চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি এ.বি.এম মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেছেন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রস্তাবিত বর্ধিত গৃহকর নগরীর আদিবাসী গৃহ মালিদের ছিন্নমূলে পরিণত করবে। পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত বসত-ভিটেয় তিন প্রজন্ম পরম্পরায় ওয়ারিশান ও পোষ্যের সংখ্যা বেড়েছে। ফলে কোন রকমে তাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই হলেও ভাড়ার ভিত্তিতে বর্ধিত গৃহকর আরোপ জনস্বার্থের পরিপন্থী।
বুধবার সকালে এ.বি.এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর আহবানে বাইশ মহল্লার সর্দার কমিটির সভাপতি আলহাজ্ব ইউসুফ সর্দারের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দলের সাথে বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, আপীল শুনানীর মাধ্যমে গৃহকর সহনীয় পর্যায়ে রাখার কথা নিছক আই-ওয়াশ মাত্র। গৃহকর দশ গুণেরও বেশি বাড়িয়ে তা যদি পঁচাত্তর শতাংশও কমানো হয় তাও কখনো গৃহমালিকদের জন্য সহনীয় হবে না। তাই আগেই ভুল প্রক্রিয়ায় অযৌক্তিকভাবে গৃহীত বর্ধিত গৃহকর ধার্যের প্রস্তাব প্রত্যাহার করে নিয়ে আগের তুলনায় স্থাপনার আয়তনের ভিত্তিতে তিন থেকে পাঁচ শতাংশ বাড়িয়ে গৃহকর নির্ধারণই হবে গ্রহণযোগ্য সমাধান।
মহিউদ্দিন চৌধুরী আরো বলেন, আইন ও মন্ত্রণালয়ের দোহাই দিয়ে নগরবাসীর উপর জুলুম করা হচ্ছে। মনে রাখা উচিত ১৯৮৬ সালে এরশাদ আমলে গৃহীত সিটি কর্পোরেশন ট্যাক্সেশন রুলস-১৯৮৬ একটি অ্যাক্ট বা অডিনান্স মাত্র। এটা সংসদে আইন হিসেবে পাশ হয়নি। তাই কোন সিটি কর্পোরেশন এটাকে আইন হিসেবে প্রয়োগ করেনি। তাই প্রশ্ন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সেবার মান যখন সর্বনিন্ম পর্যায়ে এবং নাগরিক ভোগান্তি চরমে তখন কথিত একটি এ্যাক্টকে আইন বলে চাপিয়ে দিলে অযৌক্তিক এই গৃহকর প্রদানে নগরবাসী বাধ্য নয়। একইভাবে বর্ধিত গৃহকরকে সহনীয় মাত্রায় আনার নামে আপিলের মূলো ঝুলিয়ে অবৈধ প্রক্রিয়াকে বৈধতা দিতে রাজী নয়।
তিনি মহল্লা সর্দারদের উদ্দ্যেশ্যে বলেন, আপনারা প্রত্যেকেই একেক জন এক একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠান। কবরে যাওয়ার আগ পর্যন্ত আপনারা মানুষের সুখ-দুঃখের সাথী। তাই দলমত নির্বিশেষে জুলুমের প্রতিবাদ করতে আপনাদেরকে নেতৃত্ব দিতে হবে। তিনি আরো বলেন, রাজনীতিক হিসেবে জনগণের কাছে আমাদেরকে যেতে হয়। তাদের কথা শুনতে হয়। জনগণের নেতা হয়ে যদি তাদের ভাষা বুঝতে না পারি তা হলে তারা ক্ষমা করবে না। আমাদের কোন নেতার ভুলের কারণে যদি বর্তমান সরকারের নজীর বিহীন সাফল্য ম্লান হবার উপক্রম হলে তা দল ও সরকারের জন্য বিপদজ্জনক হবে।
বৈঠকে মহল্লা সর্দার কমিটির সভাপতি আলহাজ্ব ইউসুফ সর্দার বলেন, আমাদের কোন রাজনৈতিক অভিপ্রায় নেই। আমাদের আন্দোলন সরকারের বিরুদ্ধে নয়। চট্টগ্রামের সকল উন্নয়ন কর্মকা-ে আমরা পরিতৃপ্ত। আমাদের আন্দোলন আদিবাসী হিসেবে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থে। তিনি আরো বলেন, গৃহকর নির্ধারণের ব্যাপারে আমাদের মতামত জানাতে সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত মহিলা আসনের কাউন্সিলরের সাথে একটি বৈঠক ডেকে ছিলাম। কিন্তু তাঁরা একজনও আসেন নি। আমাদের মতামত মেয়রের কাছে জানিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি সাড়া দেননি। আমাদের মতামতকে যিনি গ্রাহ্য করবেন এবং মতামতকে আমলে আনবেন আমরা তাঁর ডাকে অবশ্যই সাড়া দেবো।
বৈঠকে বাইশ মহল্লা সর্দার কমিটির নেতৃবৃন্দের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন আবু মোহাম্মদ মুছা চৌধুরী, হাজী আলী বক্স, হাজী শওকত আলী, মাহমুদুর রহমান, জাগির সর্দার, হাজী নাছের আহমদ, মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর, সিরাজুল ইসলাম, সালাউদ্দিন ইবনে আহমদ, আলহাজ্ব মোহাম্মদ নুরুল হক, মোহাম্মদ তারেক প্রমুখ।