॥ রাহুল বড়–য়া ছোটন, থানচির রেমাক্রী থেকে ফিরে ॥ মানুষের বাঁচার জন্য পাচঁটি অধিকার রয়েছে। যার মধ্যে খাদ্য ও চিকিৎসা মানুষের বড় মৌলিক চাহিদা। কিন্তু সবার চাহিদা এক নয়। তাদের মধ্যে বান্দরবানের থানচি উপজেলার দুর্গম রেমাক্রী ইউনিয়নে বসবাসরত উপজাতিরা মৌলিক চাহিদা পূরণে প্রতিটি মুহুর্তে সংগ্রাম করছে। তারপরও সেখানকার মানুষ স্বপ্ন দেখেন নিজেদের পর্যটন উন্নয়ন নিয়ে। পর্যটন উন্নয়ন হলে তাদেরও ভাগ্য পরিবর্তন হবে এমনটাই মনে করেন এই এলাকায় বসবাসরত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও জুম্ম চাষীরা।
১৬-১৭ই নভেম্বর সরেজমিনে ঘুরে উপজাতীয় সম্প্রদায়ের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মোটামুটি সচেতন ব্যাক্তিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, রেমাক্রী ইউনিয়নে মারমা, খুমি, ত্রিপুরা, ¤্রাে, বম ও খেয়াং সম্প্রদায়ের বসবাস রয়েছে। নেই কোন বাঙ্গালী পরিবার। সেখানকার সবচেয়ে দূর্গম গ্রাম হচ্ছে দলিয়াম পাড়া। জুমের ধান, আম ও কাজু বাদাম মূলত তাদের প্রধান কৃষি পণ্য।
রেমাক্রী বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি পিউসি অং মারমা জানান, কোন ধরনের পরিবহণ ও সড়ক যোগাযোগ না থাকলেও রেমাক্রীতে পর্যটকদের আগ্রহ বাড়ছে। প্রায় ৩৫টি ইঞ্জিন চালিত নৌকা থানচি-রেমাক্রী নৌপথে যাতায়ত করে। বাজারে রয়েছে প্রায় ৬০টি দোকান।
স্থানীয় বাসিন্দা হ্লাচিং মং মার্মা জানান, জুমে যে ফসল উৎপন্ন হয় পুরো পরিবার নিয়ে সারা বছর তাদের চলেনা। অধিকাংশ উপজাতি পরিবারে খাদ্য ঘাটতি রয়েছে। এছাড়া দূর্গম এ ইউনিয়নে বসবাসরত মানুষ গুলো স্বল্প আয়ে সৃষ্টিকর্তার আর্শীবাদেই বেঁচে আছে বলে বিশ্বাস করেন। চিকিৎসা শব্দটির সাথে অনেক উপজাতি পরিবার এখনো পরিচিত নয়।
উপজাতি এক নারী জানান, তার দুই সন্তান মারা গেছে। কিন্তু কি রোগে আক্রান্ত হয়েছিল তিনি জানেনা। অন্যদিকে এক গর্ভবর্তী নারী জানান, তার চার সন্তান রয়েছে। বর্তমানে তিনি গর্ভবর্তী কিন্তু জম্ম নিয়ন্ত্রণ কিভাবে করা হয় সেটি তিনি জানেন না।
পর্যটকদের গাইড হিসেবে থানচি-রেমাক্রীর পরিচিত মুখ লাল পিয়ম বম। পর্যটকদের রাত্রী যাপনের জন্য রেমাক্রী বাজারে রয়েছে তার বাঁশ-কাঠের তৈরি কটেজ। সেখানে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থাও রয়েছে। তিনি জানান, সাংগু নদী ধরে রেমাক্রীর দিকে ধীরে ধীরে উপরে উঠতে হয় নৌকা বেঁয়ে। কারণ নদীটি রেমাক্রী যেতে ধীরে ধীরে ঢালু হয়েছে। রেমাক্রীতে দিন দিন পর্যটক বাড়ছে জানিয়ে লাল পিয়ম জানান, পর্যটকদের থাকার জন্য রেমাক্রি বাজারে তার একটিসহ ক্যাউনাই, মংপু চেয়ারম্যান ও হ্লাচিং মং এর চারটি কটেজ রয়েছে।
জাতীয় দিবস গুলোর ছুটির দিনে ৪০০/৫০০ পর্যন্ত পর্যটকের আগমন ঘটে রেমাক্রিকুম, নাফাকুম, সাবাকুম, বেলাকুম, নামিয়াকুম, ল্যাক্ষ্যংঝর্ণা, খামলাই ঝর্ণা দেখতে। তারমতে ‘পর্যটন উন্নয়ন হলে এলাকার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন ঘটবে। তবে এজন্য দ্রুত সড়ক যোগাযোগ স্থাপন করতে হবে।’
দিন দিন বান্দরবানের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে পর্যটকদের আগমনের পাশাপাশি নদীপথে ভ্রমন আর বিভিন্ন ঝর্না দেখার জন্য পর্যটকেরা এখন থানচির বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে ছুটে যাচ্ছে। পর্যটকদের কাছে সবচেয়ে ভ্রমনের উপযুক্ত স্থান হিসেবে থানচির তিন্দু, রেমাক্রী, ছোটমদক, বড়মদক, নাফাকুম, সাতভাইকুমসহ নাম না জানা অনেক স্থানই এখন প্রিয় পর্যটনস্পট হিসেবে সমাধিত হচ্ছে , আর একদিন এই পর্যটন কেন্দ্রগুলোকে নিয়ে আরো বেশি ব্যবসা ও পর্যটকদের উন্নত সেবা প্রদানে স্বপ্ন দেখেন দূর্গম এই রেমাক্রির সাধারণ ব্যবসায়ীরা।