহার উপযোগী করন ইত্যাদি। আবার ৫ম তলা বিশিষ্ট ছাত্রী হোস্টেল এবং কলেজের সুপ্রসস্ত দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্য্যের কাজ শীঘ্রই শুরু হবে যা মন্ত্রনালয় কর্তৃক অনুমোদিত হয়েছে।
জানা যায়, বর্তমান অধ্যক্ষের কর্মকালীন সময়ে অধিকাংশ শ্রেনিকক্ষে মাল্টিমিডিয়া ক্লাশের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ৪০ টি আধুনিক কম্পিউটার দ্বারা কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। যেখানে শিক্ষার্থীদেরকে মন্ত্রনালয় ও কলেজের শিক্ষকদের দ্বারা পাঠদান করা হচ্ছে।
জেলার প্রধান কলেজ হওয়ায় এসএসসি পাশের পর সকলের ঐকান্তিক ইচ্ছা থাকে এ কলেজে একাদশ শ্রেনিতে ভতি হওয়ার সকলের আঙ্কাক্ষার কথা মাথায় রেখে বর্তমানে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের আসন সংখ্যা ৯০০ থেকে বাড়িয়ে ১০৫০ এ উন্নীত করা হয়।
একটি শিক্ষা প্রতিষ্টানের জন্য লাইব্রেরি খুবই গুরুত্বপূর্ন সম্পদ কলেজের অন্যান্য দিকের উন্নয়ন ও সম্প্রসারনের পাশাপাশি লাইব্রেরিতে র উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। এ বিষয়ে অধ্যক্ষ জানান কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি ও সেমিনার লাইব্রেরিতে প্রায় ৫ (পাঁচ) লক্ষ টাকার বই ক্রয় করা হয়েছে এবং আসবাবপত্র দ্বারা লাইব্রেরিকে সমৃদ্ধ করা হয়েছে। যা কলেজে অধ্যয়নরত ৮০০০ হাজার শিক্ষার্থীর পড়ালেখার মনোন্নয়ন সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
কলেজের সৌন্দর্য বর্ধন ও ছাত্র-ছাত্রীদের যাতায়াতের সুবির্ধাথে কলেজের মূল গেইট থেকে অধ্যক্ষভবন পর্যন্ত প্রায় ৫০০ গজের পাথর ঢালাই করা প্রসস্ত রাস্তা রাঙ্গামাটি পৌরসভার মেয়রের সহায়তায় ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।
বিরল প্রজাতি ও হারিয়ে যাওয়া বৃক্ষ রাজিকে আবার ফিরিয়ে এনে এর জীবন দান করার জন্য একটি ”টিস্যু ল্যাাব” শীঘ্রই কলেজের জন্য নির্ধারিত বোটানিক্যাল গার্ডেন এ স্থাপিত হবে। যা সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কার্যলয় হতে পঁচিশ লক্ষ টাকা ব্যয়ে শীঘ্রই এর কার্যক্রম শুরু হবে।
আগামীর ”রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজ” সর্ম্পকে অধ্যক্ষ বলেন, এ কলেজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সবায় সহযোগিতা আমাকে অনুপ্রনিত করেছে। আমার লক্ষ্য এ কলেজকে দেশের র্শীষস্থানীয় উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা এবং এ প্রতিষ্ঠান থেকে আগামীর জন্য মেধাবী নাগরিক সৃষ্টি করা যারা পাবর্ত্য জনপদের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের পাশাপাশি দেশকে সমৃদ্ধ করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ন ভুমিকা পালন করবে এবং দেশপ্রেম বুকে ধারণ করে দেশ ও জাতিকে নেতৃত্ব দেবে। সর্বোপরি সোনার বাংলা বির্নিমনে এ কলেজ অগ্রনীভূমিকা পালন করবে, জ্ঞানপিপাসুদের বাতিঘর ঘর হিসেবে চির অম্লান থাকুক এটাই আমার শেষ প্রত্যশা।

Archive Calendar
Mon Tue Wed Thu Fri Sat Sun
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031