মাহমুদুল হাসান সোহাগ
———————
পার্বত্য চট্টগ্রামের সংবাদপত্র প্রকাশের ইতিহাসঃ পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলার প্রথম সাময়িক পত্র “গৈরিকা” প্রকাশিত হয় ১৯৩৬ সালে। ১৯৫৯ সালে রাঙ্গামাটিতে প্রথম ছাপাখানা স্থাপন করেন বাবু বিরাজ মোহন দেওয়ান। ১৯৬৭ সালে উক্ত প্রেস থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রথম মাসিক পত্রিকা “পার্বত্য বাণী” প্রকাশিত হয়। ১৯৭৫ সালে অনিয়মিত সাহিত্য মাসিক হিসেবে “গিরিশিখর” প্রথম বর্ষ; প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয়। ১৯৭৬ সালে ৫ মে বান্দরবান থেকে মাসিক “ইশতেহার” এর প্রথম বর্ষ, প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয়। ১৯৭৮ সালের ২৬ মার্চ পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রথম সাপ্তাহিক “বনভূমি” ১ম সংখ্যা রাঙ্গামাটি থেকে প্রকাশিত হয়। ১৯৭৮ সালে “কাতুকুতু” নামে কাপ্তাই থেকে প্রকাশিত হয় অনিয়মিত সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক বিচিত্রা। ১৯৮০ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামের দ্বিতীয় সাপ্তাহিক পত্রিকা “সমতা” প্রকাশিত হয়। ১৯৮১ সালে খাগড়াছড়ি থেকে সাপ্তাহিক “পার্বতী” প্রকাশিত হয়। ১৯৮১ সালে রাঙ্গামাটি সাধারণ পাঠাগারের ব্যবস্থাপনায় প্রকাশিত হয় সাহিত্য সাংস্কৃতিক বিষয়ক পত্রিকা “অঙ্কুর”। ১৯৮১ সালে চন্দ্রঘোনা থেকে প্রকাশিত হয় “উত্তমশা”। ১৯৮১ সালে রাঙ্গামাটি থেকে প্রকাশিত হয় পার্বত্য চট্টগ্রামের একমাত্র দৈনিক “দৈনিক গিরিদর্পণ।” ১৯৮২ সালে উপজাতীয় সাংস্কৃতিক ইনষ্টিটিউট রাঙ্গামাটি থেকে সাহিত্য সংস্কৃতি বিষয়ক পত্রিকা “গিরিনির্ঝর” প্রকাশিত হয়। ১৯৮২ সালে উপজাতীয় সাংস্কৃতিক ইনষ্টিটিউট রাঙ্গামাটি থেকে প্রকাশিত হয় “উপজাতীয় গবেষণা পত্রিকা”র প্রথম সংখ্যা।
সাপ্তাহিক বনভূমি প্রকাশনা শুরুর কথাঃ এ,কে,এম মকছুদ আহমেদ সাংবাদিকতার সুবাধে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের তৎকালিন নেতা গিয়াস কামাল চৌধুরী, নির্মল সেন, রিয়াজ উদ্দীন আহম্মদ ও কামাল লোহানীর সাথে পরিচিত হন। ১৯৭৩ সালে শীর্ষস্থানীয় সাংবাদিকরা বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতির এক সম্মেলনে রাঙ্গামাটি সফরের ফলে তাদের আরো নিকটতম হন মকছুদ আহমেদ। ১৯৭৬ সালে উক্ত চারজন শীর্ষ সাংবাদিক নেতা চট্টগ্রামে এসে মকছুদ আহমেদকে ডেকে পাঠিয়ে রাঙ্গামাটি থেকে দৈনিক পত্রিকা প্রকাশের জন্য বলেন। মকছুদ আহমেদ বলেন, “দৈনিক তো দূরের কথা, সাপ্তাহিক পত্রিকাও প্রকাশ করা যাবে না।” প্রায় সারা রাত কথা-বার্তার ফাঁকে-ফাঁকে, তর্ক-বিতর্কের পর ওয়াপদা রেষ্ট হাউসে ভোর রাতের দিকে সিদ্ধান্ত হয় মকছুদ আহমেদ একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশ করবে। নাম নিয়ে চিন্তা ভাবনা শুরু হল। গিয়াস কামাল চৌধুরী বললেন “বনভূমি।” এতে নির্মল সেন, কামাল লোহানী ও রিয়াজ উদ্দীন আহমেদও সমর্থন করলেন। ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশের ৫৫টি দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকার মধ্যে “সাপ্তাহিক বনভূমি” ঘোষণা পত্রের জন্য তৎকালিন তথ্য মন্ত্রনালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত শহীদ জিয়াউর রহমানের অনুমতি দেওয়ার পর যথারীতি ঘোষণা পত্র দিলেন। পত্রিকা প্রকাশের পূর্ব মুহুর্তে তৎকালিন পার্বত্য চট্টগ্রাম এর জেলা প্রশাসক আলী হায়দার খান তাঁর অফিসে ডেকে দেখালেন যে, সেনা গোয়েন্দার ক্লিয়ারেন্স ছাড়া অনুমতি দেওয়া হয়েছে বিধায় পত্রিকা প্রকাশ করা যাবে না। বন্ধ ফাইলে সিল করে ভারাক্রান্ত মনে মকছুদ আহমেদ চলে এলেন। ১৯৭৬ সালে দীঘিনালা দশবন বৌদ্ধ রাজ বিহারে বোধি বৃক্ষের চারা রোপন উপলক্ষে একটি বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করেন মকছুদ আহমেদ। ঐ সময় শ্রদ্ধেয় বন ভান্তে উক্ত বিহারের অধ্যক্ষ ছিলেন। বৌদ্ধ বৃক্ষের চারা রোপন অনুষ্ঠানের পর সাপ্তাহিক বনভূমির প্রথম বিশেষ সংখ্যা তিন পার্বত্য জেলায় যথেষ্ট সাড়া জাগিয়েছিল। ১৯৭৮ সালে চট্টগ্রামে কর্মরত দু’জন সরকারী কর্মকর্তা- খোন্দকার বদরুল হাসান ও ফারুক আসরাফের প্রচেষ্টায় শহীদ জিয়াউর রহমানের মৌখিক নির্দেশে ২৬শে মার্চ সাপ্তাহিক বনভূমির প্রথম সংখ্যা প্রকাশের মাধ্যমে অবিভক্ত পার্বত্য চট্টগ্রামের সর্বপ্রথম ও একমাত্র মুখপত্র সাপ্তাহিক বনভূমি প্রকাশিত হয়। এর মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে সংবাদপত্র এবং সাংবাদিকতার নতুন ইতিহাসের সূচনা হয়।
সাপ্তাহিক বনভূমি প্রকাশের দিন, প্রেস, মূল্যঃ পার্বত্য চট্টগ্রামের বিচিত্র সংবাদ, তথ্য ও রচনা সম্ভারে পরিপূর্ণ হয়ে প্রতি রবিবার পত্রিকাটি প্রকাশিত হয়। সাপ্তাহিক বনভূমি প্রথম যখন প্রকাশিত হয় তখন পার্বত্য অঞ্চলে নিজস্ব কোন মুখপত্র ছিলনা। অর্থাৎ অবিভক্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে কোনরূপ সংবাদপত্র প্রকাশিত হত না। পরবর্তীতে বনভূমির পথ অনুসরণ করে এ অঞ্চল থেকে নিয়মিত পত্রিকা প্রকাশিত হচ্ছে। সাপ্তাহিক বনভূমি, প্রথম সংখ্যার মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছিল ৫০ পয়সা এবং ছাপা হয়েছিল ডিলাক্স প্রিন্টিং প্রেস থেকে। এরপর পত্রিকার মূল্য ও প্রেস পরিবর্তন হয়।
সাপ্তাহিক বনভূমির পৃষ্ঠপোষক ও সম্পাদনা পরিষদঃ সাপ্তাহিক বনভূমির প্রথম সংখ্যায় পত্রিকাটির পৃষ্ঠপোষক হিসেবে মং রাজা মংপ্রু সাইন (প্রয়াত), বোমাং রাজা সোয়ে প্রু (প্রয়াত) এবং চাকমা রাজা দেবাশীষ রায়ের নাম ছিল। সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি জ্ঞানেন্দু বিকাশ চাকমা, সম্পাদক এ,কে,এম মকছুদ আহমেদ এবং সদস্য-সুগত চাকমা, শিখা তালুকদার ও সুনীল কান্তি দে। দ্বিতীয় সংখ্যা থেকে কেবলমাত্র সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি ও সম্পাদকের নাম ছাপা হতে থাকে। ৫ম বর্ষে জ্ঞানেন্দু বিকাশ চাকমার খোলা চিঠি থেকে জানা যায় সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি থেকে তাঁর নাম বাদ দেয়ার জন্য তিনি অনুরোধ করেছেন। সে সংখ্যা থেকে কেবলমাত্র সম্পাদকের নাম ছাপা হচ্ছে। সাপ্তাহিক বনভূমির মুদ্রাকর, প্রকাশক, সম্পাদক ও স্বত্ত্বাধিকারী এ,কে, এম মকছুদ আহমদে।
