‘মুজিব বর্ষ’ উপলক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের উদ্যোগে ৪ হাজার ৩শ পাড়াকেন্দ্রে বৃক্ষরোপন কর্মসূচী

॥ লিটন ভট্টাচার্য্য রানা, খাগড়াছড়ি ॥ নির্বিচারে বনভূমি উজাড় ও বৃক্ষনিধন বিরূপ প্রভাব ফেলছে পরিবেশের ওপর। প্রকৃতির ওপর অব্যাহত এ অত্যাচারের ফলে হুমকির মুখে পড়েছে প্রাণ-প্রকৃতি ও জীব-বৈচিত্র্য। পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রাণ-প্রকৃতি ও জীব-বৈচিত্র্য রক্ষায় সীমিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী (মুজিববর্ষ) উপলক্ষে তিন পার্বত্য জেলায় এক লক্ষাধিক গাছের চারা সৃজনের এ কার্যক্রমের আওতায় এরই মধ্যে পার্বত্য তিন জেলার প্রতিটি পাড়াকেন্দ্রে বিভিন্ন ফলদ, বনজ ও ঔষধি গাছের চারা রোপন করা হয়েছে।
সোমবার (২০জুলাই) সকালে খাগড়াছড়ি জেলা সদর উত্তর মহালছড়া পাড়াকেন্দ্র, ৩নং গোলাবাড়ি, ১৯নং ক্লাস্টার, ইউনিসেফ পাড়াকেন্দ্রের মাধ্যমে কিশোরী ও অভিভাবকদের মাঝে ফলজ ও ভেষজ চারা বিতরণ কর্মসূচী করা হয়েছে।
এ সময় ১৯নং ক্লাস্টারের মাঠ সংগঠক চৈতালী চাকমা, জাবারাং কল্যাণ সমিতির স্কুল ফিডিং প্রোগ্রামের ফিল্ড মনিটরিং মনসুর আলম, পাড়াকেন্দ্র পরিচালনা কমিটির সভাপতি অসীমা ত্রিপুরা ও গ্রীন ভয়েস (পরিবেশবাদী যুব সংগঠন) খাগড়াছড়ি পাবর্ত্য জেলা শাখার সভাপতি চারু বিকাশ ত্রিপুরা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রাণ-প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য পুনরুদ্ধার করতে হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দীর্ঘমেয়াদি উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানান, উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক পরিচালিত ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় টেকসই সামাজিক সেবা প্রদান’ প্রকল্পের অধীনে তিন পার্বত্য জেলায় ৪ হাজার ৩০০টি পাড়াকেন্দ্রের মাধ্যমে এ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ৪ হাজার ৩০০টি পাড়াকেন্দ্রের প্রতিটি পাড়াকেন্দ্রে ২৫টি করে মোট ১ লাখ ৭ হাজার ৫০০ গাছের চারা সৃজিত হয়েছে। এর মধ্যে রাঙ্গামাটির ১ হাজার ৬০৭ পাড়াকেন্দ্রে ৪০ হাজার ১৭৫টি, খাগড়াছড়ির ১ হাজার ৫১৮টি পাড়াকেন্দ্রে ৩৭ হাজার ৯৫০টি ও বান্দরবানের ১ হাজার ১৭৫টি পাড়াকেন্দ্রে ২৯ হাজার ৩৭৫টি বিভিন্ন জাতের চারা সৃজন করা হয়। প্রতিটি পাড়াকেন্দ্রের আওতায় জামের চারা দুটি, জাম্বুরা বা বাতাবি লেবুর চারা দুটি, বেলের চারা দুটি, আমলকী তিনটি, নিম তিনটি, হরীতকী তিনটি, বহেরা তিনটি, তেঁতুল তিনটি, অর্জুন দুটিসহ ২৫টি গাছের চারা সৃজন করা হয়েছে।
এরই মধ্যে গাছের চারা রোপণ, রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচর্যা সম্পর্কে তিন পার্বত্য জেলার ২৬টি উপজেলায় পাড়াকর্মী ও মাঠ সংগঠকসহ সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। চারা রোপণের স্থান নির্ধারণসহ এ কাজে সার্বিকভাবে সহায়তা করছেন প্রতিটি পাড়াকেন্দ্রের পরিচালনা কমিটি ও কিশোর-কিশোরী দল। এসব চারা রোপন করা হয় পাড়াকেন্দ্রের নির্দিষ্ট জায়গা ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে। এছাড়া রোপনকৃত গাছের পরিচর্যা করবেন পাড়াকেন্দ্র পরিচালনা কমিটি ও কিশোর-কিশোরী দলের সদস্যরা। গত ১৫ জুলাই সকাল ১০টায় পার্বত্য তিন জেলা রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের ৪ হাজার ৩০০টি পাড়াকেন্দ্রে এসব গাছের চারা সৃজন করা হবে।
