॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ রাঙ্গামাটিতে বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই পাহাড় ধ্বসের ঘটনায় মানুষের মাঝে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। গত ৮ জুন শহরের সামান্য বৃষ্টিতে পুরাতন বাস ষ্টেশন এলাকায় চেম্বার অব কমার্স ভবনের পাশে ধসের এ ঘটনা ঘটে। রাঙ্গামাটি চট্টগ্রাম শহরের প্রধান সড়কের পাশ ঘেসে গড়ে উঠা একটি বাড়ির নিরাপত্তা দেয়াল ধসে পড়লেও বাড়িটির চারটি ঘরে অবস্থান করা বাসিন্দারা অল্পের জন্যে প্রাণে রক্ষা পায়।
ঘটনার সাথে সাথেই ফায়ার সার্ভিস ও জেলা প্রশাসনের লোকজন ঘটনাস্থলেই এসে ঝুকিপূর্ন চারটি ঘরের লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থলে একজন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটকে পাঠিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনা প্রদান করেছেন জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশিদ।
স্থানীয়রা জানায়, রাঙ্গামাটি শহরের প্রধান সড়কের পাশেই পুরাতন বাস ষ্টেশন জামে মসজিদের মালিকানাধীন উক্ত বাড়িটির চারটি ঘরে চার পরিবারের নারী-শিশুসহ অন্তত ২৫জন লোকের বসবাস ছিলো। বৃহস্পতিবার থেকে শুক্রবার দুই দফায় উক্ত সড়কটির দুটি স্থানে গর্ত খুড়ে পাবলিক হেলথ এর লোকজন। পানির লাইনের সংযোগ দিতেই রাস্তার উপর এই গর্ত খোঁড়া হয় বলে স্থানীয়রা জানিয়েছে। কিন্তু শুক্রবার সন্ধ্যা থেকেই শুরু হওয়া বৃষ্টির পানি উক্তর রাস্তাটির একপাশ দিয়ে বয়ে যাওয়ার সময় উক্ত গর্তগুলো দিয়ে মাটির ভেতরে প্রবেশ। রাত সাড়ে নয়টার সময় ধারক দেয়ালসহ সড়কটির একটি অংশ ঘরের সম্মুখভাগে ভেঙ্গে পড়ে।
এসময় খবর পেয়ে দমকল বাহিনীর লোকজন এসে স্থানীয়দের সহযোগিতায় ঘরের বাসিন্দাদের বের করে আনা হয়। বিষয়টি শুনার সাথে সাথেই রাঙামাটির জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশিদ তার অফিসের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর এনডিসি তাপস শীলকে ঘটনাস্থলে পাঠান। এসময় স্থানীয় বাসিন্দাদের নিরাপদে অন্যত্র আশ্রয় নেওয়ার পাশাপাশি সংস্কার কাজ শুরু করার আগ মুহুর্ত পর্যন্ত উক্ত স্থানে কেউই যেন অবস্থান করতে নাপারে সেবিষয়ে খেয়াল রাখতে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর করিম আকবরকে জানিয়ে দেন তিনি।
এসময় এনডিসি জানান, বর্ষা মৌসুমে সম্ভাব্য ধসের আশঙ্কায় লোকজনকে সচেতন করার জন্যে শনিবার থেকেই মাঠে নামছে রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসন কর্তৃপক্ষ। তিনি বলেন, ইতিমধ্যেই শুক্রবার বিকেলেই জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশিদ মহোদয় জেলার সকল আশ্রয় কেন্দ্রগুলোর দায়িত্বরত কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে কেন্দ্রগুলোর চাবিসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে সর্বদা প্রস্তুত থাকতে নির্দেশনা প্রদান করেছেন। তিনি জানান, বৃষ্টির তীব্রতা বাড়তে থাকলে ক্ষয়-ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে রাঙ্গামাটিবাসী। এ লক্ষ্যে জেলা প্রশাসক সার্বিকভাবে বিষয়টি নজরদারি করছেন। শনিবার সকাল থেকেই সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে লিফলেট বিতরণসহ গুরুত্বপূর্ন স্থানগুলোতে ফেষ্টুনের মাধ্যমে আশ্রয়কেন্দ্রগুলো সম্পর্কে তথ্য দেওয়া থাকবে। এতে করে ঝুঁিকপূর্ন এলাকাগুলোর বাসিন্দাগণ বিপদকালীন সহজেই তাদের জন্য নির্ধারিত আশ্রয়কেন্দ্র সমুহে অবস্থান নিতে পারবে।
এদিকে, রাঙামাটির জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশিদ জানিয়েছেন, ২০১৭ সালের ১৩ জুন পাহাড় ধসের দুর্যোগে রাঙ্গামাটিতে ৫ সেনা সদস্যসহ ১২০ জনের প্রাণহানি হয়েছে। স্থানীয়ভাবে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। আমরা রাঙ্গামাটিতে এ ধরনের কোনো দুর্যোগে ব্যাপক ক্ষতিসহ আর কোনো প্রাণহানি চাই না। তাই আগের বছরের অভিজ্ঞতার শিক্ষা নিয়ে দুর্যোগ মোকাবেলায় সবাইকে সচেতন হতে হবে। দূর্যোগের অগ্রিম সতর্কবার্তা পাওয়া মাত্রই রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসন থেকে মাইকিংসহ নির্দেশনা প্রদানের সাথে সাথেই ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বাস করা সব লোকজনকে স্বেচ্ছায় নিরাপদে সরে যেতে হবে। কোনো অবস্থাতেই ঝুঁকিপূর্ণ ভিটায় বাস করা যাবে না। এরই মধ্যে বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। এটা তীব্র আকার ধারনের আশঙ্কা আছে এটা বুঝতে পারার সাথে সাথেই দ্রুত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থান থেকে সরে যেতে হবে। অন্যথায় প্রশাসন উচ্ছেদে বাধ্য হবে। দূর্যোগকে অবহেলা করে নিজের জীবনকে ঝুঁকিতে না রাখার আহবান জানিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, আমরা আর কোন দূর্যোগে কোন প্রাণহাণি দেখতে চাই না। তাই দূর্যোগকালীন সময়ে রাঙ্গামাটির যেকোনা স্থানেই দূর্ঘটনার কোনো সম্ভাবনা দেখে থাকলে সাথে সাথেই সংশ্লিষ্ট্য কাউন্সিলরসহ প্রয়োজনে জেলা প্রশাসন বিষয়টি অবহিত করতে সচেতন নাগরিকদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশিদ।