॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ পাহাড়ি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জাতিসমূহের জীবনধারা ও সংস্কৃতি নিয়ে নির্মিত শিক্ষা ও সংস্কৃতিমূলক ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান বিটিভি’র বনফুল ও লোক লোকালয় অনুষ্ঠানের তিন যুগ পূর্তিতে রাঙ্গামাটিতে বর্নাঢ্য আনন্দ আয়োজনের মধ্য দিয়ে উৎযাপন করা হয়েছে।
এই উপলক্ষে সোমবার রাঙ্গামাটি পৌরসভা প্রাঙ্গণ থেকে শহরে একটি বর্ণাঢ্য র্যালি বের করা হয়। রাঙ্গামাটি জেলার সংস্কৃতিক সংগঠন ও শিল্পীদের আয়োজনে ও বিশিষ্ট নাগরিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এবং সাংবাদিকদের সম্মিলিত অংশগ্রহণে বর্ণাঢ্য আনন্দ র্যালিটি শহরের গুরুত্বপুর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে গর্জনতলীস্থ ত্রিপুরা কল্যাণ ফাউন্ডেশন মিলনায়তনে গিয়ে শেষ হয়।
ত্রিপুরা কল্যান ফাউন্ডেশনের সাধারন সম্পাদক ঝিনুক ত্রিপুরার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, রাঙ্গামাটি পৌর মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী।
অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন ও কেক কেটে তিন যুগ পূর্তি অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিকতা শুরু করেন রাঙ্গামাটি পৌর মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী।
এসময় লোক-লোক লোকালয়ের সদস্য সচিব ঝিনুক ত্রিপুরার সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, রাঙ্গামাটি পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক পরিকল্পনা কর্মকর্তা বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রীতি কুমার ত্রিপুরা, দৈনিক গিরিদর্পণ সম্পাদক প্রবীন সাংবাদিক এ কে এম মকছুদ আহমেদ, পৌর প্যানেল মেয়র মোঃ জামাল উদ্দিন, বাংলাদেশ টেলিভিশন উপকেন্দ্র রাঙ্গামাটি প্রধান শরিফুল ইসলাম, বনফুল-লোক লোকালয়ের তিন যুগ পূর্তি অনুষ্ঠানের আহবায়ক তাওফিক হোসেন কবীর।
রাঙ্গামাটি পৌর মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী বলেন, আমাদের দেশের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীগুলোর বৈচিত্র্যময় জীবন সংস্কৃতি, ঐতিহ্যময় জীবনধারা আমাদের জাতীয় সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে অনুপম সংযোজন বিটিভির বনফুল-লোক লোকালয়।
তিনি বলেন, সারাদেশের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীগুলোর বৈচিত্রময় জীবন ও নান্দনিক সংস্কৃতি, ভাষা, ঐতিহ্য যেন হারিয়ে না যায় সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে সাংবাদিক চৌধুরী আতাউর রহমান বিটিভির বনফুল ও লোক লোকালয় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পাহাড়ি জাতি সমূহের সতন্ত্র সংস্কৃতি সংরক্ষণের ধারার সূচনা করেন। আর এর মাধ্যমে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীরা তাদের ঐতিহ্য,সংস্কৃতি দেশ ও বিদেশের পরিমন্ডলে তুলে ধরার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নিজেদের প্রতিভার আতœপ্রকাশ করারও সুযোগ করে দিয়েছেন। যার ধারাবাহিকতা এখনো চলছে। এতে করে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীরা তাদের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি তুলে ধরার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নিজেদের প্রতিভার আতœপ্রকাশ করারও সুযোগ পাচ্ছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) মাধ্যমে পাহাড়ী জনগোষ্ঠীর বৈচিত্রময় জীবন, ঐতিহ্যময় সাংস্কৃতি সংরক্ষণ, বিকাশ ও উদ্যোগ বনফুল-লোক লোকালয়ের তিন যুগ পূর্তি করছে। এই ধারাবাহিকতা আমাদের সবাইকে ধরে রাখতে হবে।
আলোচনা সভায় অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বক্তারা বলেন, বিটিভির সংবাদ এবং অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ৩৬ বছর আগে থেকে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কৃষ্টি-সংস্কৃতি, উৎসব, ঐতিহ্য, বর্ণিল জীবনযাত্রা পর্যটন সম্ভাবনা সম্প্রচারের উদ্যোগ নেয়ায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীগুলোর বৈচিত্রময় জীবন ও নান্দনিক সংস্কৃতি, ভাষা, ঐতিহ্য সুরক্ষা পেয়েছে।
বক্তারা বলেন, আর ১৯৮৪ সালে পূর্ণাঙ্গভাবে প্রোগ্রাম তৈরি করে প্রচার করে বাংলাদেশ টেলিভিশন-প্রথম বহির্দৃশ্য ধারণ করে তৈরি করে পাহাড়ীদের অনুষ্ঠান। এ অনুষ্ঠানটি বাংলাদেশ টেলিভিশন-এ প্রচার হয়েছে বহুবার। তখন বাংলাদেশ টেলিভিশন ছাড়া আর কোন চ্যানেল ছিল না।
আর এই প্রোগ্রামে মারমা, চাকমা, ¤্রাে, বম, ত্রিপুরা, লুসাইসহ প্রায় সবকটি নৃ-গোষ্ঠীর অংশগ্রহন করেছিল। সেই সময় থেকে প্রতিটি অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা, লোকেশন নির্ধারণ, শিল্পী-কলাকুশলী নির্বাচন, গ্রন্থনা, উপস্থাপনা এবং ধারণের বিষয়ে পরিপূর্ণভাবে বনফুল থেকে লোক লোকালয় পর্যন্ত হাটি হাটি পা পা করে ৩৬ বছর পার করেছেন তিনি একজন আলোকিত সাংবাদিক চৌধুরী আতাউর রহমান রানা। আর সেই সময় পাহাড়ে এইসব অনুষ্ঠান করা ছিলো দূরূহ ব্যাপার। তবুও তিনি দিন রাত পরিশ্রম করে সারাদেশের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের বৈচিত্রময় জীবন ও নান্দনিক সংস্কৃতি, ভাষা, ঐতিহ্য যেন হারিয়ে না যায় তার জন্য কাজ করে গেছেন। আর এ লোকলোকালয় এখন তিন যুগ পূরণ করলো। এখনও পর্যন্ত সবার ভালবাসা নিয়ে বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত বনফুল থেকে লোকলোকালয় আছে সবার অন্তর জুড়ে।
পরে বিভিন্ন ক্যাটাাগরিতে ১৭জনকে সম্মাননা প্রদান করেন অতিথিবৃন্দ। সন্মাননা প্রাপ্তরা হলেন, সুরেন্দ্র লাল ত্রিপুরা (মরনোত্তার), প্রয়াত অংথোয়াই চিং চৌধুরী (অনন্ত চৌধুরী) (মরনোত্তার), দীপংকর তালুকদার এম পি, সাহানা দেওয়ান, নিরূপা দেওয়ান, গৌতম দেওয়ান, এ কে এম মকছুদ আহমদ, রঞ্জিত দেওয়ান, শৈলেন দে ( মরনোত্তার), সুরেশ ত্রিপুরা, রণেশ^র বড়–য়া, জীবন রোয়াজা, হুমায়ূন কবীর, প্রদীপ বাহাদুর লালে।