॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ ১৯৯৬ সালের ৯ সেপ্টেম্বর রাঙ্গামাটির লংগদু উপজেলার পাকুয়াখালিতে সশস্ত্র সন্ত্রাসী কর্তৃক ৩৫ কাঠুরিয়া গণহত্যা দিবস উপলক্ষে শোক সভা, দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বুধবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকালে রাঙ্গামাটি কাঠ ব্যবসায়ী সমিতির হলরুমে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ রাঙ্গামাটি জেলা শাখার উদ্যোগে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন, বাঘাইছড়ি পৌরসভার সাবেক মেয়র ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির মহা সচিব আলমগীর কবির।
পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ রাঙ্গামাটি জেলা শাখার সভাপতি সাব্বির আহমেদের সভাপতিত্বে সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ রাঙ্গামাটি জেলা শাখার সিনিয়র সহ সভাপতি নাদিরুজ্জামান, রবিউল আলম, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সোলায়মান, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আবু বক্কর ছিদ্দিক, অর্থ সম্পাদক মুহাম্মদ ইব্রাহীম, পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা পরিষদের নেত্রী খোরশেদা আক্তার, ছাত্র পরিষদের নেতা নাজিম আল হাসান, সহ-ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক আবুল বাশার, সহ-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক মোঃ আক্তার হোসেন প্রমুখ। শোক সভা পরিচালনা করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ রাঙ্গামাটি জেলা শাখার দপ্তর সম্পাদক মোঃ হাবিব আজম হাবিব।
২৪ বছর পরও পাকুয়াখালী গণহত্যার বিচার না হওয়ায় ক্ষোভ জানিয়ে শোক সভায় বক্তরা বলেন, ১৯৯৬ সালে ৯ সেপ্টেম্বর রাঙ্গামাটির লংগদু উপজেলার পাকুয়াখালীতে ৩৫ জন কাঠুরিয়াদের তৎকালীন শান্তিবাহিনী মিটিং এর মিথ্যা আশ^াস দিয়ে ডেকে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাসে এই দিনটি একটি নৃশংসতম বর্বর গণহত্যার দিন। তাদের ক্ষত-বিক্ষত, বিকৃত লাশের নির্মম দৃশ্য দেখে সেদিন শোকে ভারী হয়ে ওঠেছিল পরিবেশ। হাত-পা বেঁধে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে, দা-দিয়ে কুপিয়ে এবং বন্দুকের বেয়নেট ও অন্যান্য দেশীয় অস্ত্র দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে নানাভাবে কষ্ট দিয়ে হত্যা করেছিল সেদিন অসহায় ওই মানুষগুলোকে। এই নৃশংসতম গণহত্যার পর তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও আজো সেই তদন্ত রিপোর্ট আলোর মুখতো দেখেনি, ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারদের পুনর্বাসন করা কথা থাকলেও কোন সরকার তাদের খবর রাখে নি।
বক্তারা আরো বলেন, লংগদুর পাকুয়াখালীতে ভয়াবহ নৃশংস হত্যাকান্ডে ক্ষতিগ্রস্থরা তাদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম সদস্যকে হারিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। তাদের সন্তানদের পেটে দুবেলা ভাল আহার জুটে না, তারা শিক্ষা, চিকিৎসাসহ অন্যান্য মৌলিক চাহিদা থেকে এখনো বঞ্চিত রয়েছে।
তাই পাহাড়ে যতদিন অবৈধ অস্ত্র থাকবে, ততদিন এখানে পাহাড়ি বাঙালি কেউ নিরাপদ নয়। পাহাড় থেকে দ্রুত অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারসহ অবিলম্বে সরকার যদি এসব আঞ্চলিক দলের সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর এবং কঠিন ব্যবস্থা গ্রহণ না করে পার্বত্যবাসি আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন সংগঠনটির নেতারা।
লংগদুতে ৩৫কাঠুরিয়া হত্যাকান্ড দিবসে গণকবর
জিয়ারত, শোক র্যালী ও আলোচনা সভা
