চুক্তি বাস্তবায়িত না হওয়ায় পার্বত্য চট্টগ্রামের সামগ্রিক পরিস্থিতি উদ্বেগজনক ও অত্যন্ত নাজুক—-সন্তু লারমা

॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়িত না হওয়ায় পার্বত্য চট্টগ্রামের সামগ্রিক পরিস্থিতি উদ্বেগজনক ও অত্যন্ত নাজুক। জুম্ম জনগণের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। তাদের আর পেছনে যাওয়ার কোন রাস্তা নেই। ফলশ্রুতিতে পার্বত্য চট্টগ্রামের যে কোন অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতির জন্য সরকারই দায়ী থাকবে বলে হুশিয়ারী উচ্চারণ করলেন জনসংহতি সমিতির সভাপতি ও চুক্তির অন্যতম স্বাক্ষরকারী জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমা।
বুধবার (২৯ নভেম্বর) পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতিরি উদ্যোগে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির দুই দশকপূর্তি উপলক্ষ্যে রাজধানীর সুন্দরবন হোটেলে এক সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক শক্তিপদ ত্রিপুরার সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন, ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য, বিশিষ্ট কলামিষ্ট ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক মেজবাহ কামাল, মানবাধিকার কর্মী নুমান আহমেদ খান, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের অর্থ সম্পাদক এন্ড্রু সলোমার প্রমুখ।
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা আরো বলেন, ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার রাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমাধানের লক্ষ্যে স্বাক্ষরিত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির দুই দশক পূর্ণ হতে চললেও চুক্তির মৌলিক বিষয়সমূহের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ বিষয়ই অবাস্তবায়িত অবস্থায় রয়ে গেছে। অথচ ২০০৯ সালে সরকার গঠনের মাধ্যমে চুক্তির প্রতিটি ধারা অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়ন করা হবে বলে আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছিল। কিন্ত দুঃখের বিষয় হলেও সত্য বিগত ৯ বছর ধরে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন থাকা সত্ত্বেও বর্তমান শেখ হাসিনা সরকার চুক্তির মৌলিক বিষয়সমূহ বাস্তবায়নে কোন কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করেনি।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে নিয়োজিত গোয়েন্দা বাহিনী, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা ক্ষমতাসীন দলের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বিরোধী ও জুম্ম স্বার্থ পরিপন্থী ভূমিকা পালন করে চলেছে। চুক্তিতে সকল প্রকার অস্থায়ী ক্যাম্প প্রত্যাহারের বিধান থাকলেও এখনো চার শতাধিক ক্যাম্প পার্বত্যাঞ্চলে বিদ্যমান রয়েছে। সেনাশাসন চলমান হেতু পার্বত্য চট্টগ্রামে অবাধে যত্রতত্র সেনা অভিযান, তল্লাসী, ধরপাকড়, মারপিট, দমন-পীড়ন এবং বাক স্বাধীনতা ও সভা সমাবেশের উপর হস্তক্ষেপ ইত্যাদি চলছে। এছাড়াও তিন পার্বত্য জেলার সাধারণ প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা, পুলিশ, ভূমি ও ভূমি ব্যবস্থাপনা, বন ও পরিবেশ, পর্যটন, মাধ্যমিক শিক্ষা, উন্নয়ন ইত্যাদি বিষয়গুলো এখনো তিন পার্বত্য জেলা পরিষদে হস্থান্তর করা হয়নি। পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ আইন কার্যকর করা হয়নি। ভূমি বিরোধ নিস্পত্তি, সেটেলার বাঙালিদের পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরে সম্মানজনক পুনর্বাসন, ভারত প্রত্যাগত শরণার্থী ও অভ্যন্তরীণ জুম্ম উদ্বাস্তদের স্ব-স্ব জায়গা-জমি প্রত্যর্পণ পূর্বক যথাযথ পুনর্বাসন করা হয়নি।
লারমা আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি যথাযথ বাস্তবায়নের স্বার্থে চুক্তি-পরিপন্থী ও জুম্ম স্বার্থ বিরোধী যে কোন ষড়যন্ত্র প্রতিরোধ করতে জুম্ম জনগণ আজ দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। তিনি ২০১৬ সালে ঘোষিত দশদফা কর্মসূচির ভিত্তিতে অসহযোগ আন্দোলন অব্যাহতভাবে চালিয়ে যাওয়া; পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বিরোধী ও জুম্ম স্বার্থ পরিপন্থী সকল কার্যক্রম প্রতিরোধ করা এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে বৃহত্তর আন্দোলন সংগঠিত করাÑ এই তিনদফা আন্দোলনের ঘোষণা দেন। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম তথা দেশের বৃহত্তর স্বার্থে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে কার্যকর ভূমিকা রাখার জন্য দেশের গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক ও প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের প্রতিও আহ্বান জানান।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির নির্দিষ্ট নীতি ও আদর্শ রয়েছে। সে নীতি ও আদর্শকে ধারণ করে জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রনাধিকার প্রতিষ্ঠায় নিবিড়ভাবে কাজ করে চলেছে। তিনি আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলনরত পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সদস্যসহ জুম্মদেরকে চাঁদাবাজি, অস্ত্রধারী, সন্ত্রাসী, বিচ্ছিন্নতাবাদী ইত্যাদি সাজানো অভিযোগে অভিযুক্ত করে মিথ্যা মামলা দায়ের, ধরপাকড়, জেলে প্রেরণ, ক্যাম্পে আটক ও নির্যাতন, ঘরবাড়ি তল্লাসী ইত্যাদি নিপীড়ন-নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বিরোধী চক্র যারা পার্বত্য চট্টগ্রামকে অস্থিতিশীল রাখতে চায় তারাই জনসংহতি সমিতির নামে কুৎসা রটায়। তাই উড়ো কথায় কান না দিয়ে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনকে বেগবান করার লক্ষ্যে দেশের আপামর জনগণকে এগিয়ে আসার জন্যও আহ্বান জানান।
তিনি আরো বলেন, জুম্ম জনগণ নিরাপত্তাহীন ও অনিশ্চিত এক চরম বাস্তবতার মুখোমুখী হয়ে কঠিন জীবনযাপনে বাধ্য হচ্ছে। বস্তত পার্বত্য চট্টগ্রামের বিরাজমান সমস্যা রাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমাধানের ক্ষেত্রে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে কোন বিকল্প নেই।

রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে জুলাই বিপ্লবের স্মরণে র‌্যালি ও দোয়া জুলাই এর গণঅভূত্থানে ছাত্র জনতার রক্তদান এবং অসংখ্যজনের পঙ্গুত্ব বরণের মধ্যদিয়ে আমরা নতুন দেশ পেলাম —–প্রফেসর ড. মোঃ আতিয়ার রহমান

Archive Calendar
MonTueWedThuFriSatSun
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031