ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বান্দরবানের দুর্গম থানচিতে বিদ্যুৎ প্রকল্প উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

॥ রাহুল বড়–য়া ছোটন, বান্দরবান ॥ দেশের সবচেয়ে দুর্গম পার্বত্য উপজেলা থানচিতে বিদ্যুতায়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার (১ মার্চ) দুপুরে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তিনি এই প্রকল্পটির উদ্বোধন করেন।
এসময় বান্দরবান প্রান্তে জেলা প্রশাসকের সভাকক্ষে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ৬৯ পদাতিক ব্রিগেডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল যুবায়ের সালেহীন পিএসসি, এনডিইউ, পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা, জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক, পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায়, পৌর মেয়র মোহাম্মদ ইসলাম, থানচি উপজেলা চেয়ারম্যান ক্য হ্লাচিং মারমা, বিভিন্ন উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, সুধীজন এবং সাংবাদিকবৃন্দ।
এদিকে স্থানীয় বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগ জানায়, প্রধানমন্ত্রীর রুপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রায় ৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে দুর্গম থানচিতে বিদ্যুতায়নের কাজ শুরু হয় বিগত ২০১৫ সালের এপ্রিল মাসে। এজন্য চিম্বুকে স্থাপন করা হয় ৩৩/১১ কেভি সক্ষমতা সম্পন্ন একটি উপকেন্দ্র। কাজ শুরুর মাত্র চৌদ্দ মাসের মাথায় গত বছরের জুলাই মাসে প্রকল্পের কাজ শেষ হলে কিছু এলাকায় পরীক্ষামুলকভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর এখন পুরোপুরিভাবে বিদ্যুতের সংযোগ দেয়া হবে। জেলা সদর থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার দুরের উপজেলা থানচিতে ৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে এই বিদ্যুতায়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে বাংলাদেশ বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে বান্দরবানের চিম্বুক পাহাড়, নীলগীরি পর্যটন কেন্দ্র, ডিম পাহাড় ও তার আশপাশের বিভিন্ন আদিবাসি অধ্যুষিত পাড়া গ্রামসহ থানচি উপজেলা সদর এবং বলিপাড়া ইউনিয়নের প্রায় আড়াই হাজার গ্রাহকের মাঝে বিদ্যুত সুবিধা পৌছে যাবে। এদিকে দুর্গম এলাকার পাড়া গ্রামে বিদ্যুত সংযোগ পৌছে যাওয়ায় খুশি সেখানকার পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী। রাতের আঁধার নামার সাথে সাথে দুর্গম পাহাড়ে জ্বলছে বৈদ্যুতিক বাতি। আলোকিত করছে পাহাড়ের জনপদকে।
দেশ স্বাধীনের ৪৫ বছর পর বিদ্যুত সংযোগ চালু হওয়ার অনুভূতি জানাতে গিয়ে থানচি উপজেলা চেয়ারম্যান ক্যহ্লাচিং মারমা গিরিদর্পণকে জানান, এতদিন প্রত্যন্ত এলাকার মানুষ অন্ধকারে ছিল। সন্ধ্যা না হতেই রাত নেমে আসতো। মাত্র কয়েক শতাংশ মানুষই সৌর বিদ্যুতের সুবিধা পেতো। এখন সে দিন আর নেই। বিদ্যুত সংযোগ পাওয়ায় এলাকার পর্যটন, শিক্ষা, চিকিৎসার উন্নয়ন হবে। সাবেক চেয়ারম্যান মংথোয়ইম্যা রনি জানান, থানচিবাসী বিদ্যুত সুবিধা পাবে এটা দীর্ঘদিনের স্বপ্ন। কিছুটা দেরিতে হলেও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে উপজেলার কয়েক হাজার মানুষ এখন বিদ্যুত সুবিধা পাচ্ছে। বিদ্যুতের সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে এখানকার শিক্ষা, কৃষি এবং পর্যটনসহ অনেকে ক্ষেত্রে উন্নয়ন হবে এতে সন্দেহ নেই। থানচি সদরের মুদি দোকানি অংচা হ্লা মারমা বলেন, এতদিন সন্ধ্যা হলে আমরা জেনারেটরের মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট সময় বিদ্যুত সংযোগ পেতাম। এবার সরাসরি বিদ্যুত সংযোগ পাওয়ায় আমাদের ব্যবসা বাণিজ্যে আর কোন অসুবিধা হবেনা।
এদিকে থানচিতে বিদ্যুতায়ন প্রকল্পের উদ্বোধন শেষে পার্বত্য বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর সাংবাদিকদের বলেন, এই বিদ্যুত প্রকল্পের মাধ্যমে উপজেলার সবাইকে বিদ্যুত সুবিধা দেয়া সম্ভব না হলেও আগামিতে সোলার পাওয়ারের মাধ্যমে বিদ্যুত সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। আর এ জন্য সরকার মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছে যা শীঘ্রই বাস্তবায়ন করা হবে। এসময় তিনি বিদ্যুত ব্যবহারে সকলকে মিতব্যয়ী হবারও আহবান জানান।

Archive Calendar
MonTueWedThuFriSatSun
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930