॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ দেশের শাসকগোষ্ঠী জুম্মদের সংস্কৃতি, বিঝু, সাংগ্রাই, বৈসুকে আনন্দকে ধ্বংস করতে চাচ্ছে। তাই পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ায় সাংগ্রাই, বৈসু, বিজু, সাংগ্রাইন-এর জীবন নিরাপদ নয় বলে মন্তব্য করেছেন জনসংহতি সমিতির সভাপতি ও পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমা।
তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে উপনিবেশিক শাসন-শোষন বজায় রয়েছে। তাই আজকে বিঝুর জীবন কেন নিরাপদ নয় সেটা গভীরভাবে বুঝতে হবে, ভাবতে হবে। বিঝুর জীবন নিরাপদকরণে আমাদের করণীয় কী বা কী ভূমিকা পালন করতে হবে তা সকলকে গভীরভাবে উপলব্ধি করতে হবে।
শনিবার (৭ এপ্রিল) বিকেলে রাঙ্গামাটির কল্যাণপুর রাণী বিনীতা রায় পাঠাগার ও ক্লাব কর্তৃক আয়োজিত আলোচনা সভা ও পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান আতিথির বক্তব্যে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।
রাণী বিনীতা রায় পাঠাগার ও ক্লাবের সভাপতি সুবীর চাকমা সুজনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরো বক্তব্য রাখেন, সিএইচটি হেডম্যান নেটওয়ার্কের সহ সভাপতি শক্তিপদ ত্রিপুরা, রাঙ্গামাটি সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অরুণ কান্তি চাকমা ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রিতা চাকমা, রাণী বিনীতা রায় পাঠাগার ও ক্লারে উপদেষ্টা প্রণয় খীসা ও শ্যামা প্রসাদ চাকমা প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন বিঝু উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক কনিষ্ক চাকমা। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন রাণী বিনীতা রায় পাঠাগার ও ক্লাবের উপদেষ্টা মঙ্গল কুমার চাকমা ও আশাপূর্ণ চাকমা, গ্রামের মুরুব্বী দয়ালসুখ চাকমা, অন্ন সাধন চাকমা প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ।
লারমা আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ণাধিকার নিশ্চিতকরণে লড়াই-সংগ্রাম হয়েছে। কেবল মহান নেতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা নয়, তারও বহু আগে থেকেই জুম্ম জনগণের এই বিঝুর জীবন সুন্দর ও নিরাপদ করতে আন্দোলন শুরু করেছিলেন। একপর্যায়ে ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়িত না হওয়ায় এখনো পার্বত্যাঞ্চলে সেনা শাসন চলছে। আর এ কারণে পার্বত্যাঞ্চলের জুম্ম জনগণ আজ অনিরাপদে তাদের জীবনযাত্রা অতিবাহিত করছে। তাই পার্বত্যাঞ্চলের জুম্ম সমাজের সুখী ও সমৃদ্ধশালীকরণে একযোগে এগিয়ে আসবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শক্তিপদ ত্রিপুরা বলেন, বিঝু, বৈসু, সাংগ্রাই হচ্ছে জুম্ম সংস্কৃতির ধারক-বাহক। এটা জুম্মদের সর্ববৃহৎ ঐতিহ্যবাহী সামাজিক উৎসব। এটি পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল জুম্ম জাতিসমূহ একযোগে পালন করে থাকে। তাই এই উৎসব জুম্ম জাতিসমূহের ঐক্য-সংহতি ও মেলবন্ধনের সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়। বিঝু, বৈসু, সাংগ্রাই কেবল একটি আনন্দের নয়, এটা জুম্ম জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম ও আত্মপরিচিতিরই অবিচ্ছেদ্য অংশ। জুম্ম জনগণের সংস্কৃতি ও অধিকার সুরক্ষায় পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের কোন বিকল্প নেই। জুম্ম সংস্কৃতি সংরক্ষণে ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলন জোরদার করতে হবে বলে শ্রী ত্রিপুরা অভিমত ব্যক্ত করেন।
রাঙ্গামাটি সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অরুণ কান্তি চাকমা বলেন, বিঝু উদযাপনে জুম্মদের সংস্কৃতি যাতে প্রতিফলিত সেভাবে পালন করা দরকার। বিঝুর সময় যাতে শান্তি, শৃঙ্খলা ও সোহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ নষ্ট না হয় তার প্রতি সচেতন থাকতে সকলকে তিনি আহ্বান জানান।
বিঝু-২০১৮ খ্রীস্টাব্দ ও ১৪২৪ বাংলা উপলক্ষ্যে রাণী বিনীতা রায় পাঠাগার ও ক্লাব কর্তৃক প্রায় অর্ধ মাস ব্যাপী জুম্মদের ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা, শিশু চিত্রাঙ্কন ও সঙ্গীত প্রতিযোগিতা, মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। আলোচনা সভা ও পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের পরে কল্যাণপুরের বিশিষ্ট শিল্পী ও শিশু শিল্পীদের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।