শুভেচ্ছা বাণী পাঠিয়েছিলেন যাঁরাঃ প্রথম সংখ্যায় শুভেচ্ছা বাণীতে তৎকালিন মংচীফ রাজা মং প্রু সাইন লিখেছেন, “পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সাপ্তাহিক বনভূমি প্রকাশিত হতে যাচ্ছে শুনে আমি আনন্দিত। আমি এই পত্রিকাকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। পত্রিকা ছাড়া জনগনের সাথে পরিচিত হওয়া যায়না। দৈনন্দিন জীবনে পত্রিকার গুনাগুন অতুলনীয়।” চাকমা চীফ দেবাশীষ রায় তাঁর অভিনন্দনে বলেন, এই জেলায় একটি পত্রিকা প্রকাশের প্রয়োজনীয়তা দীর্ঘ দিন যাবত অনুভূত হয়ে আসছে, এই পত্রিকা প্রকাশে যাঁরা সাহায্য সহযোগিতা করেছেন, তাঁদের সাফল্য কামনা করছি।” পার্বত্য চট্টগ্রামের তখনকার জেলা প্রশাসক আলী হায়দার খান তাঁর বাণীতে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, “একটি স্বাধীন দেশে সৎ সাহসী সাংবাদিকতার প্রয়োজন অপরিসীম। পার্বত্য চট্টগ্রামে পত্রিকাকারে বনভূমি প্রকাশকে সর্বপ্রথম স্বাগত জানাই।” বনভূমি প্রথম বর্ষ, দ্বিতীয় সংখ্যা (৯ এপ্রিল ১৯৭৮) তৎকালিন বোমাং চীফ মং সোয়ে প্রু চৌধুরী লিখেছেন, “গিরিসংকুল পরিবেষ্টিত এই জেলার সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক এবং জেলার বাস্তব চিত্র রূপায়নে যথাযথ ভূমিকা পালন করতে বনভূমি সর্বাধিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে আমি মনে করি।”
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়নে সাপ্তাহিক বনভূমির অবদানঃ পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়নে সাপ্তাহিক বনভূমির অবদান অপরিসীম। সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে সাপ্তাহিক বনভূমি স্থানীয় যে সকল সমস্যা বনভূমিতে আলোচিত হওয়ায় কর্তৃপক্ষের অনুকূল্য লাভ করেছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলঃ-রাঙ্গামাটি বেতার কেন্দ্র স্থাপন, শহর বিদুৎতায়ন, বান্দরবান শহর রক্ষা প্রকল্প, বরকলে পানি সরবারহ, মারিশ্যা বিদুত্তায়ন, বান্দরবান জেলা ঘোষণা, জেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র স্থাপন, পানীয় জল সরবারহের জন্য রিং টিউবওয়েল স্থাপন ইত্যাদি। বনভূমিতে প্রকাশিত মোট সংবাদের পঁচানব্বই শতাংশ সংবাদ পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলা উন্নয়ন তৎপরতা, অভাব-অভিযোগ, সংবাদ কলাম গুরুত্ব লাভ করে।
বার্মায় রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর অত্যাচারের কাহিনী প্রকাশে সাপ্তাহিক বনভূমিঃ ১৯৭৮ সালের ৩০ এপ্রিলে সাপ্তাহিক বনভূমি চতুর্থ সংখ্যার প্রথম পৃষ্ঠায় প্রকাশিত হয় এ,কে,এম মকছুদ আহমেদের বিশেষ সংবাদ ফিচার, “৭০ হাজার বর্মি মুসলমানদের বাংলাদেশে আশ্রয়, লক্ষাধিক উদ্বাস্তুর জঙ্গলে অবস্থান।” বার্মার (বর্তমান নাম মায়ানমার) স্থানীয় আদিবাসী ও সেনাবাহিনী কর্তৃক হাজার হাজার রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর নির্যাতনের কাহিনী নিয়ে বাংলাদেশে বনভূমিতে প্রথম সংবাদ প্রকাশ করেন। সংবাদটি প্রকাশের মাসখানেক পূর্বে এ অত্যাচার শুরু হয় এবং হাজার হাজার বর্মী মুসলমান বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণ করেন। লেখক বার্মা সীমান্ত পরিদর্শন করে এই ফিচারটি তৈরী করেন। প্রতিবেদনে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠিকে রক্ষা করার জন্য বিশ্ববাসীর বিবেক, আর্ন্তজাতিক রেড ক্রস সংস্থা এবং লীগ অব রেড ক্রসকে এগিয়ে আসার আবেদন জানানো হয়। ফিচারটির তিনটি উপ- শিরোনাম ছিলঃ (ক) সরকারের গভীর উদ্বেগ, (খ) বর্মীয় রাষ্ট্রদূত নিরব এবং (গ) রেড ক্রিসেন্টের সাহায্য। প্রতিবেদনটিতে তিনটি ছবিও মুদ্রিত হয়। দু’জন ধর্ষিত রমনী এবং বেয়নেট চার্জে আহত শরনার্থীদের ছবি। পরবর্তী সংখ্যা বনভূমিতে (৭ মে ১৯৭৮) প্রকাশিত হয় এ.