রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন দ্রুততর করার বিষয়ে দুপক্ষই একমত : পররাষ্ট্র সচিব

বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন মেঘনায় দুই দেশের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের দ্বিতীয় সভা শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।

বেলা ১১টা থেকে সাড়ে চার ঘণ্টার এ বৈঠকে বাংলাদেশের ১৫ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্রসচিব শহীদুল হক। আর মিয়ানমারের নেতৃত্বে ছিলেন দেশটির পররাষ্ট্র সচিব মিন্ট থোয়ে।

বৈঠকের পর এক ব্রিফিংয়ে শহীদুল হক বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন দ্রুততর করার বিষয়ে দুপক্ষই একমত।

তাহলে সমস্যা কোথায় জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “আসলে প্রত্যাবাসনের সঙ্গে সব ধরনের সমস্যাই উঠে আসে। আজ সব দিক নিয়েই আলোচনা হয়েছে। বাস্তবায়নের বিভিন্ন দিক নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি।”

বৈঠক ফলপ্রসূ হয়েছে জানিয়ে মিন্ট থোয়ে বলেন, দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় যে চুক্তি হয়েছে, সে অনুযায়ী তারা প্রস্তুতি এগিয়ে নিচ্ছেন। প্রত্যাবাসনের জন্য সচেতনতা বাড়াতে হবে। সে বিষয়টিও বৈঠকে এসেছে।

গতবছর ২৫ অগাস্ট রাখাইনে সেনাবাহিনীর দমন অভিযান শুরুর পর সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা। তাদের কক্সবাজারের কয়েকটি কেন্দ্রে আশ্রয় দিয়ে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সহায়তায় জরুরি মানবিক সহায়তা দিয়ে আসছে বাংলাদেশ সরকার।

রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে গত জানুয়ারিতে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে একটি চুক্তি করেছে মিয়ানমার। সেখানে দুই বছরের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের লক্ষ্য ঠিক করা হলেও এখনও সে প্রক্রিয়া শুরুই করা যায়নি।

প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রথম যে ৮ হাজারের তালিকা দেওয়া হয়েছিল, তার মধ্যে মাত্র ৫০০ জনের পরিচয় যাচাই করে নিশ্চিত হওয়ার কথা জানিয়েছিল মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ।

ওই তালিকা যাচাই করার প্রক্রিয়া নিয়ে বৃহস্পতিবারের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে বলে জানান শহীদুল হক।

তিনি বলেন, “উনাদের ওখানে কী প্রস্তুতি নিয়েছে, আরও কী কী নেওয়ার বিষয় আছে এবং আমাদের তরফ থেকে কী প্রস্তুতি নিয়েছি আমরা সব বিষয়ে আলাপ করেছি।”

বাংলাদেশের দেওয়া আট হাজার রোহিঙ্গার ওই তালিকায় বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে কি না, সেখানে বাংলাদেশের কোনো ভুল ছিল কি না- এ প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, “আমরাও তালিকা ভুল দিইনি, আর উনারাও (মিয়ানমার) ভুল করেননি।

“এটা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, আস্তে আস্তে উনারা ভেরিফাই করে দেখেবেন উনাদের তালিকার সাথে এবং এভাবেই প্রত্যাবাসন কাজ এগিয়ে যায়। দুই পক্ষের টেকনিক্যাল দল এ বিষয়ে কাজ করছে।”

দুই পক্ষের মধ্যে সব বিষয়েই খোলামেলা আলোচনা হয়েছে জানিয়ে শহীদুল হক বলেন, “আলোচনায় অগ্রগতি হচ্ছে। আমি এটুক শুধু বলতে পারি, আলোচনায় সব দিক উঠে এসেছে।”

প্রত্যাবাসন কেন বিলম্বিত হচ্ছে- এ প্রশ্নে তিনি বলেন, “এ বিষয়টি আপনাদের (সাংবাদিক) সামনে বলতে চাচ্ছি না। যে কারণগুলো আছে সেগুলো আমরা দেখছি এবং জানেন যে প্রত্যাবাসন সব সময় জটিল ও দুরূহ ব্যপার। কিন্তু এটা (প্রত্যাবাসন) যে হওয়া প্রয়োজন, সে ব্যাপারে কোনো পক্ষের দ্বিমত নাই।”

প্রত্যাবাসন দ্রুততর করতে যে সমস্যাগুলো রয়েছে, আলোচনার মাধ্যমে সেগুলোর মীমাংসা করা যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

আরেক প্রশ্নের জবাবে শহীদুল হক বলেন, জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের পরবর্তী বৈঠকের তারিখ এখনও চূড়ান্ত হয়নি।

রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায় মিয়ানমারে ফেরার ‘অনুকূল পরিবেশ তৈরি’ হলে তাদের প্রত্যাবাসনে সহযোগিতার জন্য এপ্রিলে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআরের সঙ্গেও একটি সমঝোতা স্মারকে সই করেছে বাংলাদেশ।

ইউএনএইচসিআরের পক্ষ থেকে সে সময় বলা হয়, বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে থাকা শরণার্থীরা যাতে স্বেচ্ছায়, নিরাপদে এবং সম্মানের সঙ্গে নিজেদের দেশে ফিরে যেতে পারে এবং এই প্রত্যাবাসন যাতে আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুসরণ করে হয়, তা নিশ্চিত করতেই একটি ‘ফ্রেমওয়ার্ক’ রয়েছে ওই সমঝোতা স্মারকে।

Archive Calendar
MonTueWedThuFriSatSun
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30