॥ মোহাম্মদ আবু তৈয়ব ॥ দুর্ণীতি দমন কমিশনের কমিশনার (তদন্ত) এ, এফ, এম আমিনুল ইসলাম বলেছেন, শিক্ষার্থীদের ক্লাস ফাঁকি দিয়ে শিক্ষকরা কোচিং করায় এটাও দুর্ণীতি। তিনি গতকাল (মঙ্গলবার) সকালে খাগড়াছড়িতে জেলা দুর্ণীতি প্রতিরোধ কমিটির আয়োজনে ও জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় খাগড়াছড়ি পৌর টাউন হল মিলনায়তনে গণশুনানীতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দিয়ে এই মন্তব্য করেছেন। এবং তিনি ঐ এসময় পুন: ব্যক্ত করে বলেছেন, সময়মতো সরকারি অফিসে না আসা এটাও দুর্নীতির সামিল। যেখানে দুর্ণীতি, সেখানে প্রতিবাদ করতে হবে। যারা দুর্ণীতি করছে, তাদের দুর্ণীতি নিয়ন্ত্রণ করা দুদুকের একার পক্ষে সম্ভব নয়। দুর্নীতির বিরুদ্ধে গণসচেতনতা গড়ে তুলে দুর্ণীতিমুক্ত গড়তে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানিয়েছে।
খাগড়াছড়িতে গণশুনানীতে সভাপতিত্ব করেন খাগড়াছড়ির নবাগত জেলা প্রশাসক মো. রাশেদুল ইসলাম। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার মজিদ আলী (বিপিএম সেবা), দুদকের পার্বত্য জেলা রাঙামাটি সমন্বিত কার্যালয়ের উপ-পরিচালক সফিকুর রহমান ভূইয়া, জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি সুদর্শন দত্ত, সাধারন সম্পাদক এ্যাড. জসিম উদ্দিন মজুমদার।
গণশুনানীতে স্বাস্থ্য বিভাগ, বিদ্যুৎ বিভাগ, পাসপোর্ট অফিস, জেলা মাদক নিয়ন্ত্রণ অফিস, শিক্ষা বিভাগ, ভূমি অফিস, সোনালী ব্যাংক, পার্বত্য জেলা পরিষদ ও খাগড়াছড়ি পৌরসভা কার্যালয়ের ওপর গণশুনানী করা হয়েছে।
ঐ সময় স্থানীয় বিদ্যুৎ গ্রাহক শহিদুল ইসলামের অভিযোগের প্রেক্ষিতে জেলা বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এম. জাফরকে তিন কার্য্য দিবসের মধ্যে সমস্যা সমাধানের নির্দেশ দেন দুদক কমিশনার। এছাড়াও সিভিল সার্জন, খাগড়াছড়িকে সদর হাসপাতালে ডাক্তার নিশ্চিতকরনসহ কার্যালয়টির টেন্ডার অনিয়মের বিষয়ে স্বচ্ছতা আনার জন্য ১মাসের সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়।
খাগড়াছড়ি প্রেসক্লাব সাধারন সম্পাদক আবু তাহের এর এক প্রশ্নে দুদক কমিশনার ভূমি অফিসে নামজারী শুনানীকালে জমির গড় মূল্য নির্ধারন ও কেন ট্রেজারী চালানের মাধ্যমে রাজস্ব জমা দেয়া হবে না জানতে চেয়ে জেলা প্রশাসককে লিখিতভাবে জানানোর জন্য তাগিদ দেন দুদক কমিশনার।
গণশুনানীতে স্বাস্থ্যবিভাগ নিয়ে প্রশ্ন রাখেন সাবেক প্রেসক্লাব সম্পাদক আজিম উল হক, জবাব দেন সিভিল সার্জন ডা: আব্দুস সালাম, মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগ নিয়ে প্রশ্ন করেন স্থানীয় যুবক আ: জব্বার, উত্তর রাখেন শিক্ষা কর্মকর্তা সাধন কুমার চাকমা, ভূমি অফিস সংক্রান্তে অভিযোগ করেন খাগড়াছড়ি প্রেসক্লাব সাধারন সম্পাদক আবু তাহের মুহাম্মদ, স্থানীয় আব্দুল আজিজ আখন্দ ও মাটিরাঙার মাজেদা বেগম। ভূমি অফিসের অনিয়ম নিয়ে জবাব দেন সহকারী কমিশনার ভূমি কায়সার আহমেদ। এছাড়া পাসপোর্ট অফিসের হয়রানির কথা তুলে ধরেন নারী নেত্রী সুইচিং চৌধুরী। তার অভিযোগের প্রেক্ষিতে জবাব দেন উপ-পরিচালক (ভার) মো. রুস্তম আলী। এছাড়াও খাগড়াছড়ি পৌরসভার লাগামহীন পৌর কর বৃদ্ধি ও টেন্ডারবাজি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য ও উন্নয়ন বিভাগের আহবায়ক আওয়ামীলীগ নেতা মংসুইপ্রু চৌধুরী অপু। এসব বিষয়ে পৌর মেয়র রফিকুল আলম বলেন, দুদকের জন্য পৌরসভার দরজা খোলা। কিঞ্চিত পরিমান দুর্ণীতি পাওয়া গেলে তিনি (মেয়র) স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করবেন জানান। সর্বশেষ খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের ৮৭টি প্রকল্পের টেন্ডার কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন তোলেন আওয়ামীলীগ নেতা এস.এম শফি। এসব বিষয়ে উত্তর দেন পাজেপ সদস্য মংসুইপ্রু চৌধুরী অপু।
এছাড়াও গণশুনানীতে পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী, পরিষদের একাধিক সদস্য, জেলা প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তা, সাংবাদিক, সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ এবং স্কুল পড়–য়া শিক্ষার্থীরা অংশ নিয়েছে এবং খাগড়াছড়ি টাউন হলের পাশাপাশি ব্যাপক নিরাপত্তা জোরদ্বার ছিল।