কে.এম মকছুদ আহমেদের একটি বিশেষ নিবন্ধ, “বিশ্ব মানবতা ঘুমিয়ে আছে কি?” এ নিবন্ধে রোহিঙ্গা মুসলমানদের প্রতি অত্যাচার প্রতিরোধের জন্য বিশ্ব বিবেকের সহায়তা শীর্ষক সম্পাদকীয় নিবন্ধে বলা হয়, “বিশ্ব মানবতার কাছে আবেদন থাকবে। এই এলাকার (আরকান) শান্তি স্থিতিশীলতা বজায় রাখার স্বার্থে এ অমানবিক কর্ম থেকে বর্মি সরকারকে বিরত রাখার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।” দশম সংখ্যায় প্রকাশিত হয় সম্পাদক এ,কে,এম মকছুদ আহমেদের একটি বিশেষ নিবন্ধ। এ নিবন্ধে বিদেশী সাংবাদিকদের কাছে রোহিঙ্গা মুসলমানদের অত্যাচারের বিবরণ প্রকাশিত হয়। সে সময় হাজার হাজার রোহিঙ্গা শরনার্থী আশ্রয় গ্রহণ করে। বার্মা সরকারের এই অমানবিক কার্যকলাপের প্রতিবাদে মুখর সাপ্তাহিক বনভূমি সহজে জনপ্রিয়তা অর্জন করতে সক্ষম হয়। ফলে, প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে এর প্রচার সংখ্যা বেড়ে যায়। বর্মি শরনার্থীদের আন্তরিক সমর্থন জানানোর মাধ্যমে প্রথম বর্ষেই বনভূমি সুধী সমাজের দৃষ্টি আকর্ষন করে।
সাপ্তাহিক বনভূমি ও পার্বত্য চট্টগ্রামের সাহিত্য-সংস্কৃতিঃ সাপ্তাহিক বনভূমি প্রকাশের পর পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের দৈনন্দিন খবরা- খবরের সাথে যে হারে গল্প, কবিতা, গান ও প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে তা একটি বৈপ্লবিক ঘটনা। নিঃসন্দেহে বলা যায় সংবাদ পরিবেশন মুখ্য উদ্দেশ্য হলেও দীর্ঘ কয়েক পৃষ্ঠা জুড়ে থাকত সাহিত্য বিভাগ। প্রথম বর্ষ থেকেই বনভূমিতে নবীন-প্রবীণদের লেখা প্রকাশিত হয়ে থাকে। পেশাগত প্রয়োজনে গড়ে তোলেন একদল তরুণকে। যাদের কেউ হয়েছেন সাংবাদিক কেউ বা সাহিত্যিক। পার্বত্য সাহিত্য-সংস্কৃতি ও উপজাতীয় সাহিত্য-সংস্কৃতি বিকাশে বনভূমির ভূমিকা অপরিসীম। সাহিত্য সাংস্কৃতির ক্ষেত্রে বনভূমির দৃষ্টিভঙ্গি ছিল উদার। বনভূমির মাধ্যমে অপরিচিত লেখক, কবি পরবর্তিতে খ্যাতি অর্জন করেছে। সাপ্তাহিক বনভূমিতে প্রকাশিত গল্প-কবিতা ভারতীয় পত্রিকায়ও পূণঃমুদ্রণ করা হয়েছে। পার্বত্য সাহিত্য-সংস্কৃতি বিকাশে বনভূমির অবদানের কথা অস্বীকার করার উপায় নেই।
লেখক-সাহিত্যিক তৈরীতে সাপ্তাহিক বনভূমিঃ সাপ্তাহিক বনভূমিতে লিখে কবি, সাহিত্যিক, লেখক, সাংবাদিকসহ সাহিত্য- সংস্কৃতি জগতে উচ্চাসনে অধিষ্ঠিত হয়েছেন অনেকেই। প্রখ্যাত লেখক ও গবেষক আতিকুর রহমানের লেখালেখির ভিত্তি স্থাপিত হয় বনভূমি পত্রিকার মাধ্যমে। লেখক দম্পতি মংছেন চিং রাখাইন ও শোভা ত্রিপুরা লেখক- সাহিত্যিক হিসেবে জাতীয়ভাবে স্বীকৃতি লাভ করেছেন। তাদের লেখক হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পিছনে সাপ্তাহিক বনভূমির অবদান অপরিসীম। লংগদু