॥ গিরিদর্পণ ডেস্ক ॥ বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তমব্রু সীমান্তে নিজেদের অংশে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য বাড়তি সেনা মোতায়েন করেছে বলে জানিয়েছে মিয়ানমার। একই কারণে তারা সীমান্ত এলাকায় ফাঁকা গুলি ছুড়েছিল বলেও দাবি করেছে। সীমান্তের জিরো লাইনে অবস্থানকারী প্রায় সাড়ে ছয় হাজার রোহিঙ্গাকে যে কোন সময় ফেরত নিতে রাজি হয়েছে মিয়ানমার। তবে সৈন্যসংখ্যা বৃদ্ধি, মাইকিং ও অন্যান্য তৎপরতাকে তাদের নিয়মিত নিরাপত্তা কার্যক্রম বলে জানিয়েছেন সেই দেশের প্রতিনিধিরা।
শুক্রবার (২ মার্চ) বিকাল ৩টার দিকে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সীমান্তে ঢেঁকুবুনিয়ার ২২নং পিলারের কাছে পতাকা বৈঠকে বসে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী। বিকাল ৪টা ৪০ মিনিটের দিকে বৈঠক শেষ হলে সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানান ৩৪ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মঞ্জুরুল হাসান খান।
পতাকা বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে নেতৃত্ব দেন মঞ্জুরুল হাসান খান ও মিয়ানমারের পক্ষ থেকে নেতৃত্ব দেন দেশটির সীমান্ত পুলিশের লেফটেন্যান্ট সোয়োজাই লিউ। এতে বিজিবির পক্ষে সাত সদস্যের একটি দল অংশ নিয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে বিজিবির একটি সূত্র।
বৈঠক থেকে ফিরে কক্সবাজার ৩৪ বিজিবি’র কমান্ডার লে. কর্নেল মঞ্জুরুল হাসান খান আরো জানান, বৃহষ্পতিবার রাতে রোহিঙ্গাদের ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনা অস্বীকার করেছেন মিয়ানমারের কর্মকর্তারা। জিরো লাইনে অবস্থানকারীদের ঠিক কবে থেকে ফেরত নেওয়া হবে তা অবশ্য নিশ্চিত করে বলেননি তাঁরা।
মঞ্জুরুল হাসান খান বলেন, ‘মিয়ানমার সীমান্ত পুলিশ আরও জানিয়েছে, ভবিষ্যতে সীমান্ত এলাকায় ফাঁকা গুলির আগে বাংলাদেশকে অবহিত করবে।’ সীমান্ত এলাকার পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক আছে। শূন্যরেখায় থাকা রোহিঙ্গারাও ভালো আছে।
তিনি আরও বলেন, ‘মিয়ানমার সীমান্ত পুলিশ বিজিবির কাছে প্রশ্ন করে, সীমান্তে বাংলাদেশ কেন সিসি ক্যামেরা স্থাপন করেছে। জবাবে আমরা জানাই, এটা মিয়ানমারকে টার্গেট করে করা হয়নি, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্যই আমরা এটা করেছি।’
এদিকে বৈঠকের এই সিদ্ধান্ত প্রকাশ হবার পর সেখানকার রোহিঙ্গাদের মধ্যে নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। রোহিঙ্গা আবু সালাম জানান, ফিরে যেতে বাধ্য হলে তারা নিশ্চিতই মিয়ানমার বাহিনীর হত্যাযজ্ঞের শিকার হবেন। নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ কেউই মিয়ানমারে ফেরত যেতে রাজি নয় বলে জানান আরেক রোহিঙ্গা মোঃ আসগর। তিনি বলেন, মিয়ানমারে আমরা মোটেও নিরাপদ নই। আমরা বাংলাদেশের ক্যাম্পে থাকতে চাই।
এর আগে শুক্রবার সকালে বান্দরবান উপজলার ঘুমধুমের তমব্রু সীমান্তে নো-ম্যানস ল্যান্ড এলাকা পরিদর্শন করেছেন বান্দরবান জেলা প্রশাসক দীলিপ কুমার বণিক, ৩৪ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মঞ্জুরুল হাসান খান, বান্দরবান লামা উপজেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আব্দুস সালাম, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এন সরয়ার কামাল প্রমুখ।
বৃহস্পতিবার (১ মার্চ) মিয়ানমার সীমান্তে অতিরিক্ত সৈন্য সমাবেশ করার প্রতিবাদ জানায় বিজিবি। এসময় পতাকা বৈঠকের আহ্বান করা হয় বিজিবির পক্ষ থেকে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার পতাকা বৈঠকে অংশ নিতে রাজি হলো মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি)। এর আগে একাধিকবার বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পতাকা বৈঠকের আহ্বান জানানো হলেও তাতে রাজি হয়নি মিয়ানমার।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সীমান্তে হঠাৎ করেই অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করে মিয়ানমার। সামরিক পিকআপ, ট্রাক ও ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বিপুল সংখ্যক বিজিপি সদস্য শূন্য রেখা থেকে প্রায় দেড়শ গজ ভেতরে অবস্থান নেয়। শুক্রবার (২ মার্চ) সকালে ফের তুমব্রু সীমান্তে মিয়ানমার সেনারা ফাঁকা গুলি ছুড়ে আতংক সৃষ্টি করে। এতে আতঙ্ক দেখা দেয় রোহিঙ্গাসহ সীমান্ত অঞ্চলের বসবাসরত বাসিন্দাদের মধ্যে। তবে সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করে বিজিবি। এ পরিস্থিতিতে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত লুইন উ’কে তলব করে তাকে একটি নোট ভারবাল বা আনুষ্ঠানিক পত্র দেয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
একটি সূত্র জানায়, রাখাইনে সামরিক শক্তি বাড়ালে নো-ম্যানস ল্যান্ডে যে ছয় হাজার রোহিঙ্গা আছে তারা মিয়ানমারে ফেরত যেতে আগ্রহী হবে না এবং রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর পুরো প্রক্রিয়াটি অনিশ্চিত হয়ে যেতে পারে।