॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ সকল ষড়যন্ত্র ভেদ করে এবং মানুষ ভোট কেন্দ্রে যাবে না, এই কথা মিথ্যা প্রমাণিত করে রাঙ্গামাটি ২৯৯নং সংসদীয় আসনের ২টি পৌরসভা ও ১০টি উপজেলার ২১৩টি কেন্দ্রের ২ লক্ষ ৭১ হাজার ৩৭৩ ভোট পেয়ে বিপুল ভোটে বিজয়ী হলেন রাঙ্গামাটি আওয়ামীলীগের সমর্থিত নৌকার প্রার্থী দীপংকর তালুকদার। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট মনোনীত প্রার্থী ছড়ি প্রতীক নিয়ে অমর কুমার দে পেয়েছেন ৪ হাজার ৯৬৫ ভোট এবং তৃণমুল বিএনপি’র সোনালী আঁশ প্রতীক নিয়ে পেয়েছে ২ হাজার ৬৯৩ ভোট। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট প্রদানের পর রাঙ্গামাটি জেলা রিটানিং অফিসারের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক ও রিটানিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন খান রাত সাড়ে ১০টার দিকে ২টি পৌরসভা ও ১০টি উপজেলার ২১৩টি কেন্দ্রের মধ্যে ২১৩টি কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণা করেন।
এ সময় রাঙ্গামাটি সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোঃ মনির হোসেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শিক্ষা ও আইসিটি নাসরিন সুলতানা, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের হাবিবুর রহমান (হাবিব), ওয়াশিংটন চাকমা, বিভিন্ন সরকারী বেসরকারী প্রতিনিধি কর্মকর্তা নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তা এবং সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন। এদিকে, বাঘাইছড়ি উপজেলার দুই ইউনিয়ন সাজেক ও বঙ্গলতলী ইউনিয়নের দুর্গম ৫টি কেন্দ্রে কোন ভোট পরেনি। ফলাফল শূন্য।
এর মধ্যে সাজেক-১. নিউলংকর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়-০, ২. ভাই বোনছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়-০, ৩. তুইছুই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়-০, ৪. শিয়ালদাহলুই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়-০, বঙ্গলতলী ইউনিয়নের ১. বঙ্গলতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়-০। এছাড়া সাজেকের বাকি ৩টি কেন্দ্র বেটলিং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়-৬ ভোট, কংলাক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়-৩, মাচালং মিলন পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৩ ভোট পড়েছে।
এর আগে রবিবার (৭ জানুয়ারী) রাঙ্গামাটি জেলায় সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশের কড়া নিরাপত্তার মধ্যদিয়ে শান্তিপূর্ণ ও উৎসাহ উদ্দিপনার মধ্যদিয়ে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। সকাল থেকে ভোটারা লাইনে দাঁড়িয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে। রাঙ্গামাটিতে সকাল ৮টা থেকে ৪টা পর্যন্ত রাঙ্গামাটি ২৯৯নং সংসদীয় আসনের ২টি পৌরসভা ও ১০টি উপজেলার ২১৩টি কেন্দ্রে উৎসাহ উদ্দিপনা ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণের মধ্যদিয়ে ভোট গ্রহন শেষ হয়।
পার্বত্য এলাকার এবার উন্নয়নের পক্ষে রায় দিয়েছে এমন মন্তব্য করে সাধারণ মানুষ বলেন, ২০১৮ সালে জয়ের পর থেকে দীর্ঘ ৫ বছরের দীপংকর তালুকদার এক দিনের জন্যও রাঙ্গামাটির মাঠকে ছেড়ে যায়নি। সেই সুবাধে দীপংকর তালুকদারের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে রয়ে গেছে। তাই রাঙ্গামাটি আসনে পাহাড়ী-বাঙ্গালী সকল সম্প্রদায়ের মানুষ দীপংকর তালুকদারকেই বেছে নিয়েছে।
তারা আরো বলেন, পাহাড়ের মানুষ শান্তির পক্ষে সকলেই অবস্থান করছে। এবারের নির্বাচনে ভোটারা পাহাড়ি-বাঙালি বিভেদ, চাঁদাবাজি, অবৈধ অস্ত্র, আঞ্চলিক দলগুলোর মধ্যে খুনোখুনি ও রক্তপাত বন্ধে দীর্ঘদিন ধরে আওয়াজ তুলে আছে। সাধারণ পাহাড়ের সাধারণ পাহাড়ী জনগন মুখ খুলতে না পারলেও তাদের কথা বার্তায় ভোট বিপ্লব ঘটিয়ে অবৈধ অস্ত্রধারী ও চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে ভোট বিপ্লব ঘটিয়েছে।
এবারের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাঙ্গামাটির একটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী রয়েছেন ৩ জন। এর মধ্যে আওয়ামীলীগের প্রার্থী নৌকা প্রতীক নিয়ে বর্তমান এমপি দীপংকর তালুকদার, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট মনোনীত প্রার্থী ছড়ি প্রতীক নিয়ে অমর কুমার দে ও তৃণমূল বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী সোনালি আঁশ প্রতীক নিয়ে মো. মিজানুর রহমান।
রাঙ্গামাটির আসনের মোট ভোটার ৪,৭৪,৪৫৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২,৪৭,৪১৬ ও মহিলা ২,২৭,০৩৬ জন। রাঙ্গামাটির ১০টি উপজেলার ২১৩টি কেন্দ্রের ১ হাজার ১২১টি ভোটকক্ষে ভোট গ্রহন অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে ‘হেলিসর্টি’ কেন্দ্র-১৮টি।
দুর্গম পাহাড়ের এই ১৮টি ভোটকেন্দ্রে হেলিকপ্টারের মাধ্যমে ও দীর্ঘপথ পায়ে হেটে নির্বাচনী সরঞ্জাম ও নির্বাচনকর্মীদের যেতে হয়েছে। আর ১৮টি হেলিসর্টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে বাঘাইছড়িতে ৫টি, বরকল উপজেলায় ২টি, জুরাছড়ি উপজেলায় ৮টি ও বিলাইছড়ি উপজেলায় ৩টি।