পাহাড়ে রাস্তা তৈরীতে পরিবেশ অধিপ্তরের ছাড়পত্রসহ ১২ সুপারিশ

॥ গিরিদর্পণ ডেস্ক ॥ পাহাড় ধস বন্ধে ১২ দফা সুপারিশ করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর, যার মধ্যে পাহাড়ি এলাকায় রাস্তা নির্মাণের জন্য অধিদপ্তরের ছাড়পত্রের কথা বলা হয়েছে।
পাহাড় ধসের পর ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে সুপারিশ সম্বলিত প্রতিবেদন বৃহস্পতিবার পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে জমা দিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে অধিদপ্তর এই প্রতিবেদন তৈরি করে।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, পরিবেশ অধিদপ্তর পাহাড় ও টিলা সংরক্ষণে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-১৯৯৫ কঠোরভাবে প্রতিপালনের সুপারিশ করে। এছাড়া পাহাড় ব্যবস্থাপনা নীতি তৈরি করে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিয়ে পাহাড়ি এলাকায় পরিকল্পিতভাবে রাস্তাঘাট নির্মাণ করার সুপারিশ করা হয়।
অধিদপ্তর বলছে, পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধস ও ভূমিক্ষয় রোধে বনায়ন, পাহাড় সংরক্ষণ, টেকসই কৃষি প্রবর্তন ও পানি সংরক্ষণ ব্যবস্থা গড়ে তোলা প্রয়োজন। ম্যাপিং, জোনিংসহ পাহাড়ি এলাকার বিস্তারিত তথ্যভান্ডার গড়ে তোলা, পাহাড় সংরক্ষণ এবং পাহাড়ি এলাকার ব্যবহার সংক্রান্ত দীর্ঘমেয়াদি কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে।
পাহাড়/টিলার গঠনশৈলী, পাহাড়ি নদ-নদী-ঝর্ণা, স্থায়িত্ব, ধসে পড়ার ঝুঁকি, পরিবেশ-প্রতিবেশ, জীববৈচিত্র্য, পাহাড়ে বসবাসরত জনগোষ্ঠীর গৃহ ব্যবস্থা, পাহাড় নির্ভর জীবিকা ইত্যাদির ওপর গবেষণা/সমীক্ষা চালিয়ে টেকসই পাহাড় ব্যবস্থাপনার জন্য সুপারিশ প্রণয়ন করতে হবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নির্বিচারে বৃক্ষ কর্তন/নিধন বন্ধ করতে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পাহাড়ে ব্যাপক হারে উপযোগী গাছ লাগাতে হবে। পাহাড়ের গায়ে থাকা গুল্ম জাতীয় গাছ/জঙ্গল পোড়ানো বন্ধ করতে হবে।
পাহাড়ি এলাকায় রাস্তা নির্মাণের সময় পাহাড়ের ঢাল কোনোক্রমেই যাতে ৩৫-৪০ ডিগ্রির বেশি না হয়। পাহাড়ের ঢালে সিমেন্ট ব্লক বসাতে হবে অথবা ঘাসের আচ্ছাদন লাগাতে হবে। পাহাড় কেটে সমান করে, পাহাড়ের ঢাল ও পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে ঘরবাড়ি নির্মাণ বন্ধ করতে হবে।
পাহাড়ের পাদদেশে বিদ্যমান রাস্তা/স্থাপনাগুলোতে সুষ্ঠু পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা চালু রাখতে হবে এবং সেজন্য নালা-নর্দমা/খাল/ছড়া পরিষ্কার রাখতে হবে।
সুপারিশে বলা হয়েছে, পাহাড়ের অবৈধ বসতি স্থাপন নিরুৎসাহিত করার জন্য সেবা সংযোগ (বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস ইত্যাদি) প্রদান বন্ধ/বিচ্ছিন্ন করতে হবে।
চলতি মৌসুমের শুরুতে টানা কয়েক দিনের বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানের পাহাড়ি এলাকার কয়েকটি স্থানে ধস দেখা দেয়। এতে নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় দেড় শতাধিক, যা ২০০৭ সালের হতাহতকেও ছাড়িয়ে গেছে। গত কয়েক বছর ধরেই বর্ষায় পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসে প্রাণহানি হচ্ছে।
সংসদীয় কমিটির বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি হাছান মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, “দেখা গেছে, সরকারি সংস্থাও খাড়াভাবে পাহাড় কাটে। এজন্য সংসদীয় কমিটি পরিবেশ অধিদপ্তরের সুপারিশগুলো সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠিয়ে দিতে বলেছে। একইসঙ্গে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের সভাপতিত্বে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর সমন্বয়ে বৈঠক করে সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে বলেছে।”
ওই প্রতিবেদনে পরিবেশ অধিদপ্তর বলেছে, অবৈধ পাহাড় কাটা, পাহাড়ি বনভূমি উজাড়, পাহাড়ের পাদদেশে অপরিকল্পিত স্থাপনা নির্মাণসহ নানা ধরনের কর্মকান্ড পরিচালনার ফলে দেশের পাহাড়গুলো ধ্বংসের মুখে।
বর্তমানে নির্বিচার বন ধ্বংস, ভূমিধস, ভূমিক্ষয়, মাটি ও পানি দূষণ, অপরিকল্পিত নগরায়ন, পাহাড় কাটা প্রভূতি কারণে পাহাড়ের সুরক্ষার কাজটি কঠিন হয়ে পড়ছে।
এদিকে বৈঠকে সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে যাদের সরকারি জমি লিজ দেওয়া হয়েছে সেগুলো প্রতি বছর নবায়ন ও একটি নির্ধারিত হারে টাকা প্রদান এবং এসব জমিতে কোনোভাবে যেন কেউ স্থায়ী স্থাপনা নির্মাণ করতে না পারে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়।
কমিটির সভাপতি সাবেক বনমন্ত্রী হাছান মাহমুদ এ বিষয়ে বলেন, “ভূমিহীনদের মধ্যে খাস জমি ১০ বছর মেয়াদে সামাজিক বনায়নের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়। দেখা গেছে এই জমিতে অনেকে বাড়ি তৈরি করে, পুকুর কেটে মাছ চাষ করে। এজন্য কমিটি প্রতিবছর লিজ নবায়নের ব্যবস্থা নিতে বলেছে।”
হাছান মাহমুদের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য পরিবেশ ও বন উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব, নবী নেওয়াজ, টিপু সুলতান, মো. ইয়াসিন আলী ও মেরিনা রহমান অংশ নেন।

Archive Calendar
MonTueWedThuFriSatSun
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30