বাজেটে মধ্যবিত্তের ওপর চাপ বাড়বে: সিপিডি

শুক্রবার বাজেট পরবর্তী পর্যালোচনায় বেসরকারি এ গবেষণা সংস্থার সন্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, “বাজেট বাস্তবায়নের জন্য একটি বাস্তবায়ন কর্মপরিকল্পনা খুব দ্রুততার সাথে অর্থ মন্ত্রণালয় ও পরিকল্পনা কমিশনের কাছ থেকে আসতে হবে।”

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরের জন্য ৪ লাখ ২৬৬ কোটি ‍টাকার বাজেট প্রস্তাব তুলে ধরেছেন, তাতে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে দুই লাখ ৮৭ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা।

ফলে আয় ও ব্যয়ের হিসাবে সামগ্রিক ঘাটতি থাকছে এক লাখ ১২ হাজার ২৭৬ কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের মাধ্যমে এই ঘাটতি পূরণের পরিকল্পনা করেছেন মুহিত।

শুক্রবার ঢাকার একটি হোটেলে সিপিডির বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে দেবপ্রিয় বলেন, রাজস্ব আদায় বাড়াতে যেসব পদ্ধতির কথা বাজেটে এসেছে, তাতে উত্পাদন ব্যয় ও ভোক্তা ব্যয় বাড়বে। সেই সঙ্গে আগামী বছর মূল্যস্ফীতিও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাতে মধ্য ও নিম্ন মধ্যবিত্তের ওপর চাপ বাড়বে।

জাতীয় নির্বাচনের দেড় বছর আগে বড় আকারের এই বাজেটের খরচ মেটাতে প্রায় আড়াই লাখ কোটি টাকা জনগণের কাছ থেকে কর ও শুল্ক হিসেবে আদায়ের পরিকল্পনা করেছেন অর্থমন্ত্রী। এর মধ্যে ৯১ হাজার ২৫৪ কোটি টাকা আসবে মূল্য সংযোজন কর থেকে।

মুহিতের এই পরিকল্পনার সমালোচনা করে দেবপ্রিয় বলেন, “দ্রুত অর্থ আসে- এরকম ক্ষেত্রে বেছে বেছে কর বাড়ানো হয়েছে।”

আর চলতি বছর ১৫ দশমিক ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে দুই লাখ টাকা রাজস্ব আদায়ের পলক্ষ্যমাত্রাই যেখানে পূরণ হয়নি, সেখানে ৩১ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে দুই লাখ ৪৮ হাজার ১৯০ কোটি টাকা রাজস্ব হিসেবে কীভাবে আদায় করা সম্ভব তাও ‘বোধগম্য হয়নি’ সিপিডির কাছে।

বাজেটে যে কাঠামোতে মূল্য সংযোজন কর, সম্পূরক শুল্ক ও রেগুলেটরি ডিউটি আরোপ করার পরিকল্পনা দেওয়া হয়েছে, তাতে আমদানি খাতের চেয়ে অভ্যন্তরীণ বাজারমুখী উৎপাদন ব্যবস্থার ওপর অনেক বেশি চাপ পড়বে বলেও দেবপ্রিয় মনে করছেন।

অন্য বছরের মত এবারও বাজেট প্রস্তাবে তিনভাবে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখা হয়েছে। এগুলো হল- রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগ, বাংলাদেশ অবকাঠামো উন্নয়ন তহবিলে বিনিয়োগ এবং স্বেচ্ছায় ঘোষণা দিয়ে নির্দিষ্ট জরিমানার মাধ্যমে অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করা।

বছরের পর বছর এভাবে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ থাকলে সৎ করদাতারা কেন উৎসাহিত হবেন- সেই প্রশ্ন রাখেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। সরকারকে এ বিষয়ে একটি স্থায়ী সমাধান খোঁজার পরামর্শ দেন তিনি।

বাজেট প্রস্তাবে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করা হলেও তা অর্জন হবে কি না সে বিষয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেন সিপিডি ফেলো।

তিনি বলেন, “এই বাজেটে যে ধরনের রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তি বিনিয়োগ আসার সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছে; সে সম্ভাবনা বাস্তবায়নের জন্য যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, সেগুলো সঙ্গতিপূর্ণ মনে করছি না।”

সিপিডি মনে করছে, প্রবৃদ্ধির কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে হলে বেসরকারি বিনিয়োগের গতি আরও বাড়াতে হবে।

অর্থমন্ত্রী এক লাখ ১২ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা বাজেট ঘাটতি মেটাতে ৫১ হাজার ৯২৪ কোটি টাকা বিদেশি উৎস থেকে পাবেন বলে আশা করেছেন। কিন্তু তার এই পরিকল্পনারও কোনো যৌক্তিক ভিত্তি দেখছেন না দেবপ্রিয়।

তিনি বলেন, ঘাটতির ভারসাম্য মেলানোর জন্যই হয়ত অর্থমন্ত্রী বিদেশি এ অর্থায়নের কথা বলেছেন।

“বাংলাদেশেরে ইতিহাসে একটি অর্থবছরে সর্বোচ্চ বিদেশি অর্থায়ন ব্যবহার করার পরিমাণ হল ২ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার। সেখানে ৭ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার ব্যবহার করা হবে- কোনো শিশুও এটাকে বিশ্বাসযোগ্য মনে করবে না।”

দেবপ্রিয় বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা নয়, যেতে হবে সামাজিক সুরক্ষায় এবং এ খাতে বরাদ্দ আরও বাড়াতে হবে।

তিনি মনে করছেন, শিক্ষায় বরাদ্দ কিছু বাড়লেও স্বাস্থ্যখাত বঞ্চিত দশায় আছে। প্রতিরক্ষায় বরাদ্দ আগের মত থাকলেও কৃষিতে কমে গেছে।

বাজেট প্রস্তাবের কয়েকটি জায়গায় পরিসংখ্যাগত বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগ করেন দেবপ্রিয়। বাজেটে কর্মসংস্থান বাড়ানোর কোনো নির্দিষ্ট পরিকল্পনা না রাখা এবং ব্যাংক খাতে পুনঃঅর্থায়নের জন্য বাজেটে দুই হাজার কোটি টাকা রাখার সমালোচনা করেন তিনি।

অগ্রাধিকার ও বড় প্রকল্পগুলোর অর্থ খরচ করতে না পারায় সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, চলতি অর্থবছরে বাজেটের ২২ শতাংশ বরাদ্দ খরচ করা যায়নি। এবারও ২০ শতাংশ বরাদ্দ ওইসব প্রকল্পেই রাখা হয়েছে।

শুধুমাত্র প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা দিয়ে বাংলাদেশে একটি বাজেট দক্ষভাবে বাস্তবায়ন করা কঠিন মন্তব্য করে দেবপ্রিয় বলেন, এই বাজেটও প্রশাসন দিয়ে ‘সফলভাবে বাস্তবায়ন’ করা সম্ভব হবে তিনি মনে করেন না।

Archive Calendar
MonTueWedThuFriSatSun
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30