ভারি বর্ষণে জলাবদ্ধতার শিকার হয়েছে চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন এলাকা

রোববার বিকাল থেকে ভারি বৃষ্টি শুরু হওয়ার পর রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে পানির উচ্চতা।

সোমবার ভোর থেকে পানি নামতে শুরু করলেও কিছু এলাকায় দুপুর পর্যন্ত পানি জমে থাকার কথা জানিয়েছেন বাসিন্দারা।

জলাবদ্ধতার মধ্যে তড়িতাহত হয়ে এক শিশুসহ দুজন মারা যান।

সোমবার বেলা ১২টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ২৩১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে চট্টগ্রামে। আরও দুয়েক দিন ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনার কথা জানাচ্ছে আবহাওয়া অফিস।

রোববার বৃষ্টির পর চকবাজার, ধনির পুল, কাপাসগোলা, বাদুরতলা, কেবি আমান আলী রোড, খাজা রোড, প্রবর্তক মোড়, সিঅ্যান্ডবি কলোনি, হালিশহরের বিভিন্ন এলাকা, সিডিএ আবাসিক এলাকা, আগ্রাবাদ এক্সেস সড়কের একাংশ এবং বাকলিয়ার বিভিন্ন অংশে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।

মধ্য রাতে নগরীর প্রধান সড়ক সিডিএ এভিনিউর ওয়াসা মোড়, জিইসি মোড়, দুই নম্বর গেট, মুরাদপুর ও বহদ্দারহাট মোড় অংশেও জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।

বাদুরতলা এলাকার বাসিন্দা সীমা বড়ুয়া বলেন, রাত ১২টার পর থেকে পানি বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে ঘরে পানি ঢুকে পড়ে।

“পানির পরিমাণ শুধু বাড়ছিল। বাসার সবাই মিলে ঘরে ঢোকা পানি সেচার চেষ্টা করেও কমানো যায়নি। ভোর ৫টার দিকে পানি নামতে শুরু করে।”

ওই এলাকার গৃহিনী ফিরোজা বেগম বলেন, রাতে ঘরে পানি ঢুকে যাওয়ায় সেহেরি জন্য খাবার রান্না করতে পারিনি। চুলা অর্ধেকটা পানির নিচে ছিল।

মধ্যরাতের ভোগান্তির বর্ণনা দেন মোহরা এলাকার বাসিন্দা আবরার রায়হান, তিনি  কাজীর দেউরি এলাকা থেকে মোটর সাইকেলে বাসায় ফিরছিলেন তখন।

রায়হান বলেন,  “ওয়াসা থেকে বহদ্দারহাট পর্যন্ত সড়কের ওপর পানি। ঈদের কেনাকাটার জন্য প্রচুর মানুষ বিভিন্ন মার্কেটে এসেছিল। একদিকে জলাবদ্ধতা অন্যদিকে যানজট। এমনকি আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারের ওপরও ছিল যানজট।”

পানি ও যানজট ঠেলে প্রায় তিন ঘণ্টায় নিজ গন্তব্যে পৌঁছান আবরার রায়হান।

পানি নামতে শুরু করলেও খাজা রোড, হালিশহরের কিছু এলাকা, আগ্রাবাদ এক্সেস সড়কের একাংশ, সিডিএ আবাসিক এলাকা এবং বাদুরতলায় বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত পানি জমেছিল।

হালিশহরের বাসিন্দা আতিক পাটোয়ারি সুমন বলেন, আগ্রাবাদ এক্সেস সড়কের একাংশ বেশ কয়েক ফুট উঁচু করায় ওই অংশে পানি নেই।

“কিন্তু পাশের অন্য অংশে বিশাল বিশাল গর্ত ছিল। পলেস্তারাও উঠে গেছে। সেটা পুকুরে পরিণত হয়েছে। মহেশখালে এখন জোয়ার। এখন যদি বৃষ্টি শুরু হয় তাহলে আশেপাশের সব এলাকা তলিয়ে যাবে।”

পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস কর্মকর্তা শ্রীকান্ত কুমার বসাক বলেন, লঘুচাপটি বর্তমানে বাংলাদেশের কুমিল্লা এবং ভারতের ত্রিপুরার ওপর অবস্থান করছে।

“এটি আরও উত্তর দিকে সরে যাবে। পাশাপাশি উত্তর বঙ্গোপসাগরে মৌসুমী বায়ু সক্রিয় থাকায় সঞ্চলনশীল মেঘমালা সৃষ্টি হচ্ছে অব্যাহতভাবে। একারণে উত্তর বঙ্গোপসাগর এবং সংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকাগুলোতে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।”

শ্রীকান্ত কুমার বসাক বলেন, এসব কারণে আরও দুয়েকদিন বৃষ্টি হতে পারে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, পায়রা ও মংলা সমুদ্র বন্দরকে তিন নম্বর স্থানীয় সর্তক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

এদিকে সোমবার সকাল থেকে নগরীতে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল। নগরীর আকাশ ছিল মেঘলা।

‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ নামে পাঁচ হাজার ৬১৬ কোটি টাকার একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)।

এই প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক সিডিএ’র নির্বাহী প্রকৌশলী মঈন উদ্দিন আহমদ বলেন, “আমরা মাত্র কাজ শুরু করেছি। গতকাল খুব বেশি বৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি জোয়ারও ছিল।

মাটি তোলার পর তা রাস্তার পাশেও রাখা হচ্ছে না। কিন্তু খালের নদী সংলগ্ন অংশে এখনো মাটি অপসারণ শুরু হয়নি। আশাকরি আগামী বর্ষায় সুখবর দিতে পারব।”

Archive Calendar
MonTueWedThuFriSatSun
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031