উপজেলার পথিকৃৎ সাংবাদিক মোঃ এখলাস মিঞা খান সাপ্তাহিক বনভূমির মাধ্যমে সাংবাদিক হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। সাপ্তাহিক বনভূমি বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রামে কত লেখক, কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক তৈরী করেছে তা লিখে ব্যাখ্যা করা সম্ভব হবে না। অনেকের লেখার সূচনা সাপ্তাহিক বনভূমির মাধ্যমে। বনভূমি প্রকাশনা শুরুর পূর্বেই যাদের হাতেখড়ি হয়েছিল তাদের প্রতিষ্ঠিত করেছে এই পত্রিকা। ১৯৭৮ সালের ২৬ শে মার্চ অবিভক্ত পার্বত্য চট্টগ্রামে সর্বপ্রথম এ,কে,এম মকছুদ আহমেদের নিরলস প্রচেষ্টায় সাপ্তাহিক বনভূমির ব্যাপক জনপ্রিয়তার পাশাপাশি এ অঞ্চলের কবি, সাহিত্যিক, সাংস্কৃতিক কর্মী, বুদ্ধিজীবি ও সাংবাদিক গড়ার সুতিকাগারে পরিণত হয় পত্রিকাটি।
বাধা ডিঙ্গিয়ে বনভূমির এগিয়ে চলাঃ সাপ্তাহিক বনভূমির প্রথম সংখ্যার প্রথম সংবাদের শিরোনাম ছিল, “আজ স্বাধীনতা দিবস।” ঐ সংখ্যায় সম্পাদকীয় নিবন্ধ লেখা হয় স্বাধীনতার তাৎপর্য সম্পর্কে। প্রথম সংখ্যায় তিনটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। প্রবন্ধগুলো হলো অমিতাভ চাকমার, “উপজাতীয় সাংস্কৃতিক সংরক্ষণ ও উন্নয়ন প্রসঙ্গে।” জ্ঞানেন্দু বিকাশ চাকমার, “স্বাধীন বাংলাদেশ অভ্যূদয়ের পটভূমি” এবং দীপংকর শ্রীজ্ঞান চাকমার, “পার্বত্য চট্টগ্রাম সাহিত্য অঙ্গন।” রাঙ্গামাটি বা পার্বত্য অঞ্চল থেকে পত্রিকা প্রকাশের প্রধান বাধা ছিল স্থানীয়ভাবে উপযুক্ত প্রেসের অভাব। চট্টগ্রাম থেকে ছাপাতে গেলেও মেটার পাঠানো, কম্পোজ করা, ছাপানো, বিলি বন্টন এবং রাঙ্গামাটিতে অফিসের অবস্থান বজায় রাখা ইত্যাদি অত্যান্ত কঠিন কাজ। এ কাজে মকছুদ আহমেদ চট্টগ্রামে প্রেস বসালেন। যা অতিরিক্ত ধৈর্য ও খাটুনির বিষয়। সেই সাথে জাতীয় সংবাদপত্রে রিপোর্ট ধারাও অব্যাহত রাখলেন। পার্বত্য চট্টগ্রামের সাংবাদিকতা কখনো সহজ সাধ্য ছিলনা। মফস্বল সংবাদদাতা হওয়া মানে বেগার খাটুনি ও অসীম ধৈর্য। আর পার্বত্য অঞ্চলের সাংবাদিকতা তো অত্যন্ত কঠিন। সর্বত্র ডাক ও টেলিগ্রামের ব্যবস্থা ছিলনা। ঘটনা-দুর্ঘটনা জানতে হলে দূর্গম অঞ্চলে হাটা-চলা ছিল অত্যন্ত কষ্টকর। এই সব প্রতিকূলতা যার-তার পক্ষে সহ্য করা সম্ভব ছিল না। সন্ত্রাসীদের হুমকি, উপর মহলের রক্ত চক্ষু উপেক্ষা করে বনভূমি সত্য প্রকাশে সর্বদা ছিল নির্ভীক। সংবাদপত্র প্রকাশনার সাথে জড়িত ব্যক্তিরাই এই কঠিন বাস্তবতা উপলদ্ধি করতে পারবেন।
বান্দরবান জেলা হিসেবে স্বীকৃতি ও সাপ্তাহিক বনভূমিঃ ১৯৮১ সালে বান্দরবান ও লামা মহকুমাকে দেশের ২১তম জেলা হিসেবে ঘোষণা করে। এর আগে জেলা সদর ছিল রাঙ্গামাটিতে। সরকারী কর্মচারীদের বেতনসহ নানা কাজে চট্টগ্রাম হয়ে রাঙ্গামাটিতে যেতে হতো। অর্থ ও সময়ের অপচয় দুটিই ছিল অসহ্যনীয়। বান্দরবানকে জেলা ঘোষণার প্রয়োজনীয়তা, সমস্যা-সম্ভাবনা ইত্যাদির উপর নানা লেখা বনভূমিতে গুরুত্ব সহকারে প্রকাশিত হতে থাকে। এ ব্যাপারে তৎকালীন মহকুমা প্রশাসক আব্দুর রউফ নেপথ্যে ভূমিকা রাখেন। তিনি মনে প্রাণে কামনা করেছিলেন বান্দরবান একটি স্বতন্ত্র জেলা হউক। বান্দরবান জেলা হিসেবে স্বীকৃতি লাভের ক্ষেত্রে সাপ্তাহিক বনভূমির বিশেষ ভূমিকা ছিল।
