॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ লংগদু উপজেলায় যুবলীগ নেতা নয়ন হত্যাকান্ডের পর পাহাড়ী গ্রামে অগ্নিসংযোগের ৭ দিন পরেও স্বাভাবিক হয়ে উঠেনি লংগদুর পরিস্থিতি। পাহাড়ী বাঙ্গালী উভয় সম্প্রদায়ের মাঝে এখনো আতংক বিরাজ করছে। উভয় সম্প্রদায়ের মাঝে আত্ম বিশ্বাস উঠে যাওয়ায় কেউ কাউকে বিশ্বাস করতে পারছে না। দীর্ঘ বছর পর আবারো নতুন করে এই ধরনের হামলার ঘটনায় সকল সম্প্রদায়ের মাঝে বিরাজ করছে চাপা উত্তেজনা ও ক্ষোভ।
গত ২ জুনে সংঘটিত ঘটনার পর লংগদু উপজেলায় পাহাড়ী তিনটি গ্রামের লোকজন এখনো তাদের বাড়ী ঘরে ফিরতে পারেনি। আতংকের মাঝে থেকে কিছু কিছু পরিবার তিনটিলা বৌদ্ধ বিহার, মানিকজোড়ছড়া নি¤œ মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং বিভিন্ন পাহাড়ী গ্রামের আত্মীয় স্বজনের বাড়ী এবং কিছু পাহাড়ে অবস্থান করছে। এই ঘটনার পর রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী সহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। তবে বিভিন্ন সংগঠনের সহযোগিতা নিলেও এখনো পর্যন্ত পাহাড়ী ক্ষতিগ্রস্থরা সরকারের কোন সাহায্য গ্রহণ করেনি।
অপরদিকে নিহত যুবলীগ নেতা ও মোটর সাইকেল চালক নয়নের বাড়ীতে চলছে শোকের মাতম। স্বামী হারিয়ে স্ত্রী ও পিতা হারিয়ে সন্তানরা এখন নিস্ব হয়ে প্রশাসনের কাছে বিচার দাবী করছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ও নিরাপত্তা হীনতায় এখনো পর্যন্ত মামলা দায়ের করতে পারেনি নয়নের পরিবার। অন্যদিকে মামলার কারণে আশ পাশের এলাকায় পুরুষ শুন্য হয়ে পড়ায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে নয়নের পরিবার এমন দাবী করেন নয়নের স্ত্রী ও সন্তানরা।
এদিকে লংগদুর উপজাতীয় গ্রামের অগ্নি সংযোগের ঘটনায় ১৫ জনকে আসামী করে ৩০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। গণ গ্রেফতারের আতংকে পুরুষ শুন্য হয়ে পড়েছে লংগদু উপজেলা। বাড়ীঘরে মহিলা ছাড়া কোন পুরুষ নেই। ইতিমধ্যে পুলিশ ২০ জনকে আটক করেছে।
গত ৭ জুন লংগদু উপজেলার পরিস্থিতি পরিদর্শন কালে ১৪ দলের সমন্বয়ক ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোঃ নাসিম বলেন অনতিবিলম্বে যারা নয়নের হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে এবং লংগদুর পাহাড়ীদের বাড়ীঘর যারা আগুনে পুড়িয়েছে তাদের অবশ্যই গ্রেফতার করে শাস্তির বিধান করা হবে। তিনি বলেন, এ দুুর্বৃত্তরা দেশ ও জনগনের শত্রু এদের ধর্ম বর্ণ কিছু নেই। এরা পাহাড়ীও না বাঙ্গালীও না এরা সন্ত্রাসী। এরা জনগনের শত্রু দেশের শত্রু এদের বিচার করে শাস্তির নিশ্চিত করা হবে। তিনি আগুনে ক্ষতিগ্রস্থদের উদ্দেশ্যে বলেন যে সকল পাহাড়ীদের বাড়ীঘরে আগুন দেয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে তাদের ঘরবাড়ী নির্মাণ করা হবে। তাদেরকে চিরস্থায়ী ভাবে পুনর্বাসন করা হবে বলেও প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করে বলেন, সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে যাতে এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি করা না হয়। তিনি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য পাহাড়ী বাঙ্গালী সকলের প্রতি আহবান জানান।
পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর বলেন, নয়ন হত্যকান্ডের যেমন বিচার হবে তেমনি পাহাড়ীদের বাড়ীঘরে যারা আগুন দিয়েছে তাদেরও বিচার হবে। ক্ষতিগ্রস্থরা ত্রাণ না নেয়ার প্রশ্নে তিনি বলেন, ত্রাণ কেন নিবেন না ত্রাণ অবশ্যই নিবেন ত্রাণ নিয়ে খেয়ে দুস্কৃতিকারীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। তাই আপনাদের কাছে অনুরোধ করছি ত্রাণ গ্রহণ করুন সরকার আপনাদের পাশে আছে সব সময় থাকবে।
এদিকে লংগদুর ক্ষতিগ্রস্থ এলাকায় স্থানীয় স্কুলে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে একটি চিকিৎসা ক্যাম্প, তিনটিলা বৌদ্ধ বিহারের সম্মুখে স্বাস্থ্য বিভাগের স্বাস্থ্য ক্যাম্প এবং সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্থদের খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, গতকাল ১ জুন যুবলীগ নেতা ও বাইক চালক নুরুল ইসলাম নয়ন কে ২ জন পাহাড়ি যুবক খাগড়াছড়ি দীঘিনালা যাওয়ার জন্য সকালে ভাড়া করে নিয়ে যায়। ঐ দিন বিকালে বাইক চালকের লাশ ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় খাগড়াছড়ি দিঘীনালা সড়কে পাশ্বর্বতী জঙ্গলে পাওয়া যায়। স্থানীয় বাঙ্গালীদের অভিযোগ যে দুই জন যাত্রী ভাড়া করেছিল তারাই তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করছে। তার প্রতিবাদে গত ২ জুন লাশ নিয়ে মিছিল চলাকালে তাদের দুস্কৃতিকারী পাহাড়ীদের বাড়ীঘরে অগ্নিসংযোগ করে।