করোনা ভাইরাসে : এপ্রিলেই ‘কাজ হারিয়েছেন ১২ কোটি ভারতীয়’

প্রাণঘাতী নতুন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে ভারতজুড়ে কয়েক সপ্তাহের লকডাউনের কারণে কেবল গত মাসেই দেশটির ১২ কোটির বেশি মানুষ কাজ হারিয়েছেন বলে বেসরকারি খাত নিয়ে কাজ করা একটি থিঙ্ক ট্যাঙ্কের মূল্যায়নে উঠে এসেছে। দিনমজুর ও ক্ষুদ্র ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরতরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। নিদারুণ অভাবে পড়েছেন হকার, রাস্তার পাশের অস্থায়ী দোকানদার, নির্মাণ খাতের শ্রমিক, তাঁতি ও রিকশাচালকরা। সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকোনমির এক মূল্যায়নে এসব উঠে এসেছে বলে এনডিটিভিতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। লকডাউনে কাজ হারানো ভারতীয়দের একজন আবদুল করিম। দারিদ্রের কারণে স্কুল থেকে ঝরে পড়তে বাধ্য হওয়া উত্তরপ্রদেশের এ বাসিন্দা শুরুতে বাইসাইকেল সারানোর মতো ছুটা কাজ করতেন। ছোট ট্রাকে করে দিল্লিতে মাল পরিবহনের কাজ পাওয়ার পর পরিবারকে দারিদ্র্যের কষাঘাত থেকে খানিকটা সরিয়ে আনতেও সক্ষম হয়েছিলেন তিনি। চাকরি, সামান্য আর্থিক নিরাপত্তা তাকে সম্ভাবনাময় ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখাচ্ছিল। করোনাভাইরাস মহামারী ওই স্বপ্নকে দুঃস্বপ্নে পরিণত করে দিয়ে করিমকে আবার বিপাকে ফেলেছে। স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে অবরুদ্ধ অবস্থায় দিনকাটানো এ ভারতীয় লকডাউনের মধ্যে যৎসামান্য যে সঞ্চয় ছিল, তা খরচ করে ফেলেছেন। বেঁচে থাকার তাগিদে এখন খুঁজছেন যে কোনো একটি কাজ। “যখন দিল্লি ফিরে যাবো, তখন সেখানকার চাকরির পরিস্থিতি কেমন থাকবে তা বলতে পারছি না। না খেয়ে তো থাকতে পারবো না, তাই যা পাবো তাই করবো,” বলেছেন তিনি।  মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস ও এর কারণে দেয়া বিধিনিষেধের ফলে বিশ্বের অর্থনীতির যে সঙ্কোচন ঘটবে তাতে প্রায় ৫ কোটি মানুষ চরম দারিদ্র্যের তালিকায় সংযুক্ত হতে পারে বলে বিভিন্ন আন্তর্জতিক সংস্থার মূল্যায়নে আগেই জানানো হয়েছিল। এর মধ্যে ভারতীয়দের সংখ্যাই বেশি থাকবে বলে ধারণা অনেক বিশ্লেষকের। দারিদ্র্যমুক্তির স্লোগান দিয়ে ক্ষমতায় আসা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জন্য এ পরিস্থিতি বড় ধরনের রাজনৈতিক ঝুঁকি তৈরি করতে পারে, বলছেন তারা। “দারিদ্র্য প্রশমনে ভারতের সরকারগুলোর গত কয়েক বছরের চেষ্টা এ কয়েক মাসেই অকার্যকর হয়ে যেতে পারে। ভাইরাসে যত মানুষ মারা যাবে, ক্ষুধায় এর চেয়ে বেশি মৃত্যু হতে পারে,” বলেছেন বহুজাতিক দাতা সংস্থাগুলোকে পরামর্শ দেয়া প্রতিষ্ঠান আইপিই গ্লোবালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অশ্বজিৎ সিং। এনডিটিভিতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাস ভারতে আঘাত হানার আগেই দেশটি এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে শ্লথ প্রবৃদ্ধির পথে অগ্রসর হচ্ছিল; ২৫ মার্চ থেকে দেয়া লকডাউন ওই পরিস্থিতিকে ত্বরান্বিত করেছে। এশিয়ায় ভাইরাস সংক্রমণের হটস্পট ভারতে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এক লাখ ৫৮ হাজারের বেশি মানুষের দেহে কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়েছে বলে জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের হালনাগাদ তথ্য জানাচ্ছে। মোদী জানিয়েছেন, মহামারীর কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি থেকে এশিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিকে টেনে তুলতে তার সরকার ২৬৫ বিলিয়ন ডলার খরচ করবে।  বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারত সরকারের এ প্রণোদনা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। “সরকারের প্রতিক্রিয়াই উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। অসাম্য এখানে এমনিতেই বেশি, মহামারী তা আরও বাড়িয়ে তুলবে,” বলেছেন দিল্লির ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির অর্থনীতির অধ্যাপক ঋতিকা খেরা।

Archive Calendar
Mon Tue Wed Thu Fri Sat Sun
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
2425262728