পার্বত্য চট্টগ্রামে উচ্চ শিক্ষা বিকাশের সংগ্রামে সাপ্তাহিক বনভূমিঃ পার্বত্য চট্টগ্রামের সর্বপ্রথম সংবাদপত্র “সাপ্তাহিক বনভূমি।” পার্বত্য চট্টগ্রামের শিক্ষা, সাহিত্য-সংস্কৃতি, শান্তি প্রতিষ্ঠা, অবকাঠামো উন্নয়ন ইত্যাদিসহ প্রায় সকল ক্ষেত্রে জনমত সৃষ্টি ও কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণে পত্রিকাটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সাপ্তাহিক বনভূমি অগ্রণী ভূমিকায় ছিল। জনমত সৃষ্টি ও সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য বনভূমি পাতায় অনেক লেখা প্রকাশিত হয়েছে। দুই যুগেরও আগে সাপ্তাহিক বনভূমিতে প্রকাশিত সম্পাদকীয় ও প্রতিবেদন বর্তমানে অনেকাংশেই বাস্তবে রূপ লাভ করেছে। সাপ্তাহিক বনভূমির প্রকাশিত অসংখ্য সংখ্যার মধ্যে অল্প কিছু সংখ্যা ব্যাক্তিগত সংগ্রহে আছে। এসব পত্রিকায় উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়ে কয়েকটি সম্পাদকীয় ও প্রতিবেদন আলোচনা করা হয়েছে।
সাপ্তাহিক বনভূমি, ১৩-১৯ জুন ১৯৯৯ সংখ্যায়, “পার্বত্য চট্টগ্রামে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন প্রসঙ্গে” শিরোনামে সম্পাদকীয় ছাপা হয়। সম্পাদকীয়তে পার্বত্য চট্টগ্রামের গণমানুষের দাবী তুলে ধরা হয়। বলা হয়, “সত্যিকার অর্থে তিন পার্বত্য জেলায় তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রয়োজন। রাঙ্গামাটিতে বিশ্ববিদ্যালয়, বান্দরবানে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ও খাগড?াছড?িতে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য দীর্ঘদিন যাবত দাবী করা হচ্ছিল।
অনেক দেরিতে হলেও সরকারের উদ্যোগ অত্যন্ত বাস্তবধর্মী। তিন পার্বত্য জেলায় তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় অত্যন্ত জরুরী ভিত্তিতে স্থাপনের কাজ শুরু করা দরকার। তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হলে তিন পার্বত্য জেলার গরীব ও মেধাবী ছাত্রছাত্রীরা উচ্চ শিক্ষা লাভে সক্ষম হবে।”
সাপ্তাহিক বনভূমি, ১৫-২১ এপ্রিল ২০০২ সংখ্যায় রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় পুনঃস্থাপনের জন্য সম্পাদকীয় লেখা হয়। সম্পাদকীয় এর শিরোনাম ছিল, “অবিলম্বে রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় পুনঃস্থাপন শিক্ষক সমাজের দাবী।” সম্পাদকীয়তে উল্লেখ করা হয়, পার্বত্য জেলায় বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ স্থাপনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। কিন্তু একটি সংগঠনের বাধার ফলে উক্ত প্রকল্প বাতিল করা হয়। সাপ্তাহিক বনভূমির সম্পাদকীয?তে জরুরী ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠানগুলো স্থাপনের জোর দাবী জানানো হয়।
উক্ত সংখ্যায় “অবিলম্বে বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জোর দাবী জানিয়েছে রাঙ্গামাটির শিক্ষক সমাজ” নামে একটি বিবৃতি ছাপা হয়েছে। বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের দাবী জানিয়ে জেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানগণ বিবৃতি প্রদান করেন।
