কোনো জনপ্রতিনিধি রোহিঙ্গাদের অবৈধভাবে ভোটার হতে সহযোগিতা করলে, বাবা-মা হিসেবে কেউ ভুয়া পরিচয় দিলে অথবা অন্য কোনোভাবে কেউ সহযোগিতা করলে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে মাঠ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছে সাংবিধানিক সংস্থাটি।
চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান ও রাঙামাটিতে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা চলমান ভোটার তালিকা হালনাগাদে ঢুকে পড়ছে কি না- সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে সংশ্লিষ্ট ৩০ উপজেলার কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠকও করেছে ইসি।
নির্বাচন কমিশনের ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ জানান, রোহিঙ্গারা যাতে ভোটার হিসাবে নিবন্ধিত হতে না পারে, সেজন্য ‘কঠোর নির্দেশনা’ দেওয়া হয়েছে কমিশনের পক্ষ থেকে।
এ বিষয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিতে ইসি সচিবালয়ের পক্ষ থেকে স্থানীয় সরকার বিভাগকে চিঠি দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
“অভিযোগ রয়েছে, বিশেষ এলাকাগুলোয় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে জাল/ভুয়া জন্মসনদ ও নাগরিকত্ব সনদ সংগ্রহ করে এবং ভুয়া বাবা-মা হিসেবে প্রক্সি নিয়ে মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের ভোটার হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। কিছু অসাধু জনপ্রতিনিধিও রোহিঙ্গাদের ভোটার করতে অপতৎপরতা চালাচ্ছেন; হালনাগাদ কাজে সম্পৃক্ত কর্মকর্তাদের চাপও দিচ্ছেন তারা।”
ইসির অতিরিক্ত সচিব মোখলেসুর রহমান বলেন, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গাদের ভোটার বানাতে যে কোনো ধরনের সহায়তা করলেই আইন অনুযায়ী ফৌজদারি মামলা করা হবে। এ বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।”
প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারে জাতিগত নিপীড়নের মুখে গত কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে আছে ৫ লাখের বেশি রোহিঙ্গা মুসলমান। বাংলাদেশ সরকার তাদের ফেরত নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে এলেও মিয়ানমার তাতে সাড়া দেয়নি। রোহিঙ্গাদের তারা নাগরিক হিসেবেও মেনে নিতে নারাজ।
বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া এই রোহিঙ্গারা মাদক পাচার, জঙ্গি তৎপরতাসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে। ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে তারা বিদেশেও পাড়ি জমাচ্ছে বলে তথ্য এসেছে বিভিন্ন সময়ে।
এই প্রেক্ষাপটে ২০০৮ সালে ছবিসহ ভোটার তালিকা তৈরির কাজ শুরুর পর হালনাগাদের সময় রোহিঙ্গা সন্দেহে ৫০ হাজার আবেদন বাতিল করেছিল ইসি।
এদিকে গত ২৪ অগাস্ট মিয়ানমারের রাখাইনে পুলিশ পোস্ট ও সেনাক্যাম্পে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার পর সীমান্তে নতুন করে রোহিঙ্গাদের ঢল নেমেছে। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের হিসাবে, গত ১১ দিনে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করা রোহিঙ্গার সংখ্যা ৯০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।
গত ২০ অগাস্ট সারা দেশে শুরু হওয়া ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রমে নতুন করে ২৫ লাখের বেশি নাগরিকের তথ্য নেওয়া হয়েছে। তাদের ছবি তোলার পর এখন চলছে নিবন্ধনের কাজ। এই তালিকায় যাতে রোহিঙ্গারা ঢুকতে না পারে সে বিষয়েই মাঠ কর্মকর্তাদের সতর্ক করছে ইসি।
সম্প্রতি চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান ও রাঙামাটির ৩০ উপজেলার কর্মকর্তাদের নিয়ে ইসির বৈঠকের কার্যবিবরণীতে দেখা যায়, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও কিছু অসাধু ব্যক্তির বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়ার ক্ষেত্রে সহযোগিতার অভিযোগ করেছেন প্রশাসন, পুলিশ ও গোয়েন্দা কর্মককর্তারা।
এছাড়া বাংলাদেশি নারী-পুরুষদের মা-বাবা সাজিয়ে রোহিঙ্গাদের ভোটার হিসেবে নিবন্ধনের আবেদন করা হচ্ছে বলেও সভায় জানানো হয়।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার এসএম রিজুয়ান নুর হাসান গত ২৬ অগাস্ট চট্টগ্রামে ওই বিশেষ সভায় বলেন, রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়া ঠেকাতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। বিশেষ করে দেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা কোনো ধরনের সেবা নিলে বা অনুপ্রবেশের সময় তাদের ‘বায়েমেট্রিক ডেটা’ নেওয়া গেলে ভালো হয়।
অনেকে নিজেদের জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্মসনদ ও অন্যান্য কাগজপত্র ভোটার হওয়ার জন্য রোহিঙ্গাদের কাছে বিক্রি করছে বা ভাড়া দিচ্ছে বলেও ওই বৈঠকে জানান তিনি।
সভায় সিদ্ধান্ত হয়, রোহিঙ্গাদের ভোটার করতে ভুয়া জন্মসনদ ইস্যু করা বা বাবা-মা হিসেবে ভুয়া পরিচয় দাখিল বন্ধে স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে একটি আধা সরকারি পত্র জারি করা হবে। এছাড়া সহযোগিতাকারীদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সতর্ক করে চিঠি পাঠানো হবে।