প্রাণের ভয়ে আওয়ামীলীগ ছাড়ছে পাহাড়ী জনগোষ্ঠী

॥ নন্দন দেবনাথ ॥ ক্রমশ অস্থির হয়ে উঠছে পার্বত্য চট্টগ্রাম। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর পাহাড়ের মাটিতে আবারো বারুদের গন্ধ। আঞ্চলিক সংগঠন গুলো আবারো দ্বন্ধ সংঘাতে লিপ্ত হচ্ছে। পাহাড়ের খুন, অপহরণ, সংঘাত দিন দিন বেড়েই চলেছে। শুধুমাত্র ডিসেম্বর মাসেই ৩ জনতে হত্যা ও বেশ কয়েকজনকে আহত ও অপহরণ করা হয়েছে। সাথে সাথে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামীগের নেতাকর্মীদের হত্যা ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের মধ্যেমে দল থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করতে এমন টাই বলেছেন সদ্য পদত্যাগ করা নেতাকর্মীরা।
দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর পার্বত্য অঞ্চল আবারো অস্থির হয়ে উঠেছে। পাহাড়ের মাটিতে এখন বারুদের গন্ধ ও রক্তের দাগ। একটি রক্তের দাগ শুকাতে না শুকাতে ভঙ্গ হচ্ছে আরেক জনের স্বপ্ন। খালী হচ্ছে মা বাবার কোল, সন্তান হারাচ্ছে তার পিতাকে। এ অবস্থায় পাহাড়ের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরো বাড়াতে সরকারের প্রতি আবেদন জানিয়েছেন পাহাড়ের সাধারণ মানুষ।
ডিসেম্বর মাসের প্রথম দিকে নানিয়ারচর উপজেলায় ইউপিডিএফ নেতা অনাদি রঞ্জন চাকমাকে হত্যা, এইক দিন জুরাছড়ি উপজেলায় আওয়ামীলীগ নেতাক অরবিন্দু চাকমাকে হত্যা, বিলাইছড়ি উপজেলার আওয়ামীলীগ নেতা রাসেল মারমাকে গুরুত আহত, ৭ ডিসেম্বর মধ্য রাতে রাঙ্গামাটি সদর শহরের মহিলা আওয়ামীলীগের নেতা ঝর্না চাকমাকে গুরুত আত করা হয়। ১৬ ডিসেম্বর রাঙ্গামাটি সদর উপজেলার বন্দুক ভাঙ্গায় ইউপিডিএফ নেতা অনল বিকাশ চাকমা ওরফে প্লুটো চাকমা নামে আরেক নেতাকে হত্যা করা হয়। এছাড়া কয়েক দফায় বন্দুক যুদ্ধে কয়েক হাজার রাউন্ড গুলি বিনিময় এবং ২০ জনের অধিক পাহাড়ী জনপ্রতিনিধি সহ সাধারণ নেতাকর্মীদেরকে অপহরণ করা হয়।
পাহাড়ের দীর্ঘদিন অস্ত্রবিরতী থাকলেও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আবারো সংঘাত ময় পাহাড়। এই অবস্থায় প্রতিনিয়ত হত্যা গুম, অপহরণ এবং হামলার ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। গত কয়েকদিনে বেশী অস্তির হয়ে উঠেছে রাঙ্গামাটি সদরের বন্দুক ভাঙ্গা, নানিয়ারচর, জুরাছড়ি সহ কয়েকটি উপজেলা। প্রতিনিয়ত বন্দুক যুদ্ধে লিপ্ত হচ্ছে আঞ্চলিক সংগঠন গুলো। গত ২৪ ডিসেম্বর নানিয়ারচর উপজেলায় কয়েক শত রাউন্ড গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটে। স্থানীয় গ্রামবাসীর সুত্র দিয়ে এই বন্দুকুুদ্দে ঘটনায় ২ জন নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেরেও কেউ নিশ্চিত করতে পারেনি। এছাড়া প্রতিনিয়ত অন্যান্য এলাকায়ও হত্যা ও অপহরণের ঘটনা ঘটছে। তবে কেউ এই হত্যাকান্ডে কোন মামলা করতে সাহস পাচ্ছে না। স্বজন হারিয়ে নিজের প্রাণের ভয়ে মামলা করতেও ভয় পাচ্ছে সাধারণ মানুষ। তাই এই সকল হত্যাকান্ডের কোন মামলা হয় না।
এদিকে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে পাহাড়ের আঞ্চলিক সংগঠণ গুলোর চাপের মুখে দল ত্যাগ করছেন রাঙ্গামাটি আওয়ামী লীগের পাহাড়ি নেতা-কর্মীরা। গত ১৫ দিনেই রাঙ্গামাটি সদরসহ চার উপজেলার ৫৪৮ জন পাহাড়ি নেতা-কর্মী দল ছেড়েছেন। কেউ কেউ বলছে দল ত্যাগ করছে না নিজেকে আত্ম রক্ষার জন্য আওয়ামীলীগ ছাড়ছে।
আগামী সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামীলীগকে কোনঠাসা করে জেএসএস একক কতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে নির্বাচনে জয়ী হওয়াটা একেবারেই নিশ্চিত করতে চায়। তাই খুন-হত্যাচেষ্টা, দলত্যাগে বাধ্য করা আর নৌযোগাযোগ বন্ধ করে মনস্তাত্তিক চাপ তৈরি করে আওয়ামীলীগ ভাঙার কৌশল নিয়েছে জেএসএস- এমন ধারণা এখন ‘ওপেন সিক্রেট’। আওয়ামীলীগ বলছে অবৈধ অস্ত্র হাতে থাকায় ‘সশস্ত্র দুঃসাহস’ দেখাচ্ছে আঞ্চলিক দলটি।
চলমান এই পরিস্থিতি নিয়ে রাঙ্গামাটি জেলা আওয়ামী লীগ গত ৯ ডিসেম্বর রাতে একটি বিবৃতি দেয়। এতে অভিযোগ তোলে বলা হয়, হত্যার ভয় দেখিয়ে জেএসএস অস্ত্রের মুখে ও নানাভাবে পাহাড়ি নেতা-কর্মীদের জোর করে আওয়ামীলীগ ছাড়তে বাধ্য করছে। এর তিন দিনের মাথায় ১২ ডিসেম্বর পাল্টা বিবৃতিতে এই অভিযোগ অস্বীকার করে বসে জেএসএস। এতে বলা হয়, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীকে ভয়ভীতি বা চাপ দেওয়ার ‘গুজব’ তুলে জেএসএস’র বিরুদ্ধে ‘অপপ্রচার’ চালাচ্ছে আওয়ামীলীগ। মূলত অভ্যন্তরীন কোন্দল আর পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন না করায় হতাশা থেকেই স্বেচ্ছায় দল ছাড়ছেন আওয়ামীলীগের পাহাড়ি নেতা-কর্মীরা।
সাম্প্রতিককালের বিবাদের সূত্রপাত হয় গত ৫ ডিসেম্বর। ওইদিন সন্ধ্যায় গুলি করে হত্যা করা হয় রাঙ্গামাটির জুরাছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অরবিন্দু চাকমাকে। একই দিনে বিলাইছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রাসেল মারমাকে হত্যার চেষ্টা করে। পরদিন রাতে রাঙ্গামাটি শহরেই জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ঝর্ণা খীসাকে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করে দুর্বৃত্তরা। এসব ঘটনায় তিনটি মামলা দায়ের করে পুলিশ। ওই মামলায় ৮ ডিসেম্বর গ্রেফতার হন বিলাইছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেএসএস’র উপজেলা সভাপতি শুভ মঙ্গল চাকমা ও তার ছেলেসহ ১৯ নেতা-কর্মী। শুভ মঙ্গল আওয়ামীলীগ নেতা রাসেল মারমার হত্যাচেষ্টা মামলার এজাহারভূক্ত আসামী।
১০ ডিসেম্বর আদালতে এদের জামিন আবেদন নাকচ হলে ১১ ডিসেম্বর রাতে মোবাইল ফোনে নৌযান চালকদের হুমকি দেয় অজ্ঞাত ব্যক্তিরা। এতে পরদিন থেকে জুরাছড়ি ও বিলাইছড়ি উপজেলার সাথে রাঙ্গামাটি জেলা সদরের সবধরণের নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। ৮দিনের চেষ্টায় স্থানীয় প্রশাসন নৌ-যোগাযোগ স্বাভাবিক করেন ২০ ডিসেম্বর।
