পাহাড় ধ্বসের ৬৮ দিন পর আজ চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি সড়কের নির্মিত বেইলি ব্রীজ আজ খুলে দেয়া হচ্ছে

॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ রাঙ্গামাটি শহরে ভয়াবহ পাহাড় ধ্বসে রাঙ্গামাটির শালবাগান এলাকায় বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া সড়কের উপর নির্মিত বেইলী ব্রীজ ৬৮ দিন পর আজ খুলে দেয়া হচ্ছে। আজ সোমবার সকাল এগারটা থেকে চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি সড়কে বিধস্থ হওয়া শালবাগান এলাকায় নির্মিত বেইলী ব্রীজের উপর দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচল শুরু হবে। পাহাড় ধ্বসের ঘটনার ৯ দিনের মাথায় হালকা যানবাহনের জন্য সড়ক খুলে দেয়া হলেও ১ মাসের মধ্যে ভারী যানবাহন চলাচলের ব্যবস্থা করার কথা থাকলেও দীর্ঘ ৬৮ দিন পর আজ থেকে ভারী যানবাহনের জন্য নির্মিত বেইলী ব্রীজ আজ খুলে দেয়া হচ্ছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ ২ কোটি ৩৭ লক্ষ টাকা ব্যয়ে এই বেইলী ব্রীজ নির্মাণ করেছে।
আজ সোমবার সেতুটি যান–বাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে বলে গতকাল রবিবার বিকেলে দৈনিক ভোরের কাগজকে নিশ্চিত করেছেন, রাঙ্গামাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. এমদাদ হোসেন। তিনি বলেন গত ১৩ জুন পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাসে স্মরণকালের প্রাকৃতিক দুর্যোগে পাহাড় ধসে চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি সড়কের শালবন এলাকা বিধ্বস্থ হওয়া অংশে নির্মিত রাঙ্গামাটি জেলাবাসীর বহু আকাঙ্খিত বেইলি সেতুটির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। ইতিমধ্যে মধ্যে গতকাল ররিবার বিকালে কিছু চালককে পরীক্ষামূলকভাবে সেতুটির ওপর দিয়ে যানবাহন চালাতে দেখা গেছে।
অপরদিকে, পাহাড় গত ১৩ জুন ভয়াবহ পাহাড় ধসের ৮ দিনের মাথায় সেনাবাহিনীর সহায়তায় সড়ক ও জনপথ বিভাগ বিধ্বস্থ পাহাড়ের পাদদেশ দিয়ে হালকা যান চলাচল উপযোগী রাস্তা নির্মাণ করে দিলেও, ভারী যানবাহন চলাচল করতে না পারায় সমগ্র রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার অর্থনৈতিক কর্মকান্ড একপ্রকার স্থবির হয়ে পড়েছিল। এতে চট্টগ্রাম ঢাকাগামী যাত্রীবাহী যান চলাচল বিঘœ হওয়ায় জেলা বাসীকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। পর্যটন শহরে পর্যটন শূন্য হয়ে সরকারি বেসরকারি হোটেল মোটেল ব্যবসায় যেন ধস নেমেছে।
চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি সড়কের শালবাগান এলাকায় নতুন বেইলি সেতুর কাজ শেষ হওয়ায় পাহাড় ধসের প্রাকৃতিক দুর্যোগের দীর্ঘ প্রায় আড়াই মাস পর রাঙ্গামাটির জীবনযাত্রা আবার পুরোপুরি সচল হওয়ার আশা করছে পার্বত্য এ জেলাবাসী। যোগাযোগ ব্যবস্থায় স্বাভাবিক গতি ফিরছে, সচল হচ্ছে ব্যবসা বাণিজ্যে। ফলে আবার চাঙ্গা হয়ে উঠছে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ভেঙে পড়া অর্থনৈতিক অবস্থা। এর মধ্য দিয়ে জনমনে ফিরতে শুরু করেছে স্বস্থি।
রাঙ্গামাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এমদাদ হোসেন গতকাল রবিবার দৈনিক ভোরের কাগজকে বলেন, চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি সড়কের সাপছড়ি শালবন এলাকার বিধ্বস্থ অংশে বেইলি সেতুর কাজ শেষ। এটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ২ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। মেসার্স রাঙ্গামাটি ট্রেডার্স নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে এ বেইলী সেতুটি নির্মাণের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। এ ধরনের সেতু নির্মাণে সময় দরকার কমপক্ষে তিন মাস। কিন্তু বৃষ্টিপাতের মধ্যেও আমরা এ সেতুর কাজ মাত্র এক মাস দশ দিনে শেষ করতে সক্ষম হয়েছি। গতকাল বিকাল থেকে পরীক্ষামূলকভাবে সেতু দিয়ে হালকা ও ভারি যান চলাচল চালু করা হয়েছে। আজ সোমবার সকাল এগারটার দিকে সেতুটি যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে, এর মধ্য দিয়েই জাতীয় মহাসড়কের অন্তর্ভুক্ত চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি সড়কে পুরোপুরি যান চলাচল সচল হবে।
তিনি আরো জানান, দ্রুত করা হলেও এ বেইলি সেতুর কাজ স্থায়িত্বের জন্য অত্যন্ত মজবুত করা হয়েছে। ভারি যান চলাচলে কোনো সমস্যা হবে না। এ ধরনের বেইলি সেতু নির্মাণে সাধারণত ১০০ থেকে ১২০ ফুট অন্তর স্পেন স্থাপন করা হয়। কিন্তু অধিক নিরাপত্তা ও ঝুঁকিমুক্ত রাখতে এ বেইলি সেতু নির্মাণে স্পেন স্থাপন করা হয়েছে ৪০ ফুট অন্তর। বেইলি সেতুর দৈর্ঘ্য ৫০ মিটার এবং প্রস্থ ৩ দশমিক ৬৬ মিটার বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, ভারি যান চলাচলে সেতুটির কোনো সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা নেই। তবু অধিক নিরাপত্তার স্বার্থে অতিরিক্ত পণ্য বোঝাই ভারি যান চলাচল করতে দেয়া হবে না। চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি সড়কের অন্য বিধ্বস্থ অংশের কাজ প্রায় শেষ। শিগগির গোটা সড়ক সম্পূর্ণ ঝুঁকিমুক্ত হয়ে উঠবে। সড়কের অন্যান্য ক্ষতিগ্রস্থ অংশেও মেরামত কাজ চলছে।

Archive Calendar
Mon Tue Wed Thu Fri Sat Sun
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031