
আমার স্বামী যেভাবে মরছে, আল্লাহ যাতে আমাকেও সেভাবে মরণ দেয়। আমি নারী। কার কাছে যাবো ভাত চাইতে! কেডা আমারে ভাত দিবো? পোলাপাইন লইয়া কই যামু? আমি কিছুই জানি না।’ রবিবার (৫ জুন) সকালে লংগদুতে নিহত নুরুল ইসলাম নয়নের বাড়িতে গেলে তার স্ত্রী জাহেরা খাতুন আহাজারি করে এসব কথা বলেন।
তিনি জানান, তাদের দুই মেয়ে ও এক ছেলে। বড় মেয়েকে বিয়ে দেওয়া হয়েছে। ছেলেটি স্কুলে পড়ে। আর ছোট মেয়ে এখনও শিশু। পরিবারে একমাত্র উপার্জন করতেন তার স্বামী। তাকে হারিয়ে এখন তারা দিশেহারা।
তিনি বলেন, ‘‘আমার স্বামীর কাছে বুধবার (৩১ মে) রাতে একটা ফোন আসে। তখন আমি তাকে জিজ্ঞেস করি, ‘কে ফোন করেছে?’ নয়ন আমাকে বলে, ‘সকালে খাগড়াছড়িতে একটা ভাড়া আছে।’ তখন তাকে আবার জিজ্ঞাসা করি, ‘কাকে নিয়ে যাবা?’ তখন সে আমাকে জানায়, ‘দুইজন চাকমা।’’
তিনি আরও জানান, ‘‘বৃহস্পতিবার (১ জুন) খুব সকালে সেই যে গেল আর দেখা হলো না। দুপুরের পর বাড়ির পাশের লোকজন আমাকে বলে, ‘ভাবি, নয়ন ভাই কই?’ আমি বলি, ভাড়া নিয়ে খাগড়াছড়ি গেছে। আমাকে বলে, ‘কি শার্ট ও প্যান্ট পরেছে?’ তখন তারা আমাকে ছবি দেখায়, আমি কিছুটা চিনতে পারি। কিন্তু নিশ্চিত ছিলাম না। তারপর আমার দেবর বৃহস্পতিবার (১ জুন) বিকেলে খাগড়াছড়ি যাওয়ার পর আমাকে ফোন করে বলে ঘটনা সত্য।’’ নয়নের বড় মেয়ে নাসরিন আক্তার বলেন, ‘আমার পিতারে কিরলগ্যা (কেন) হত্যা করছে? আজকে আমার পিতারে মারছে। কালকে অন্যের পিতারে মারবো। অন্য মায়ের সন্তানের বুক খালি করবো। আমি আমার বাপের হত্যার বিচার চাই।’
নুরুল ইসলাম নয়নের ছোট ভাই লিটন বলেন, ‘কিছু দিন আগে এখানকার জেএসএসের কালেক্টর ইমনের সঙ্গে আমার ভাইয়ের কথা কাটাকাটি হয়। কারণ, তারা আমার ভাইয়ের গাড়িতে তাদের অবৈধ অস্ত্র আনা-নেওয়ার প্রস্তাব দেয়। আমার ভাই তাদের কথায় রাজি হয়নি। আর ইমনের আত্মীয় তিনটিলার বাসিন্দা দীপালু চাকমা। সে বিভিন্নভাবে আমার ভাইকে বিপদে ফেলার চেষ্টা করছে অনেক দিন ধরে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার ভাইকে আঞ্চলিক সংগঠন জেএসএস’র সন্ত্রাসীরা হত্যা করেছে। দীপালুকে ধরে রিমান্ডে নেওয়া হলে আসল তথ্য বের হয়ে আসবে।’
উল্লেখ্য, নিহত মোটরসাইকেল চালক নুরুল ইসলাম উপজেলা সদর ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। বৃহস্পতিবার ভোরে লংগদু বাইট্টা পাড়া থেকে দুই উপজাতীয়কে ভাড়া নিয়ে খাগড়াছড়ি যান তিনি। পরে দুপুর ১২টার দিকে খাগড়াছড়ি-দীঘিনালা সড়কের পাশ থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নয়নকে হত্যার পর তার মোটরসাইকেলটিও ছিনতাই করে দূর্বৃত্তরা। পর দিন আর্থাৎ গত শুক্রবার ময়নাতন্তের লংগদু উপজেলা তার নিজ বাড়িতে নিয়ে আসা হলে বিক্ষুদ্ব হয়ে উঠে স্থানীয়রা। বের করা হয় তার লাশ নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল।
একই সময়এক দূর্বৃত্তদের আগুনে লংগদু উপজেলার মানিকজোড় ছড়া ও তিন টিলা গ্রামে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে । এসময় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের প্রায় ৭টি দোকান ও ২০৬টি ঘর পুড়ে যায়। এর দায় চাপানো হয় স্থানীয় বাঙালীদের উপর। তবে কে বা কারা এ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটিয়েছে সে বিষয়ে সঠিক কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে পুলিশ এঘটনার অভিযোগে ১৪জনকে আটক করেছে ।