॥ লংগদু প্রতিনিধি ॥
৯ সেপ্টেম্বর, পার্বত্য এলাকার বাঙালিদের কাছে এদিনটি পাকুয়াখালী ট্রাজেডি তথা ৩৫ কাঠুরিয়া হত্যাকান্ড দিবস।
১৯৯৬ সালের এই দিনে পার্বত্য রাঙ্গামাটির লংগদু ও বাঘাইছড়ি উপজেলার সীমান্তবর্তী পাকুয়াখালী নামক গহীন অরণ্যে তৎকালীন শান্তি বাহিনী তথা জে এস এস এর সশস্ত্র গ্রুপের হাতে প্রাণ হারায় ৩৫ নিরীহ বাঙালি কাঠুরিয়া। সেই থেকে পার্বত্য এলাকায় বাঙালিরা এ দিনটিকে পাকুয়াখালী ট্রাজেডি দিবস হিসেবে পালন করে আসছে।
প্রায় দুইযুগ হয়ে গেলেও এখনও এই হত্যাকান্ডের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। ২৪ বছর পরেও বিচার না পেয়ে হতাশায় নিমজ্জিত নিহতদের পরিবার।
প্রতি বছরের ন্যায় এবারও হত্যাকান্ডের বিচারের দাবিতে দিবসটি পালন করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম বাঙালী নাগরিক পরিষদ ও অংগ-সংগঠন।
বুধবার (৯ সেপ্টেম্বর), লংগদু উপজেলায় নিহত কাঠুরিয়াদের গণকবর জিয়ারত, শোক র্যালী এবং দোয়া ও আলোচনা সভা করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ ।
পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ লংগদু উপজেলা শাখার সভাপতি মোঃ খলিলুর রহমান খান এর সভাপতিত্বে এবং রাঙ্গামাটি জেলার যুগ্ন সাম্পাদক এবিএস মামুন এর পরিচালনায় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ খাগড়াছড়ি জেলার সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ন সাধারণ সাম্পাদক ও খাগড়াছড়ি পৌর কাউন্সিলর ইঞ্জিয়ার আব্দুল মজিদ।
প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখে, পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ খাগড়াছড়ি জেলার সিঃ সহসভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ন সাধারণ সাম্পাদক ও খাগড়াছড়ি পৌর কাউন্সিলর এসএম মাসুম রানা। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, সিনিয়র সহসভাপতি রাঙ্গামাটি জেলা ও বাঘাইছড়ি উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল কাইয়ুম, সহসভাপতি রাঙ্গামাটি জেলার কাজী মোঃ জালোয়া, সাধারণ সম্পাদক খাগড়াছড়ি জোলা ইঞ্জিয়ার মোঃ লোকমান হোসেন, স্বজন হারাদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন, মোঃ রাকিব হোসেন ও ছাত্র নেতা মোঃ আসাদুল্লাহ।
এছাড়াও পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির যুব বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মাসুদ, রাঙ্গামাটি জেলা ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক মোঃ নজরুল ইসলাম সহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দগন উপস্থিত ছিলেন।
বক্তারা বলেন, ৩৫ কাঠুরিয়া নিহত পরিবারকে অনতিবিলম্বে পুনঃবাসন করে তাদের মাসিক রেশন প্রদানের মাধ্য সহযোগিতা করা এবং তাদের সন্তান সন্ততীকে সরকারী চাকুরীতে নিয়োগ দেওয়ার দাবী জানান। বক্তারা আরো বলেন, কাঠুরিয়া হত্যাকারী শান্তিবাহিনী (জেএসএস এর সশস্ত্র ক্যডার) দের দ্রুত বিচারের মুখোমুখী করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানান।
উল্লেখ্যঃ ১৯৯৬ সালের ৭ সেপ্টেম্বর শান্তিবাহিনী লংগদুর ৩৬ জন কাঠুরিয়াকে ব্যবসায়িক লেনদেনের কথা বলে পাকুয়াখালী নামক গহীন অরণ্যে ডেকে নিয়ে যায়। সেখানে কাঠুরিয়াদের তিন দিন আটকে রেখে হাত-পা ও চোখ বেঁধে নির্যাতন চালিয়ে ৯ সেপ্টেম্বর হত্যা করা হয়।
আটক ৩৬ জন কাঠুরিয়ার মধ্যে ইউনুস নামের একজন কাঠুরিয়া পালিয়ে আসতে সক্ষম হয়। সে খবর দিলে ৯ সেপ্টেম্বর পুলিশ ও সেনাবাহিনী পাকুয়াখালীর জঙ্গল হতে ২৮ জন কাঠুরিয়ার ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করে। বাকি ৭ জন কাঠুরিয়ার লাশ পাওয়া যায়নি।