॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের হত্যা ও হামলা-নির্যাতনের প্রতিবাদে যুবলীগের ডাকে রাঙ্গামাটিতে বৃহস্পতিবার সকাল-সন্ধ্যা হরতাল শান্তিপূর্ণ ভাবে পালিত হয়েছে। হরতালের সমর্থনে যুবলীগ ও ছাত্রলীগসহ অঙ্গসংগঠনের নেতা কর্মীরা সকাল থেকে শহরের বিভিন্ন অংশে রাস্তায় অবস্থান নিয়ে পিকেটিং ও মিছিল করে। এছাড়া রাঙ্গামাটি চট্টগ্রাম সড়কের বিভিন্ন অংশে হরতালকারীরা রাস্তায় রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করে।
হরতাল চলকালে রাঙ্গামাটি শহরে অভ্যন্তরীন ও দূরপাল্লার রুটে সব ধরণের যান চলাচল বন্ধ থাকে। নৌ পথে উপজেলাগুলোতে যাত্রীবাহী ও পন্যবাহী কোন লঞ্চ ছাড়েনি। শহরের বৃহত্তর বনরূপা, রিজার্ভ বাজার,তবলছড়ি, কলেজ গেইট, ও ভেদভেদী বাজারে সব দোকান পাট ও মার্কেট গুলো বন্ধ থাকে। এছাড়া অফিস আদালত ও ব্যাংকে কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা উপস্থিত থাকলেও লোকজন না থাকায় কাজকর্ম তেমন হয়নি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর চলমান বার্ষিক পরীক্ষার বৃহস্পতিবারের পরীক্ষা। হরতালের কারণে স্থগিত করা হয়।
হরতাল চলাকালে শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এছাড়া শহর এলাকায় আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সদস্যদের টহল জোরদার করা হয়। বিকেলে হরতাল পালন শেষে হরতাল করীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে বনরূপা বিএম শপিং কমপ্লেক্সের সামনে সমাবেশ করে।
রাঙ্গামাটি পৌর মেয়র ও জেলা যুবলীগ সভাপতি আকবর হোসেন চৌধুরী সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, রাঙ্গামাটি জেলা আওয়ামীলীগে সাধারণ সম্পাদক ও রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদ সদস্য হাজী মুছা মাতব্বর, পৌর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদাক মনসুর আলী, যুবলীগ নেতা জামাল উদ্দিন, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুর জব্বার সুজন।
সমাবেশে বক্তারা দলীয় নেতাকর্মীদের উপর হত্যা ও হামলার ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার করে দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবী জানান।
এদিকে সহিংস হামলায় রাঙ্গামাটি মহিলা আওয়ামীলীগের এক নেত্রী গুরুতর আহত হয়েছেন। বুধবার (৬ ডিসেম্বর) মধ্যরাতে রাঙ্গামাটি শহরের বিজয় নগর এলাকায় একদল মুখোশধারী সন্ত্রাসী রাঙ্গামাটি জেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি ঝর্ণা খীসাসহ তার স্বামী জিতেন্দ্র লাল চাকমা ও ছেলে রণবিষ্ণু চাকমাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে আহত করে।
বৃহস্পতিবার ভোরে গুরুতর আহত অবস্থায় ঝর্ণা খীসাকে প্রথমে রাঙ্গামাটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে তার অবস্থা অবনতি ঘটলে তাকে বৃহস্পতিবার দুপুরে আশংকা জনক অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
গত মঙ্গলবার বিলাইছড়িতে কুপিয়ে আহত করা বিলাইছড়ির আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি রাসেল মারমাকেও উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রামে পাঠানে হয়।
এদিকে, বৃহস্পতিবার সকালে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত জুরাছড়ি আওয়ামী যুবলীগ নেতা অরবিন্দ চাকমার মরদেহ দাহ ক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। সাবেক পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার ও আওয়ামীলীগ নিখিল কুমার চাকমাসহ জেলা আওয়ামীলীগের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ প্রয়াতের অন্তের্ষ্ঠিক্রিয়া অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
গত মঙ্গলবার থেকে জুরাছড়িতে যুবলীগ নেতাকে হত্যা ও বিলাইছড়ি, রাঙ্গামাটির আওয়ামীলীগের নেতা নেত্রীর উপর সশস্ত্র হামলা চালানোর ঘটনায় আওয়ামীলীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।
রাঙ্গামাটিতে হঠাৎ সহিংসতা দেখা দেয়ায় সাধারণ মানুষও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। এই সহিংসতা বন্ধ না হলে রাঙ্গামাটির আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা অসম্ভব হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
এদিকে, গত মঙ্গলবার রাঙ্গামাটির নানিয়ারচরে প্রতিপক্ষের গুলিতে অনাদি রঞ্জন চাকমা নামে সাবেক এক ইউপি মেম্বার নিহত হওয়ার প্রতিবাদে নানিয়ারচরের প্রধান সড়কে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত অর্ধদিবস সড়ক ও নৌপথ অবরোধ পালন করে নব্য মুখোশ বাহিনী প্রতিরোধ কমিটি। তবে কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।