এই তিন ঘটনার পর থেকে আওয়ামী লীগের পাহাড়ি নেতা-কর্মীদের মধ্যে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অরবিন্দু খুনের দুদিন পর ৮ ডিসেম্বর জুরাছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অনিল কুমার চাকমাসহ ১২ নেতা-কর্মী বিবৃতি দিয়ে দল ছাড়ার ঘোষণা দেন। এরপর ১০ ডিসেম্বর ১১১ জন পদত্যাগ করেন। ১১ ডিসেম্বর ৬৬ সদস্য একযোগে পদত্যাগ করলে বিলুপ্ত হয়ে যায় জুরাছড়ি উপজেলা কৃষক লীগ। ১২ ডিসেম্বর ৮৮ জন, ১৩ ডিসেম্বর ৭৫ জন, ১৪ ডিসেম্বর ৪৩ জন এবং ১৫ ডিসেম্বর ১০ জন দল ছাড়েন। ২০ ডিসেম্বর উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক প্রমত কান্তি চাকমাসহ তিন নেতা পদত্যাগ করেন ।
চলমান এই পরিস্থিতি নিয়ে নিজের মতো ব্যাখ্যা দেন স্থানীয় সরকার পরিষদের (বর্তমানে জেলা পরিষদ) সাবেক চেয়ারম্যান গৌতম দেওয়ান। তিনি বলেন, আওয়ামীলীগ সরকার চুক্তি স্বাক্ষর করেছে, তাদের দায়িত্ব চুক্তি বাস্তবায়ন করা। কিন্তু সরকার চুক্তি বাস্তবায়নে দেরি করছে এবং চুক্তির মৌলিক বিষয় বাস্তবায়ন না করে চুক্তি বাস্তবায়ন হয়েছে বলে মিথ্যাচার করছে। এতে চুক্তির পক্ষের লোকদের মাঝে অবিশ্বাস এবং আস্থার সংকট দেখা দিয়েছে। দুই পক্ষের বিরোধ পার্বত্য পরিস্থিতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে উল্লেখ করে তিনি বলেন চুক্তি বাস্তবায়নে যত দেরি হবে সংকট তত গভীর হবে।
তবে জেএসএস’র কেন্দ্রীয় সহতথ্য ও প্রচার সম্পাদক সজীব চাকমা এটাকে শাসক দলের ‘অপপ্রচার’ বলে দাবী করেন। তিনি বলেন আ.লীগ নিজেদের দুর্বলতা ও কোন্দল ঢাকার জন্য জেএসএস এর ওপর দায় চাপাচ্ছে। ২০ বছরেও চুক্তি পূর্ণ বাস্তবায়ন না হওয়ায় হতাশা ও ক্ষোভ থেকেই সাধারণ পাহাড়িরা আ.লীগ থেকে পদত্যাগ করছেন। যে সকল হত্যা কান্ড হচ্চে তা বিচ্ছিন্ন ঘটনা।
জেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক মূছা মাতব্বর বলেন, জেএসএস এর মূল টার্গেট আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন। উপজেলাগুলো আ.লীগ শূণ্য করে আ.লীগের প্রার্থীর নিশ্চিত বিজয় ঠেকাতেই নেতা-কর্মীদের দল ছাড়তে বাধ্য করছে তারা। আঞ্চলিক সংগঠন গুলো পাহাড়ের অবৈধ অস্ত্র নিয়ে প্রতিনিয়ত সাধারণ মানুষের উপর ঝাপিয়ে পড়ছে। পাহাড়ে হত্যা, খুন গুম দিন দিন বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষ অতিষ্ট হয়ে উঠেছে।

দারুল আরকাম প্রকল্পের মাধ্যমে উন্নত জাতি গঠনে কাজ করছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন ——বোরহান উদ্দিন উন্নয়নমূখী পার্বত্য চট্টগ্রাম গড়তে হলে প্রশিক্ষণের প্রকৃত জ্ঞানকে কাজে লাগাতে হবে —-এ কে এম মকছুদ আহমেদ প্রশিক্ষণের জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে আপনারা শিক্ষার্থীদের প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবেন ——মুহাম্মদ ইকবাল বাহার চৌধুরী

Archive Calendar
Mon Tue Wed Thu Fri Sat Sun
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
252627282930