সাপ্তাহিক বনভূমি, ২১-২৭ জুলাই ২০০৩ সংখ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ ও শিল্প কারখানা স্থাপনের জন্য সম্পাদকীয় প্রকাশিত হয়। সম্পাদকীয় শিরোনাম ছিল, “রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, তিন জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজসহ শিল্প কারখানা স্থাপন জরুরী।” সম্পাদকীয? এর আংশিক তুলে ধরা হলো, “অনুন্নত পার্বত্য অঞ্চলে উচ্চ শিক্ষার জন্য এযাবত কোন বিশ্ববিদ্যালয়, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ বা মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়নি। এ অঞ্চলের অধিকাংশ মানুষই দারিদ্র সীমার নীচে বাস করে। শিক্ষার পশ্চাৎপদতা বিবেচনা করে সরকার একটি বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। যা অত্যন্ত প্রশংসনীয় এবং যুগোপযোগী পদক্ষেপ হিসাবে এ অঞ্চলের সকল স্তরের অধিবাসী মত ব্যক্ত করেছেন এবং স্বাগত জানিয়েছেন।
কিন্তু বর্তমানে উক্ত বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের কাজটি বাতিল করায় পার্বত্য অঞ্চলের সকল স্তরের মানুষ স্তম্ভিত ও হতবাক। এ সিদ্ধান্ত বাতিল করে অবিলম্বে উক্ত বিশ্ববিদ্যালয় পুনঃস্থাপন করে পার্বত্য এলাকাবাসীর উচ্চ শিক্ষার পথ সুগম করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর নিকট জোর দাবী জানান হয়েছে।”
সম্পাদকীয়তে আরো উল্লেখ করা হয়েছে যে, একটি সংগঠনের দাবীর কারনে রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন কার্যক্রম বাতিল করা হয়েছে। বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের বিষয়টি পুনরায় বিবেচনার জন্য সরকারের নিকট জোর দাবী জানানো হয়।
পার্বত্য চট্টগ্রামের উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে গণমানুষের জাগরণ এবং সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণের ক্ষেত্রে সাপ্তাহিক বনভূমির অবদান অনস্বীকার্য। সাপ্তাহিক বনভূমির পাতায় প্রকাশিত উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ন আজ অনেকাংশেই বাস্তবে রূপ লাভ করেছে। বান্দরবানে বিশ্ববিদ্যালয়, রাঙ্গামাটিতে বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ও মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে একটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এখন সময়ের দাবী। অচিরেই হয়তো এ স্বপ্নও বাস্তবায়ন হবে। পাহাড়ের মানুষের স্বপ্নের সারথি হিসেবে সাপ্তাহিক বনভূমির লিখনী ইতিহাসের পাতায় অমর হয়ে থাকবে।
সময়ের সাথে মানিয়ে বনভূমির এগিয়ে চলাঃ ১৯৭৮ সালে ২৬ শে মার্চ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে রাঙ্গামাটি থেকে প্রকাশিত হয় সাপ্তাহিক বনভূমির প্রথম সংখ্যা। প্রকাশনার প্রথম দেড় যুগ নিয়মিত প্রতি সপ্তাহে এবং পরে আংশিক অনিয়মিতভাবে পত্রিকাটি প্রকাশিত হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামের বিচিত্র সংবাদ, তথ্য ও রচনা সম্ভারে পরিপূর্ণ হয়ে প্রতি সপ্তাহে প্রকাশিত হত। সাপ্তাহিক বনভূমি প্রকাশ শুরু করার পর থেকে ছোট বড় পত্রিকা সাইজে প্রকাশিত হয়ে আসছিল। দৈনিক গিরিদর্পণ প্রকাশিত হলে নিউজ জানার জন্য বনভূমির গুরুত্ব কমে গেলে ভিউজ প্রধান করার দাবী উঠে। সম্পাদক এ ব্যাপারে যতœবান ছিলেন। তাই পত্রিকার আকৃতি ও প্রকৃতি উভয় ক্ষেত্রেই পরিবর্তন সূচিত হয়েছে। সাপ্তাহিক বনভূমিকে টিকিয়ে রাখতে ও সংরক্ষণ করার সুবিধার্থে ২২তম বর্ষে পদার্পন থেকে অর্থাৎ ২৬ শে মার্চ ১৯৯৯ সাল থেকে ম্যাগাজিন আকারে প্রকাশিত হয়। ২০০৩ সালের ৩০ মার্চ পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রামে পত্রিকাটির ছিল ব্যাপক প্রচার।
সাপ্তাহিক বনভূমির মূল্যায?নঃ মফস্বলের সংবাদপত্র হিসেবে সাপ্তাহিক বনভূমির মূল্যায়ন করেছেন জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের তৎকালিন পরিচালক ফজলে রাব্বি। ৬ষ্ঠ বর্ষ, ২য় সংখ্যা (২ এপ্রিল ১৯৮৩) বনভূমির চিঠিপত্র কলামে তিনি লিখেছেন, “মফস্বল থেকে প্রকাশিত পত্র-পত্রিকায় ঢাকার খবরা-খবর প্রধান্য দেওয়া হয়। সে দিকে সাপ্তাহিক বনভূমি ভিন্ন ভাবের কাগজ। কেননা সাপ্তাহিক বনভূমির প্রতিটি সংখ্যায় একটি জিনিস লক্ষ্য করেছি, আর তা হচ্ছে পত্রিকার প্রতিটি কলামে চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানের খবরের প্রাধান্য থাকে। আমি বিশ্বাস করি মফস্বল থেকে পত্র-পত্রিকা বনভূমির মত হওয়া উচিত। ঢাকার পত্রিকায় মফস্বলের পত্রিকাগুলোর স্থানীয় সংবাদ প্রকাশের উপর সঠিক ভাবে গুরুত্ব দেয়া উচিৎ বলে আমি মনে করি।”
মফস্বলের সংবাদপত্র হিসেবে বনভূমির কৃতিত্ব ও সাফল্যেও মূল্যায়নের ক্ষেত্রে এই পত্রটি একটি মূল্যবান অভিজ্ঞান। এছাড়া সাপ্তাহিক বনভূমি নিয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও রিসার্চ প্রতিষ্ঠানের থিসিস অনুষ্ঠিত হয়েছে। সাপ্তাহিক বনভূমির অন্যতম মূল্যায়ন হলো বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রামের সর্বপ্রথম একমাত্র সাপ্তাহিক পত্রিকা। যার পথ অনুসরণ করে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে এখন অনেক দৈনিক ও সাপ্তাহিক সংবাদপত্র প্রকাশিত হচ্ছে।
পরিশেষে, সাপ্তাহিক বনভূমি পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহসেরই একটি অংশ। এ,কে,এম মকছুদ আহমেদ এর সম্পাদনায় সাপ্তাহিক বনভূমি ১৯৭৮ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত ২৭ বছর নিয়মিত প্রকাশিত হয়। বনভূমি পার্বত্য চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক দলিল। বনভূমির পথ ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামে যে গণমাধ্যম বিপ্লব ঘটেছে তাতে বনভূমিই এ গণমাধ্যম বিপ্লবকে ঋণী করেছে। শুধু সাপ্তাহিক বনভূমিকে নয় পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাস ঐতিহ্যের আলোকে যে কর্মগুলো সম্মান পাওয়ার যোগ্য, সেগুলোকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা উচিত। গুণীজনের কদর না থাকলে গুণীজন জন্মাবে না। পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাসকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করলে উৎসাহ পাবে আগামী প্রজন্ম। এতে সৃষ্টিশীলতা বৃদ্ধি পাবে। সমৃদ্ধ হবে পার্বত্য চট্টগ্রাম। তাই সাপ্তাহিক বনভূমির সঠিক মূল্যায়ন প্রয়োজন।
মাহমুদুল হাসান সোহাগ
সম্পাদক, তারুণ্যের কলম।