॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বিএফডিসির কর্মকর্তাদের আন্তরিকতায় প্রাকৃতিক দূর্যোগের পর কাপ্তাই হ্রদে মাছের উৎপাদান অতীতের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে কাপ্তাই হ্রদ থেকে ১০ হাজার ১৪০ মেট্রিক আহরণ করা হয়েছে। সরকারের রাজস্ব আয় হয়েছে ১৩ কোটি ২৩ লক্ষ ৯৭ হাজার টাকা। যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা বেশী। এছাড়াও মাছের উৎপাদনের পাশাপাশি পুরাতন বরফ কল মেরামতের মাধ্যমে বরফ উৎপাদনেরও অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙ্গে নতুন লক্ষ মাত্রায় উপার্জন করেছে বিএফডিসি।
গত বছর ১৩ জুন রাঙ্গামাটির ভয়াবহ পাহাড় ধ্বসের ফলে কাপ্তাই হ্রদের মারাত্মক ক্ষতি হয়। রাঙ্গামাটি পুরো জেলার বৃষ্টির পানি কাপ্তাই হ্রদের পড়ে এবং হ্রদের পানি ঘোলা হয়ে যাওয়ার ফলে হ্রদের কয়েক প্রজাতির মাছ মরে যায়। তার পরও সীমিত জনবল নিয়ে বিশাল কাপ্তাই হ্রদের বিশাল মৎস্য ভান্ডারের মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে এবং নিজেদের আন্তরিকতার ফলে মাছের উৎপাদন যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে তেমনি রাজস্বও বৃদ্ধি পেয়েছে।
এই ব্যাপারে রাঙ্গামাটি বিএফ ডিসির ব্যবস্থাপক কমান্ডার মোঃ আসাদুজ্জামান জানান, কাপ্তাই হ্রদ দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার সর্ববৃহৎ কৃত্রিম হ্রদ। বিগত বছর ১৩ জুনের ভয়াবহ পাহাড় ধ্বস এবং পরবর্তী সময়ে অক্টোবর পর্যন্ত বৃষ্টি ও দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারনে কাপ্তাই হ্রদের প্রাকৃতিক পরিবেশ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। যা হ্রদের মৎস্য উৎপাদনের উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে। পাহাড় ধ্বসের কারনে হ্রদের পানি ঘোলাটে হয়ে গিয়ে পানিতে মাছের জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেনের পরিমান হ্রাস পায়। ইহাতে অনেক কেচকি ও চাপিলা মাছ মরে যায়। এই দুই প্রজাতির মাছ রাজস্ব আয়ের প্রধান উৎস্য। পানির উচ্চতা বৃদ্ধি, ব্যাপক ¯্রােত এবং দীর্ঘ সময় ধরে হ্রদের পানি অপসারণের জন্য জল বিদ্যুত কেন্দ্রের স্পিলওয়ে খুলে রাখা হলে হ্রদের স্বাভাবিক মৎস্য উৎপাদন ব্যাহত হয়।
এরূপ পরিস্থিতির কারণে মৎস্য উৎপাদন বিগত বছরের তুলনায় কম হওয়ায় এ বছর ব্যবসায়ীরা মৎস্য আহরণ এর সময় বাড়ানোর জন্য অনুরোধও করে। সার্বিকভাবে ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে মৎস্য উৎপাদন ২০১৬-২০১৭ বছর হতে কম হবে বলেই ধারনা করা হচ্ছিল। তবে আশার কথা হলো এতো সকল প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মধ্যদিয়েও বর্তমান অর্থ বছরে কাপ্তাই হ্রদ হতে রেকর্ড সংখ্যক ১০,১৪০ মে. টন মাছ এবং ১৩ কোট ২৩ লাখ ৯৭ হাজার টাকা সরকারী রাজস্ব আয় করে বিএফডিসি, রাঙ্গামাটি। শুধু মৎস্য উৎপাদন নয় বরফ উৎপাদনেরও অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙ্গে নতুন লক্ষ মাত্রায় উপার্জন করেছে বিএফডিসি, রাঙ্গামাটি যদিও যন্ত্রাংশ সবই পুরাতন এবং কার্যক্ষমতা হ্রায় পেয়েছে।
এছাড়া জনবলও পূর্বের তুলনায় হ্রাস পেয়েছে। ইহাতে হ্রদের মৎস্য সম্পদের ব্যবস্থাপনায় বিএফডিসি, রাঙ্গমাটির আন্তরিকতা ও দক্ষতার পরিচয় মেলে। দক্ষ ব্যবস্থাপনার কারনে অতিতের সকল রেকর্ড ভেঙ্গে সর্বোচ্চ পরিমান মৎস্য আহরণ ও রাজস্ব আয় করা সম্ভব হয়েছে।
গত বছর কাপ্তাই হ্রদ হতে মৎস্য আহরণের বিষয়ে জানতে চাইলে কাপ্তাই হ্রদের মৎস্য ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি থেকে জানানো হয়, গত বছর হ্রদ হতে মৎস্য আহরণ মৌসুমের শুরুর দিকে পাহাড় ধ্বসের কারনে হ্রদের পানি ঘোলা হয়ে গিয়ে হ্রদের কেচকি ও চাপিলা মাছ সহ অন্যান্য ছোট প্রজাতীর মাছ মারা যায়। ঐ সময়ে পানির উচ্চতা অতন্ত বেশী ও হ্রদে ব্যাপক ¯্রােত থাকায় জেলেগণ ঠিক মতো হদে জাল মারতে পারেনি। ফলে শুরুর দিকে কাঙ্খিত মৎস্য আহরণ করা সম্ভব হয়নি। এতে ব্যবসায়ীগণ আর্থিকভাবে অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্থ হয়। তা স্বত্বেও মৎস্য ব্যবসায়ী ও জেলেদের আন্তরিক প্রচেষ্টা এবং বিএফডিসি, রাঙ্গমাটির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার কারণে আমরা রেকর্ড পরিমান মৎস্য আহরণ ও রাজস্ব আদায়ে সমর্থ হয়েছে।
নিচে সাম্প্রতিক বছর সমূহে কাপ্তাই হ্রদ হতে মৎস্য আহরণ ও রাজস্ব আয়ের বিবরণ তুলে ধরা হলোঃ
ক্রমিক নং আর্থিক সাল ভৌতিক (টনে) আর্থিক (লক্ষ টাকায়)
০১ ২০১৩-২০১৪ ৭৭২৫.৫৫ ৬৬৮.৯৯
০২ ২০১৪-২০১৫ ৮৬৪৪.৮০ ৮৬৭.৭৫
০৩ ২০১৫-২০১৬ ৯৫৮৯.৬৩ ১০৬০.৭৪
০৪ ২০১৬-২০১৭ ৯৯০৪.৬৫ ১২৭৫.১৭
০৫ ২০১৭-২০১৮ ১০১৪০.৭৮ ১৩২৩.৯৭