রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতালের দিকে একটু নজর দিন -ঃ মোঃ মোস্তফা কামাল ঃ-

-ঃ মোঃ মোস্তফা কামাল ঃ- দাবী দাওয়ার পর্ব শেষ, শেষ হয়েছে অনুরোধের পালা– কোন কিছুতেই কিছু হচ্ছেনা তাই এবার বিনীত নিবেদনই করতে হচ্ছে। জানিনা বিনীত নিবেদন করেও কাজ হবে কিনা তথাপি কথায় আছে নিবেদন করলে কিছু না কিছু হলেও পাওয়া যায় তাই নিবেদন এবং এই নিবেদন অবশ্যই বিণতি নিবেদন কেননা বিনীত নিবেদন ছাড়া নিবেদনের আর কোন কিছু আছে বলে আমার ক্ষুদ্র জ্ঞাণে জানা নেই। তবে এই বিণতি নিবেদনটি আমার নিজের পক্ষ থেকে নয় এই নিবেদন রাঙ্গামাটি বাসীর পক্ষ থেকে।
বিনীত নিবেদনের বিষয়টি বলছিলাম রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে। জেনারেল হাসপাতাল কিংবা আধূনিক হাসপাতাল আবার অনেকের কাছে রাঙ্গামাটি মেডিকেল এইসব নামের মধ্য দিয়ে এই হাসপাতাল সম্পর্কে অনেক উচ্চাশা করা গেলেও হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয় নামের স্বার্থকতা খুজতে গেলে বিরাট ধাক্তা খেতে হবে। রাঙ্গামাটি বাসীর স্বাস্থ্য সেবার সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান ১০০ শয্যার রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসা সুবিধা দেশের সমতল জেলা গুলোর একটি উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের চাইতেও যে পশ্চাদ পদ তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা।
রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার পর থেকেই কখনোই রাঙ্গামাটিবাসীর প্রত্যাশিত স্বাস্থ্য সেবার কাছাকাছি অবস্ধায় যেতে পারেনি। এই হাসপাতালটি চালুর পর থেকেই চিকিৎসক সংকট, যন্ত্রপাতি সংকট, দক্ষ জনবল সংকট সহ বহু সংকটে জর্জরিত। অনেকেই বলে থাকেন রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতাল নিজেই মূমূর্ষ অবস্থায় কিংবা সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছে। কাজেই এই হাসপাতাল থেকে বেশী কিছু আশা করা যায়না।
রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসক সংকটের পাশাপাশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সংকটের বিষযটি ব্যাপক আলোচিত হলেও এই বিষয়ে কারো কোন মাথা ব্যথা নেই। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্তা ব্যক্তিরা রাঙ্গামাটিতে স্বাস্থ্য বিষয়ক বিভিন্ন সভা সেমিনার করার জন্য ছুটে আসলেও রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে তাদের কোন মাথা ব্যথা আছে বলে মনে হয়না। স্বাস্থ্য বিভাগের মাননয়ি মহা পরিচালক সর্বশেষ কবে রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতাল পরিদর্শন করছেন তা খুজতে হলে হাসপাতালের পরিদর্শন খাতার ধুলো বালি গুলো আগে সরাতে হবে। উনারা ঢাকায় বসেই রাঙ্গামাটির স্বাস্থ্য সেবা নিয়ে প্রতিবেদন প্রস্তুত করেন।
রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎকরা আসতে চাননা কেননা এটি পশ্চাদ পদ। এখানে বেসরকারী কোন হাসপাতাল নেই যেখানে হাসপাতালে কর্মকালীন সময় অতিবিাহিত করে প্রাইভেট প্র্যকটিস করা যায়। ফলে চট্টগ্রামে বসে প্রতিদিন বিশেজ্ঞ চিকিৎসক গন যে বাড়তি আয় রোজগার করেন তার সিকি ভাগও এখানে সম্ভব নয়। কাজেই এই হাসপাতালের বিষয়ে সব সময় অনাগ্রহ। তবে ইদানিং এখানে কর্মরত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক গন সপ্তাহে দুই হতে তিনদিন তাদের মূল্যবান সময় ব্যয় করে এখানকার রোগীদের চিকিৎসা প্রদান করছেন। এটি আবার অনেকের কাছে নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভাল হিসাবে অনেক ভাল ।
রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতালে আগত রোগীদের কাছে ইদানিং আতংক জনক সময় হচ্ছে হাসপাতালেরে সরকারী বন্ধের দিন কিংবা দুপুর ২ টার পরের সময় গুলো। হাসপাতাল যে দিন বন্ধ থাকে এবং প্রতিদিন দুপুর ২ টার পর যখন আউট ডোরে রোগী দেখা বন্ধ হয় তখন জরুরী বিভাগে আগত রোগীদের চিকিৎসা সেবা পেতে কি ধরনের দূর্ভোগ পোহাতে হয় সেটি ভুক্তভোগীরাই জানেন। এই সময় ১০০ শয্যার এই হাসপাতালে রোগীদের একমাত্র ভরসা ইমএমও কিংবা ইমার্জেন্সী মেডিকেল অফিসার নামক একজন চিকিৎসক। জরুরী বিভাগে রোগী আনার পর ইমএমও রোগীকে দেখে চিকিৎসা পত্র প্রদান করেন এবং প্রয়োজনে হাসপাতালে ভর্তি করেন।
তবে ইএমসও হিসাবে কর্মরত চিকিৎসকদের মধ্যে একাধিক চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে রোগীদের সাথে ইদানিং খারাপ আচরনের অভিযোগ প্রতিনিয়ত পাওয়া যাচ্ছে। এইসব চিকিৎসকদের আচার আচরন দেখে মাঝে মধ্যে মনে হয় ইনারাই হাসাপাতালের হর্তা কর্তা তাদের দেখভাল করার কেউ নেই কারাই সর্বে সেবা। রোগীদের আতœীয় স্বজন এই সব চিকিৎসকদের কাছে প্রায়শ করুনার পাত্র হিসাবে বিবেচিত হয়। ইএমও সাহেবেরা কোন কারণে রোগীদের উপর অসন্তুষ্ট হলে রোগীদের সরাসরি চট্টগ্রামে রেফার করে দেন। জেনারেল হাসপাতালের এইসব ইএমওদেরমধ্যে কয়েকজনের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ উত্থাপিত হলেও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
বন্ধের দিন কিংবা দুপুর ২ টার পর হাসপাতালে ভর্তিকৃত রোগীদের চিকিৎসার ব্যাপারে কোন ডাক্তার পাওয়া যায়না এই অভিযোগ দীর্ঘদিনের। জরুরী বিভাগে কর্তব্যরত ডাক্তার কে হাজার বার ডেকেও ওয়ার্ডে আনা যায়না। তবে ইদানিং রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতালে গাইনী এবং শিশু ওয়ার্ডে কয়েকজন কর্তব্যপরায়ন চিকিৎসকের সন্ধান মিলেছে যারা আউট ডোরের পরের সময়েও ওয়ার্ডে রাউন্ড দিয়ে রোগীদের চিকিৎসা তদারকি করেন।
সম্প্রতি রাঙ্গামাটি শহরের বনরুপা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির এক নেতার একটা ফেইজ বুক স্ট্যাটাস এ উঠে এসেছে রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতালের কয়েকজন ডাক্তার এবং নার্স এর রোগীর প্রতি চরম বিমাতাসুলভ আচরনের। ব্যবসায়ী এই নেতার একজন নিকটাতœীয়কে রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতালে রাতে আনার পর দায়িত্বরত চিকিৎসকদের চরম অবহেলায় মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়া এবং মৃত আতœীয়ের লাশ হাসপাতাল থেকে আনতে গিয়ে যে বিড়ম্বনা পোহাতে হয়েছে সেই বর্ণনা পড়লে মনে হবে রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতাল আর হাসপাতাল নেই। আর রোগীর মৃত্যু ডাক্তার কিংবা নার্সদের কাছে ছেলে খেলা চাইতেও কম।
