বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট: বেতবুনিয়া গ্রাউন্ড স্টেশন প্রস্তুত

জিয়াউল হক, রাঙামাটি :  মহাকাশের বুকে লাল সবুজের চিহ্ন নিয়ে ঘুরপাক খাওয়া বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটকে নিয়ন্ত্রণে সম্পূর্ণ প্রস্তুত রাঙামাটির বেতবুনিয়ায় গ্রাউন্ড স্টেশন। স্যাটেলাইটটি নিয়ন্ত্রণে দেশে স্থাপিত দুটি গ্রাউন্ড স্টেশনের একটি এটি। অন্যটি গাজীপুরে।

মূলত গাজীপুরের গ্রাউন্ড স্টেশন থেকেই স্যাটেলাইটটি নিয়ন্ত্রণ করা হবে। বিকল্প হিসেবে থাকবে বেতবুনিয়ার স্টেশনটি।

রাঙামাটির গ্রাউন্ড স্টেশনটি তৈরি করা হয়েছে রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার বেতবুনিয়ার ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্রে। প্রকল্পের অবকাঠামো তৈরির কাজ করেছে ফ্রান্সের থ্যালেস অ্যালেনিয়া স্পেসের নিয়োগকারী বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান স্পেক্ট্রা ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড। ২০১৬ সালে এই গ্রাউন্ড নির্মাণের কাজ শুরু হয়।বেতবুনিয়া ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র দেশের প্রথম ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র। ১৯৭০ সালের ৩০ জানুয়ারি এ কেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হয়। ১৯৭৫ সালের ১৪ জুন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভূ-উপগ্রহটি উদ্বোধন করেন। বর্তমানে এই কেন্দ্রের মাধ্যমে ১১টি দেশের সঙ্গে টেলিফোন ডাটা কমিউনিকেশন, ফ্যাক্স, টেলেক্স ইত্যাদি আদান-প্রদান করা হয়। প্রায় ৩৫ হাজার ৯০০ কিলোমিটার ঊর্ধ্বাকাশে অবস্থিত কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে শক্তিশালী অ্যান্টেনা দিয়ে বার্তা/তথ্য আদান-প্রদানের কাজ সম্পাদিত হয়।

বেতবুনিয়া সেকেন্ডারি গ্রাউন্ড স্টেশন প্রজেক্টের ব্যবস্থাপক শিপন হালদার বলেন, ‘২০১৬ সাল থেকে এই গ্রাউন্ডের কাজ শুরু হয়। এখন আমরা পুরোপুরি প্রস্তুত। প্রথমদিকে আমরা ১৭ জনের একটি টিম নিয়ে কাজ শুরু করি। এখন বর্তমানে সবমিলিয়ে একশ জনের ওপরে লোক কাজ করছে। এখন শেষ পর্যায়ে আছি আমরা।’

প্রজেক্টের স্পেক্ট্রা ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের কো-অর্ডিনেটর মিজানুর রহমান বলেন, ‘বেতবুনিয়া ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্রের পাঁচ একরজুড়ে গড়ে তোলা হয়েছে বেতবুনিয়া বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট গ্রাউন্ড স্টেশন-২। গাজীপুরে অবস্থিত স্টেশনের সঙ্গে বেতবুনিয়া স্টেশনের মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই। একই নকশায় গড়ে তোলা হয়েছে দুটি স্যাটেলাইট গ্রাউন্ড স্টেশন। ডিম্বাকৃতির একটি ভবন ব্যবহার হবে মূল ভবন হিসেবে। এর ভেতরে আলাদাভাবে সাজানো হয়েছে স্যাটেলাইট অপারেশন, কন্ট্রোল সেন্টার ও নেটওয়ার্ক অপারেশন সেন্টার বিভাগ।’বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট লঞ্চিং প্রজেক্টের জুনিয়র কনসালটেন্ট প্রকৌশলী রায়হানুল কবির বলেন, ‘মূল ভবনের বাইরে বসানো হয়েছে বিশাল দুটি অ্যান্টেনা। কর্মকর্তা ও প্রকৌশলীদের জন্য রয়েছে ডরমেটরি ভবন। যেখানে ৩০ জনের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পেতে পাশেই স্থাপিত হয়েছে ৩৩ কেভির বৈদ্যুতিক সাব-স্টেশন। এছাড়া, নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সুবিধা পেতে বিটিসিএলের তত্ত্বাবধানে নিশ্চিত করা হচ্ছে নিখুঁত ফাইবার অপটিক সংযোগ। স্টেশন পরিচালনার জন্য ৩০ জনের একটি টিমকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।’ থ্যালেস অ্যালেনিয়া স্পেসের হাতে প্রশিক্ষিত বাংলাদেশি প্রকৌশলীরা কে, কোথায় দায়িত্ব পালন করবেন; পরে তা সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে জানালেন বিটিআরসির এই কনসালটেন্ট।

বেতবুনিয়ার বাসিন্দা আরিফুর রহমান বলেন, ‘রাঙামাটির মানুষ হিসেবে এটি গর্বের একটি বিষয়। কারণ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের নিয়ন্ত্রণ হবে বেতবুনিয়া থেকে।’ এ স্যাটেলাইটের মাধ্যমে দুর্গম অঞ্চলে টেলিযোগাযোগ সহজ হবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের জন্য বরাদ্দ ছিল ২ হাজার ৯৬৭ কোটি টাকা। তবে খরচ হয়েছে ২ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা। এ অর্থের মধ্যে এক হাজার ৩১৫ কোটি টাকা বাংলাদেশের নিজস্ব তহবিল। এইচএসবিসি ব্যাংক বাকি এক হাজার ৬৫২ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে।

উৎক্ষেপণের প্রায় সপ্তাহখানেক পর এই স্টেশনের কার্যক্রম শুরু হবে। ২০১৭ সালের জুলাইয়ে গ্রাউন্ড স্টেশনে সিগন্যাল আদান-প্রদানে ১০ টন ওজনের দুটি অ্যান্টেনা স্থাপন করা হয়। এছাড়া, বিদ্যুতের জন্য জেনারেটর স্থাপন ও বিদ্যুৎ সরবরাহে দুটি বিকল্প ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বর্তমানে চট্টগ্রামের হাটহাজারী থেকে সরাসরি বিদ্যুৎ সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে।

মুক্ত গণমাধ্যম চাই : সকল গণমাধ্যমে এক নীতিমালা, তথাকথিত ওয়েজ বোর্ড বাতিল, নিজস্ব বেতন বোর্ড, বিজ্ঞাপন ও ক্রোড়পত্র নীতিমালা নিয়ন্ত্রণ মুক্ত, প্রয়োজনীয় কাঁচামালের মূল্য কমানো ও মফস্বলের পত্রিকাগুলো সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করে টিকিয়ে রাখতে হবে

Archive Calendar
Mon Tue Wed Thu Fri Sat Sun
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031