মাঠ সংগঠক ও পাড়াকর্মীরা জানান, বিভিন্ন জাতের ফলদ, বনজ ও ঔষধি গাছ রোপণের বিষয়ে তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছিল। কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী এসব গাছের চারা কলাম রোপণের কমপক্ষে এক সপ্তাহ আগে গর্ত তৈরির জন্য বলা হয়। এরই মধ্যে অনেকেই গর্ত খননকাজ ও জৈবসার সংগ্রহ করে বিশেষত মাঠ সংগঠক ও পাড়াকর্মীদের পাড়াকেন্দ্র পরিচালনা কমিটি ও পাড়াকেন্দ্রের কিশোর-কিশোরী দলের সদস্যরা সহযোগিতা করছে। পাড়াকেন্দ্রের আশপাশের এলাকা ও ব্যক্তিমালিকানাধীন বিশেষ স্থানেও চারা কলাম রোপণ করা হয়।
টেকসই সামাজিক সেবা প্রদান প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) ড. প্রকাশ কান্তি চৌধুরী বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রাণ-প্রকৃতি, জীব-বৈচিত্র্য ও পরিবেশ রক্ষায় পাড়াকেন্দ্রের মাধ্যমে ফলদ, বনজ, ওষধি গাছের চারা রোপন করার উদ্যোগ নেয়া হয়। পাড়াকর্মী, জনপ্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্টদের প্রচেষ্টায় তিন পার্বত্য জেলার ৪ হাজার ৩০০টি পাড়াকেন্দ্রে একযোগে এসব চারা কলাম রোপন করা হয়েছে সংশ্লিষ্টরা এরই মধ্যে বাড়তি চারা সৃজনের ইচ্ছাপোষণ করায় আমাদের এ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার চারা সৃজন করা হয়েছে গত ১৫ জুলাই। এটি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আমাদের পাঁচটি উদ্যোগের মধ্যে অন্যতম।
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড চেয়ারম্যান নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা জানান, পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় দিন দিন বৃক্ষ নিধন করা হচ্ছে। যে হারে বৃক্ষ নিধন করা হচ্ছে, সে অনুপাতে রোপন করা হচ্ছে না। তাই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আমরা এ উদ্যোগ গ্রহণ করি। পার্বত্য চট্টগ্রামে সংরক্ষিত বনাঞ্চল মোট আয়তনের এক-চতুর্থাংশ, যা ক্রমে হ্রাস পাচ্ছে। এতে করে হুমকির মুখে পড়ছে এখানকার পরিবেশ ও জীব-বৈচিত্র্য। এখানকার পরিবেশ ও জীব-বৈচিত্র্য রক্ষায় লক্ষাধিক বৃক্ষ সৃজন করে কিছুই হবে না। এ ব্যাপারে বন বিভাগকে বিশেষ ভূমিকা রাখতে হবে। উন্নয়ন বোর্ড মূলত পাড়াকেন্দ্রের আশপাশ এলাকায় এসব চারা কলাম রোপন করছে, যার মধ্যে ওষধি, ফলদ ও বনজ চারাও আছে। এসব চারা কলাম বড় হলে ব্যক্তিগতভাবে নয়, সবাই উপকৃত হবে।

মুক্ত গণমাধ্যম চাই : সকল গণমাধ্যমে এক নীতিমালা, তথাকথিত ওয়েজ বোর্ড বাতিল, নিজস্ব বেতন বোর্ড, বিজ্ঞাপন ও ক্রোড়পত্র নীতিমালা নিয়ন্ত্রণ মুক্ত, প্রয়োজনীয় কাঁচামালের মূল্য কমানো ও মফস্বলের পত্রিকাগুলো সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করে টিকিয়ে রাখতে হবে

Archive Calendar
Mon Tue Wed Thu Fri Sat Sun
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031