ইদানিং রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতালে যারা রোগী হিসাবে গিয়েছেন কিংবা রোগীর আতœীয় স্বজন হিসাবে গেছেন তাদের কাছে রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতালকে এখন ব্যস্ততম কোন ট্রেন স্টেশন মনে হতে পারে। হাসপাতালে রোগীদের যেভাবে রাখা হয়েছে তার সাথে রেল লাইনের প্লাট ফরমে আশ্রিত আশ্রয়হীন লোকজনদের সাথে তূলনা করা যায়। বিশেষ করে মহিলা ওয়ার্ডের রোগীদের দেখলে মনে হতে পারে এটি যেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের চাইতেও ব্যস্ত হাসপাতাল। কোনরুপ পূর্ব পরিকল্পনা ছাড়াই মাস কয়েক আগে জেনারেল হাসপাতালের একটি অংশে উধ্বমূখী সম্প্রসারন কাজ করতে গিয়ে হাসপাতালের মহিলা ও শিমু ওয়ার্ড এই ভাংগনের দেখা দিলে সেই সময় থেকে মহিলা ও শিশু ওয়ার্ডের ৫০ শয্যা বন্ধ করে দেয়া হয়। আর এর পর থেকেই হাসপাতালে রোগীদের আশ্রয় হয় ফ্লোরের উপর। এতদিন হয়ে গেলেও রোগীদের বিকল্প শয্যার বিষয়ে কারো কোন মাথা ব্যথা নেই। বাংলাদেশের অন্য কোথাও এইরুপ পরিস্থিতির সৃষ্ঠি হলে এতদিন কেউ চোখ বন্ধ করে থাকতে পারতো বলে মনে হয়না।
হাসপাতালে রোগীদের শয্যা সংকটের কারনে ভর্তিকৃত রোগীদের যে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তা শুধুমাদ্র ভুক্তভোগীরাই জানেন । তাদের এই দুঃখ দেখে ব্যথিত হওয়ার কেউ আছে বলে মনে হয়না। আর হাসপাতালের চিকিৎসা যন্ত্রপাতির সংকটের কথা এখন আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। তবে আশারকথা হাসপাতালের মধ্যেই সব সময় এখানকার বিভিন্ন বেসরকারী ল্যাবের কমিশন ভুক্ত লোকজন সব সময় থাকে যারা রোগীর প্রয়োজন হলেই রোগীর রক্ত পরীক্ষা, ইসিজি সব কিছু কবরে দেন। আর এক্সরে কিংবা আলটাসোনাগ্রামের প্রয়োজন হলে রোগীদের ডায়গোনস্টিক সেন্টার গুলোতে পাঠিয়ে দেন। অবশ্য এইসব কাজে রোগীদের জরুরী মূহুর্তের কথা বিবেচনা কেরে বাড়তি খরচ করতে হয়। হাসপাতালে দুপুর ২ টার পর কিংবা বন্ধের দিন গুলোতে কোনরুপ রোগীর পরীক্ষা নিরীক্ষা আশা করা যায়না।
রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে উপরের কথা গুলো একজন ভূক্তভোগী হিসাবেই সকলের অভিমত। তবে হাসপাতালের এই চিকিৎসা ব্যব স্থার উত্তরনে স্বাস্থ্য বিভাগ কিংবা স্থানীয় প্রশাসন কারো কোন সক্রিয় চিন্তাভাবনা আছে বলে ভূক্তভোগীদের মনে হয়না। এটি যেন চলে আসছে তো চলতে দাও এটি চলমান প্রক্রিয়া। আর এই প্রক্রিয়ার অতল গহবর থেকে রাঙ্গামাটি বাসী কখন মুক্তি পাবে কে জানে? তাই আবারো নিবেদন একান্ত বিনীত নিবেদন দয়া করে রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতালের দিকে নজর দিন।

রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে জুলাই বিপ্লবের স্মরণে র‌্যালি ও দোয়া জুলাই এর গণঅভূত্থানে ছাত্র জনতার রক্তদান এবং অসংখ্যজনের পঙ্গুত্ব বরণের মধ্যদিয়ে আমরা নতুন দেশ পেলাম —–প্রফেসর ড. মোঃ আতিয়ার রহমান

Archive Calendar
MonTueWedThuFriSatSun
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031