খাগড়াছড়িতে বিদ্যুৎ গ্রাহকদের আবারও চরম ভোগান্তির স্বীকার

॥ মোহাম্মদ আবু তৈয়ব, খাগড়াছড়ি ॥ খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় আবারো এখানাকার বসবাসরত সাধারণ জনগণ বিদ্যুতের ব্যাপারে চরম দুর্ভোগের স্বীকার হচ্ছে প্রতিনিয়ত। সাব স্টেশনের ধীরগতির কারণে প্রায় এক হাজার কোটি টাকার খাগড়াছড়ি বিদ্যুতের গ্রিড সাব স্টেশনের কাজ নির্ধারিত সময়ে এখনো শেষ হয়নি। গত ১৭ আগস্ট এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। ফলে সীমাহীন দূর্ভোগের শিকার হচ্ছে খাগড়াছড়ি বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের আওতাধীন প্রায় ৫৪ হাজার গ্রাহক। খাগড়াছড়ির বিদ্যুৎ গ্রাহকরা। সীমাহীন লোডশেডিং, লো-ভোল্টেজ ও লাইন ফল্ট খাগড়াছড়ির বিদ্যুৎ গ্রাহকদের যেন নিত্য দিনের সঙ্গি। লো-ভোল্টেজের পর হঠাৎ অতিরিক্ত ভোল্টেজ। নষ্ট হচ্ছে জিনিজপত্র। খাগড়াছড়িতে দিনে রাতে চলে ৬/৭ ঘন্টা লোড শেডিং। তার সাথে আছে লো-ভোল্টেজ। আবার কখনো লাইন ফল্ট করলে টানা ২/৩দিন বিদ্যুতের দেখা মেলে না। খাগড়াছড়িতে বিদ্যুতের চাহিদা মাত্র ১৭/১৯ মেগাওয়াট। কিন্তু দীর্ঘ লাইনের কারণে বিদ্যুৎ অপচয় হচ্ছে। ফলে শেয়ারিং করে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে হচ্ছে। এর ফলে বিদ্যুৎ নির্ভর মানুষের জীবন কার্যত: অচল হয়ে পড়েছে। পানি সরবরাহ বন্ধ থাকায় রান্না-বান্নায় বিঘœ হচ্ছে। ফ্রিজে রক্ষিত খাদ্য সামগ্রী পচে যাচ্ছে। হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। লো- ভোল্টেজ থেকে রেহায় পেতে ভোল্টেজ স্টেভালাইজার লাগিয়েও কোন কাজ হচ্ছে না। খাগড়াছড়ি বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের আওতাধীন ৫৪ হাজার বিদ্যুৎ গ্রাহক। দিনে ১২/১৬ ঘন্টা বিদ্যুৎ থাকেনা। কখনো আকাশে মেঘ দেখা দিলে টানা ২/৩দিন বিদ্যুতের দেখা মেলেনা। গ্রামাঞ্চলের অবস্থায় আরো ভয়াবহ। এ অবস্থা চলছে বছরের পর বছর। সীমাহীন দূর্ভোগের শিকার হচ্ছে খাগড়াছড়ি জেলার কর্মজীবি, শিক্ষার্থী, গৃহিনী ও ব্যবসায়ীরা। বিদ্যুতের দুরবস্থার কারণে এ অঞ্চলে শিল্প কারখানাও গড়ে উঠছে না। খাগড়াছড়িতে বিদ্যুৎ সংকট নিরসনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৩ সালের ১১ নভেম্বর গ্রীড সাব স্টেশন স্থাপনের ভিত্তি প্রস্তুর স্থাপন করেন। যার ব্যায় প্রায় এক হাজার কোটি টাকা বলে জানা গেছে। চলতি বছরের ১৭ আগস্ট এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। খাগড়াছড়ির হোটেল ব্যবসায়ী অরণ্য বিলাসের মালিক স্বপন দেব নাথ জানান, বছরের অধিকাংশ সময়-ই লো-ভোল্টেজের শিকার হচ্ছেন, গ্রাহকরা। প্রতিদিন জেনারেটরের ৫০ থেকে ৬০ লিটার তেল ব্যয় হচ্ছে। কলা বাগানের গৃহিনী শাহনাজ বেগম রোজি জানান, এমনিতে বিদ্যুৎ থাকে না। থাকলেও লো-ভোল্টেজের কারণে কোন কাজ করা যাচ্ছে না। খাগড়াছড়ি চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক সুদর্শন দত্ত জানিয়েছেন, বিশেষ করে, বর্ষা মৌসুমে টানা দিনের পর দিন বিদ্যুৎ না থাকায় বিদ্যুৎ নির্ভর জন-জীবনে নেমে আসে চরম দুর্ভোগ। ব্যবসা-বানিজ্যে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। বিদ্যুতের দুরবস্থার কারণে এ অঞ্চলে শিল্প কারখানাও গড়ে উঠছে না। খাগড়াছড়ি বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু জাফর জানান, হাটহাজারী উপ-কেন্দ্র থেকেই খাগড়াছড়ি জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ হয়ে থাকে। দীর্ঘ প্রায় সোয়া ১শ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রায় সময় লাইন ফল্ট হয়ে থাকে। আর তা খুঁজে বের করতে কয়েক দিন সময় পার হয়ে যায়। তাছাড়া দীর্ঘ লাইনের কারণে বিদ্যুৎ অপচয় হচ্ছে। ফলে শেয়ারিং করে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে হচ্ছে। তবে খাগড়াছড়িতে নিমার্ণাধীন বিদ্যুতের গ্রিড সাব-স্টেশনের কাজ সম্পন্ন এ সংকট নিরসন হবে বলে তিনি জানান। একটি সূত্র জানায়, রাঙামাটির চন্দ্রঘোনা থেকে ৩০১টি টাওয়ারের উপর ভর করে খাগড়াছড়ি গ্রিড সাব স্টেশনে বিদ্যুৎ সরবরাহ হবে। এ গ্রিড সাব গ্রিড স্টেশন থেকে খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটির ১২টি উপজেলা বিদ্যুৎ সরবরাহ করার কথা রয়েছে। গত ১৭ আগস্ট মাসে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কাজের ধীরগতির কারণে নির্ধারিত সময়ে সম্পন্ন হয়নি। তবে খাগড়াছড়ি ১৩২ কেভি বিদ্যুৎ গ্রিড সাব স্টেশনে দায়িত্বে নিয়োজিত নির্বাহী প্রকৌশলী মো. এনামুল হকের দাবি প্রকল্পের প্রায় ৮০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে।
তিনি জানান, গত ১৭ আগস্ট প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও বিভিন্ন জটিলতার কারণে নির্ধারিত সময়ে শেষ করা সম্ভব হয়নি। এ কারণে আবেদন করে প্রকল্পের মেয়াদ ৫ মাস বাড়ানো হয়েছে। আগামী ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে।

Archive Calendar
MonTueWedThuFriSatSun
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930