
॥রাহুল বড়–য়া ছোটন, বান্দরবান॥ সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, খালেদা জিয়ার নোটিশ আইনী বিষয় তা আইনী ভাবে মোকাবেলা করা হবে। কলকাতায় এই নোটিশ শুনে আমার মনে হয়েছে চোরের মায়ের বড় গলা। আইনি ভাবে এই নোটিশ প্রমান করতে না পারলে সেটার জন্য আমরা ক্ষমা চাইব আর যদি তারা প্রমান করতে না পারে তাহলে মিথ্যাচারের জন্য তাদেরকে শেখ হাসিনা নয় পুরো জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে বান্দরবানে ১৪০তম জুম খাজনা আদায়ের ঐতিহাসিক অনুষ্ঠান রাজপুণ্যাহ মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। মন্ত্রী আরো বলেন, শান্তি চুক্তির পর পাহাড়ে সর্বত্র উন্নয়ন এখন দৃশ্যমান। যারা শান্তি চায় না তারা পাহাড়কে অশান্ত করার ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে। পাহাড়ে অশান্তি সৃষ্টিকারী দুর্বৃত্তদের প্রতিহত করা হবে। তিনি আরো বলেন, শান্তি চুক্তির যেসব ধারা এখনো বাস্তবায়ন হয়নি তার প্রতিটি ধারা অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়ন করা হবে।
১৪০তম এই রাজপূন্যাহ অনুষ্ঠানে বোমাং সার্কেল চীফ রাজা উ: উ চ প্রুর সভাপতিত্বে এসময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি।
এসময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অর্থ মন্ত্রণালয় সর্ম্পকিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ড: মো: আব্দুল রাজ্জাক এমপি,পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি, চট্টগ্রাম ২৪ পদাতিক ডিভিশনের এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল মো: জাহাঙ্গীর কবির তালুকদার, সেনা রিজিয়নের ৬৯ পদাতিক ব্রিগেডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ যুবায়ের সালেহীন এসইউপি,এনডিইউ, পিএসসি, বিজ্ঞ জেলা ও দায়রা জজ লা মং, পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা, জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক, পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায়, রাজ কুমার চ হ্লা প্রু জিমি, রাজ কুমার মং ঙোয়ে প্রু এবং দেশ-বিদেশ থেকে আগত অতিথিরা। এছাড়াও এই অনুষ্ঠানে যোগ দেন জেলার ১০৯টি মৌজার হেডম্যান এবং কারবারীরা।
সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি বলেন, পার্বত্য এলাকার মানুষের প্রতি প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা খুবই আন্তরিক বলেই আজ পার্বত্য এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হচ্ছে। জননেত্রী শেখ হাসিনা পার্বত্য এলাকার মানুষের খুব কাছের মানুষ বলেই পার্বত্য এলাকায় উন্নয়নের জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। তিনি পার্বত্য এলাকার মানুষের কল্যানের জন্য নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এসময় তিনি বলেন, শান্তি চুক্তির ধারা যেগুলো বাস্তবায়ন হয়নি সেগুলো ও বাস্তবায়ন করছে সরকার। তিনি আরো বলেন, অযথা শান্তি চুক্তির বাস্তবায়নের জন্য আন্দোলন করে বিশৃঙ্খলা করে কোন লাভ নেই। শান্তি চুক্তি করেছিল আওয়ামীলীগ সরকার সেই শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন করছে আওয়ামীলীগ সরকার।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি বলেন, পাহাড়ের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে নিরলস ভাবে কাজ করছে আওমীলীগ সরকার। এসময় তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অন্যান্য জেলার সাথে তালে তাল মিলিয়ে পার্বত্য অঞ্চলের শিক্ষার আলোই আলোকিত হচ্ছে পাহাড়ের শিক্ষার্থীরা। তারেই ধারাবাহিকতায় পার্বত্য অঞ্চলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, বিদ্যুৎ থেকে শুরু করে সার্বক্ষেত্রে উন্নয়ন সাধিত হচ্ছে।
বোমাং রাজা উ চ প্রু তার সভাপতির বক্তব্যে বলেন, পার্বত্য অঞ্চলে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতি গোষ্ঠীর বসবাস। কিন্তু এই জাতি গোষ্ঠীর সংস্কৃতিক ও ঐতিহ্য আজ বিলুপ্তির পথে। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতি গোষ্ঠী গুলোকে যদি আমরা ঠিকিয়ে রাখতে চায় তাহলে সরকারকে আরো বেশী উদযোগী হতে হবে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, বান্দরবান অঞ্চলের বিভিন্ন জাতি সত্ত্বার সামাজিক বিচার আচার আমাদেরকে করতে হয়। কিন্তু সঠিক কোন তথ্য না থাকায় এই সমস্যা সমাধাণে আমাদের বেগ পেতে হচ্ছে। তিনি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতি গোষ্ঠী প্রবীণদের সাথে বসে তাদের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি সহ আচার অনুষ্ঠানের তথ্য গুলো লিপিবদ্ধ করতে সরকারের কাছে দাবী জানান তিনি।
বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে পার্বত্য জেলা বান্দরবানে শুরু হয়েছে উপজাতীয়দের সামাজিক এবং ঐতিহ্যবাহি জুমিয়া খাজনা আদায়ের অন্যতম উৎসব রাজ পূন্যাহ মেলা। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে এ উপলক্ষ্যে একটি শোভাযাত্রা বোমাং রাজার বাসভবন থেকে শুরু হয়ে রাজার মাঠের মূল অনুষ্ঠানস্থলে গিয়ে শেষ হয়। শোভাযাত্রায় অংশ নেন রাজকর্মচারী, পাইক পেয়াদা, দুরদুরান্ত থেকে আসা বিভিন্ন সম্প্রদায়ের প্রজাসাধারণ ছাড়াও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গরা।
১৭ তম বোমাং রাজা উ চ প্রু’র আমলে এটি ৪র্থ তম রাজপুণ্যাহ মেলা। দুপুরে উদ্বোধনী মঞ্চে অতিথিদের ক্রেষ্ট দিয়ে বরণ করেন বোমাং রাজা উ চ প্রু। এতে রাজ পরিবারের ঐতিহ্য তুলে ধরে স্বাগত বক্তব্য রাখেন চাম্বি মৌজার হেডম্যান ও রাজপুত্র টিং মং প্রু চৌধুরী। অনুষ্ঠান পরিচালনায় ছিলেন ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠি সাংস্কৃতিক ইনিষ্টিটিউটের পরিচালক মং নু চিং।
মেলায় প্রায় ৩ শতাধিক বিভিন্ন পণ্যের দোকান, মৃত্যুকুপ, লাকি কুপন, যাত্রাসহ নানা ধরনের খেলাধুলা ও বিচিত্রানুষ্ঠানের আয়োজন রয়েছে। আগামী ৩ দিন এই অনুষ্ঠান চলবে। তবে লোকজনের সমাগম থাকলে সময় বাড়ানো যেতে পারে বলে জানান মেলা সংশ্লিষ্টরা।