লেখক-সাংবাদিকের স্বাধীনতা শুধু সংবিধানেই: জন ম্যাকিনসন

ঢাকায় বাংলা একাডেমিতে অনুষ্ঠিত ‘ঢাকা লিট ফেস্ট’ এর তৃতীয় দিনের আসরে এসে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি প্রকাশনা সংস্থা, লেখক ও সাংবাদিকদের উপর সরকারি বিধিনিষেধের কড়া সমালোচনাও করেন।

জন ম্যাকিনসন বলেন, “পৃথিবীর নানা দেশের সংবিধানে বলা হয়েছে, লেখক, প্রকাশক আর সাংবাদিকরা পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা পাবেন। কিন্তু দেখুন, তাদের টুঁটি কিভাবে চেপে ধরা হচ্ছে, তাতে এর বাস্তবায়ন কি কোথাও হচ্ছে? হচ্ছে না তো। সরকারের লোকেরা এসব কথা বলে বেড়ায়। কিন্তু ওরাই লেখক, সাংবাদিকদের হুমকি ধামকি দেয়- এটা লেখা যাবে না, ওটা লেখা যাবে না। এভাবে চলতে থাকলে তো তাদের পেশাই হারিয়ে যাবে।”

ম্যাকিনসন সাংবাদিক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন বার্তা সংস্থা রয়টার্সে। এরপর তিনি প্রভাবশালৗ দৈনিক ফিন্যান্সিয়াল টাইমসে ‘লেক্স কলাম’ এর সম্পাদক ছিলেন। তিনি অলাভজনক বেশকটি প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন, এগুলোর মধ্যে রয়েছে  প্রগতিশীল চিন্তাধারার সংগঠন আইপিপিআর ও যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল থিয়েটারেও তিনি পালন করেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। জন ম্যাকিনসন এখন কম্পিউটার নির্মাণ প্রতিষ্ঠান কেনোর চেয়ারম্যান।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সংবাদমাধ্যম বা সাংবাদিকদের উপর হামলার ধারাবাহিকতায় আতঙ্কিত এই গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব বলেন, “বৈশ্বিক সন্ত্রাসের যে চিত্র তা থেকে উপমহাদেশের সন্ত্রাসবাদের চিত্রটা আলাদা। এখানে মুক্তচিন্তার মানুষের উপর আঘাতটা বেশি আসে। আমি পাঁচ বছর ধরে নিবিড়ভাবে এই উপমহাদেশের চিত্রটা দেখছি। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক নানা দিক থেকে তাদের উপর চাপ আসে।”

‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ চাপ মোকাবেলা করে উপমহাদেশের সাংবাদিকরা পেশাগত দায়িত্ব পালনে যেভাবে দায়িত্ববোধের পরিচয় দিয়ে চলেছেন, তার প্রশংসা করেন ম্যাকিনসন।

সরকার বা প্রভাবশালী মহলের ছত্রচ্ছায়া থেকে বেরিয়ে এসে প্রকাশনা সংস্থাগুলোর সত্যভাষণেও নানা প্রতিবন্ধকতার কথা বলেন তিনি।

“পৃথিবীর নানা দেশে প্রকাশনা সংস্থাগুলো সামাজিক-রাজনৈতিক আর অর্থনৈতিক চাপের মধ্যে রয়েছে। তারপর সরকারের শ্যেন দৃষ্টি তো রয়েছেই। সবকিছু মোকাবেলা করে সত্যভাষণের কাজটা বড় সোজা কাজ না। লেখকদের উপর কড়াকড়ি আরোপের পরও কেউ কেউ কিন্তু সাহসী ভূমিকা রাখছে। প্রকৃত সত্যটা কিন্তু কেউ কেউ প্রকাশ করছেই।”

সরকারের কর্তাব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “আরেকটু ফ্রি স্পেস পেলে আমাদের সাহিত্যিকরা আরও দারুণ সব সাহিত্য উপহার দিতেন। ইতিহাস, সমাজ, রাজনীতি আর বাস্তবতা নিয়ে সত্যটা গোটা ‍দুনিয়াকে তারা জানাতে পারত। আশা করব, সরকার বা রাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গির বদল হবে।”

‘ঢাকা লিট ফেস্ট’ এ যোগ দিতে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের আসার অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এখানে এসে সত্যি খুব ভালো লাগছে। একটা সমস্যা, ঢাকার যানজট। এটা ভীষণ পীড়াদায়ক।”

Archive Calendar
MonTueWedThuFriSatSun
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930