পাহাড়ে সামাজিক উৎসবের আজ মুল বিজু

॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদের গঙ্গা দেবীর উদ্দেশ্যে ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে আজ থেকে রাঙ্গামাটিতে শুরু হয়েছে চাকমাদের বিজু, মারমাদের সাংগ্রাই ও ত্রিপুরাদের বৈসুক উৎসব। গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরে চাকমা রাজবাড়ী ঘাটে আদিবাসী ফোরামের সভাপতি প্রকৃতি রঞ্জন খীসা নদীতে ফুল ভাসানোর মধ্যে দিয়ে এই উৎসবের সূচনা করেন। এ সময় পাহাড়ী চাকমা, তঞ্চঙ্গ্যা ও ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষ এ সময় কাপ্তাই হ্রদের পাড়ে ফুল ভাসান।
অনুষ্ঠানে উৎসব কমিটির সদস্য বিজয় কেতন চাকমা, ইন্দ্র দত্ত তালুকদার সহ চাকমা সম্প্রদায়ের বিভিন্ন গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের লোকজন শহরের গর্জনতলী এলাকায় গঙ্গা দেবীর উদ্দেশ্যে ফুল ভাসানোর মধ্যে দিয়ে বৈসুক উৎসবের সূচনা করেন। সাবেক পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার বৈসুকের উদ্বোধন করেন। এ সময় রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমা, রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদ সদস্য স্মৃতি বিকাশ ত্রিপুরা সহ গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
পরে রাঙ্গামাটি গর্জনতলী ত্রিপুরা কল্যাণ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আয়োজন করা হয়েছে কাপ্তাই হ্রদে ফুল ভাসানোর পর শুরু হয় নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা। পরে ত্রিপুরা কল্যাণ ফাউন্ডেশন কার্যালয়ে বয়োজ্যেষ্ঠদের স্নান ও বস্ত্রদান, ত্রিপুরা তরুণ-তরুণীদের গড়াইয়া নৃত্য, আলোচনা সভা, পুরস্কার বিতরণী ও ঐতিহ্যবাহী পিঠা উৎসবে অংশ নেয়। এ সময় রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমা, পরিষদ সদস্য স্মৃতি বিকাশ ত্রিপুরা, সদস্য অমিত চাকমা রাজু সহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া উপজাতীয় জনগোষ্ঠীরা ভোরে বাগান থেকে ফুল তুলে ঘরে সাজানোয় ব্যস্ত থাকেন প্রতিটি ঘরে ঘরে নারীরা।
ঐতিহ্য অনুযায়ী আজ ১২ এপ্রিল পানিতে ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে তিন দিনের সার্বজনিন উৎসব শুরু হয়। আজ ১৩ এপ্রিল উদযাপিত হচ্ছে মূল বিজু। এই দিন প্রতিটি ঘরে ঘরে রান্না করা হবে ঐতিহ্যবাহী পাঁচন।
বৈসাবি উৎসবে রান্না হয় মূলত আদিবাসীদের প্রধান ও জনপ্রিয় খাবার পাচন এ খাবার সবার ঘরে রান্না হয়। এর পাশাপাশি নানা ধরনের পিঠা, সেমাই, বিভিন্ন ধরনের ফলমূল ও পানীয়ের আয়োজন করা হয়। সবজির বিশেষ পদটি রান্না হয় মূলত ২৫ থেকে ৩০ ধরনের সবজির সংমিশ্রণে।
উৎসবের এই তিন দিন চেনা-অচেনা সবার জন্য প্রত্যেকের গৃহ উন্মুক্ত থাকে। সবাইকে আন্তরিকতার সঙ্গে আপ্যায়ন করা হয়। সব মিলিয়ে বৈসাবি পাহাড়ি জনপদের মিলনোৎসব।
গোজ্যাপোজ্যে দিন নানাবিধ পূজা-পার্বণ আর প্রার্থনার মধ্য দিয়ে তিন দিনব্যাপী উৎসব শেষ হবে। পার্বত্য আদিবাসীদের মতে, বিজু মানে আনন্দ, নতুন করে বেঁচে থাকার স্বপ্ন, সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় আর চেতনার নতুন প্রেরণা। তাই এবার অভাব-অনটনের মধ্যেও যথারীতি উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। উৎসবটির যথার্থে আনন্দমুখর করে তুলতে প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতা ও বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে তিন পার্বত্য জেলায় পালিত হয়েছে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালা। বর্ষ বিদায় এবং বর্ষবরণ উপলক্ষে প্রতি বছর চৈত্র সংক্রান্তিতে আয়োজিত এ উৎসবকে চাকমারা বিজু, মারমারা সাংগ্রাইং, ত্রিপুরারা বৈসুক, তঞ্চঙ্গ্যারা বিষু এবং অহমিকারা বিহু বলে আখ্যায়িত করে।
এদিকে আগামী ১৪ এপ্রিল বাংলা নতুন বছরকে বরণ করে নিতে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসন। আগামীকাল পহেলা বৈশাখে রাঙ্গামাটিতে র‌্যালী ও বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
রাঙ্গামাটি বাংলা নববর্ষ ১৪২৫ উদযাপন পরিষদ শহরে পহেলা বৈশাখের নানান অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে। এছাড়া বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন গুলো নিজ নিজ ব্যানারে পহেলা বৈশাখ নিজেদের মত বরণ করে নেবেন।

রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসককে বদলিজনিত ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়েছে রাঙ্গামাটি প্রেস ক্লাব কর্মময় জীবনে জেলাবাসীর পাশাপাশি সাংবাদিকরাও অনেক সাহায্য করেছেন —–মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন খান জেলা প্রশাসক হিসেবে তিনি বিভিন্ন ধরনের সমস্যা শক্তহাতে সমাধান করেছেন —-এ কে এম মকছুদ আহমেদ

Archive Calendar
Mon Tue Wed Thu Fri Sat Sun
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031