বর্তমান বিশ্বে সর্বজনীন সমস্যা হলো পরিবেশ দূষণ। কার্বন নিঃস্বরণসহ নানা কারণে পৃথিবী তার যৌলুস হারাচ্ছে এরমধ্য অন্যমত হলো প্লাস্টিক। যা মাটি ও পানির মারাত্বক ক্ষতি করে এবং নষ্ট করে বাস্তুসংস্থান। তাই প্লাটিক একুশ শতকের মাথাব্যথার অন্যতম কারণ। হাজার চেষ্টা করেও বন্ধ করা যাচ্ছে না এই মারণ জিনিসের ব্যবহার।
মানবজাতির মধ্যে সচেতনতা বাড়ার পরির্বতে দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে প্লাস্টিকের ব্যবহার। আর সেটা এতটাই মাত্রা ছাড়িয়েছে যে সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন ‘গ্রেট প্যাসিফিক গারবেজ প্যাচ’। ভারতীয় সংবাদ সংস্থা দ্য ওয়াল এমন খবর প্রকাশ করেছে।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন সমুদ্রে সবচেয়ে বেশি প্লাস্টিক জমা হয়। নদীর পানিতে ভেসে আসে এই সমস্ত প্লাস্টিক। আর সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে বেশি প্লাস্টিক জমা হয়েছে হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ এবং ক্যালিফোর্নিয়ার মাঝের বিস্তৃত অংশে। এই প্লাস্টিকের স্তূপের নামই বিজ্ঞানীরা দিয়েছেন ‘গ্রেট প্যাসিফিক গারবেজ প্যাচ’। যা আয়তনে টেক্সাসের দ্বিগুণ।
পরিসংখ্যান মোতাবেক, আমেরিকার তিনটি বৃহত্তম শহরের মধ্যে অন্যতম হলো টেক্সাস। তবে এখানেই শেষ নয়। ফ্রান্সের তুলনায় এই গারবেজ প্যাচ আয়তন তিনগুণ বড়। এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই আঁতকে উঠে সারা বিশ্ব।
বিজ্ঞানীরা জানান, প্রতি বছর নদী থেকে সাগরে এসে জমা হয় ১.১৫ থেকে ২.৪১ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক। এর মধ্যে প্রায় অর্ধেক পরিমাণ প্লাস্টিকের ঘনত্ব পানির তুলনায় বেশি। ফলে সমুদ্রের বুকে জমা হলেও তা ডুবে যায় না।
বিজ্ঞানীরা আরো জানাচ্ছেন, যেহেতু এ জাতীয় প্লাস্টিক পানিতে ডুবে বা মিশে যায় না, ফলে খোলা জায়গায় সূর্যের তাপে নানা বিক্রিয়ার মাধ্যমে এরা মাইক্রোপ্লাস্টিক জাতীয় জিনিসে ভেঙে যায়। আর প্লাস্টিকে থাকা অণু–পরমাণু একবার ভাঙতে শুরু করলে পরিবেশের জন্য তা হয়ে দাঁড়ায় আরো ক্ষতিকর। সমগ্র সামুদ্রিক ইকোসিস্টেমের জন্য ত্রাস হয়ে যায় এই মাইক্রোপ্লাস্টিক।
সম্প্রতি প্রকাশ করা একটি প্রতিবেদনে বিজ্ঞানীরা জানান, প্যাসিফিক গারবেজ প্যাচের উপর যত প্লাস্টিক ভেসে থাকে তার পরিমাণ প্রায় ১.৮ ট্রিলিয়ন। ওজনে এই বর্জ্য প্রায় ৮০ হাজার টন। এই ওজন প্রায় ৫০০টি জাম্বো জেটের সমান। আর দিনদিন এই নন–ডিগ্রেডেবল প্লাস্টিকের পরিমাণ প্যাসিফিক গারবেজ প্যাচে বেড়েই চলেছে।
সামুদ্রেও এর প্রভাব মারাত্মক। বিভিন্ন জলজ প্রাণী এবং মাছেরা এইসব প্লাস্টিককে নিজেদের খাবার ভেবে ভুল করে। আর দিনের পর দিন খাবার ভেবে প্লাস্টিক খাওয়ার ফলে নানা রকমের রোগের সৃষ্টি হয়েছে। কারণ জমে থাকা জঞ্জালের মধ্যে প্রায় ৮৪ শতাংশ আবর্জনাই থাকে মারাত্মক বিষাক্ত। আর এই বিষ শরীরে প্রবেশ করলে মৃত্যু অবধারিত। ফলে মারা যায় বহু মাছ এবং সামুদ্রিক প্রাণী। এমনকী এই প্লাস্টিকের দৌলতেই বিলুপ্তির পথেও পৌঁছে যায় সামুদ্রিক ইকোসিস্টেমের বেশ কিছু প্রাণী।
বহু বছর ধরে চলা অসংখ্য গবেষণায় দেখা গিয়েছে, প্রায় ৭০০ ধরণের সামুদ্রিক প্রজাতি প্রতিনিয়ত মেরিন ডেবরিস’র (সামুদ্রিক ধ্বংসাবশেষ) সংস্পর্শে আসে। যার মধ্যে ৯২ শতাংশ প্রাণীই এই ক্ষতিকর প্লাস্টিকের সংস্পর্শেই থাকে।
একটি ভয়ঙ্কর দাবানল যেমন যত দিন যায় ততই বাড়তে থাকে। ছড়িয়ে পড়ে জঙ্গলের ভিতর। পুড়ে ছারখার করে দেয় অরণ্যের জীবন। ঠিক ততটাই মর্মান্তিক পরিণতি ঘটাবে এই ‘গ্রেট প্যাসিফিক গারবেজ প্যাচ’এ কথাই বলছেন বিজ্ঞানীরা।