
হাটহাজারী প্রতিনিধি : দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মŤস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে কার্প জাতীয় মা মাছ ডিম ছেড়েছে। গত কয়দিন পূর্বে ধমকা,ঝড়ো হওয়া ও বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হওয়ায় ডিম সংগ্রহকারীরা আমাবস্যা তিথির পর অষ্টমী তিথির সময় মা মাছ নদীতে ডিম ছাড়তে পারে বলে ধারণা করেছিল নদীতে মা মাছের আনাগোনা দেখে। বাংলা বছরের বৈশাখ মাসের প্রথম সপ্তাহে বৃষ্টির আলামত দেখে ডিম সংগ্রহকারীরা নদীতে মা মাছ ডিম ছাড়তে পারার ধারণা করেন।
গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ২ টা,সোয়া ২ টা এবং আড়াইটার সময় নদীতে জোয়াড় শুরু হলে আজিমারঘাট , রামদাশ মুন্সিরহাট,বাড়িয়াঘোণা এলাকায় মা মাছ ডিম ছাড়তে শুরু করে। সংবাদ দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে ডিম আহরণকারীরা ডিম সংগ্রহ করতে প্রস্তুতি নেয়। নদীর নিচের অংশে ডিম ছাড়লেও জোয়াড়ের টানে মা মাছের ডিম নদীর উপরী অংশে চলে আসে। এতে করে অংকুরীঘোণা সুইচ গেইট এলাকা, ছিপাহীরঘাট, গড়দুয়ারা নয়াহাট, কান্তারআলী চৌধুরীহাট, পাতাইরজ্জের টেক, নাপিতের ঘাট, কুমারখালী, খলিফারঘোণা, শাহ্মাদারী, আমতুয়া, মগদাই সুইচ গেইট, পোড়াকোপালীর মুখ, কাগতিয়ামুখ, কেরামত আলীর ঘাট প্রভৃতি এলাকায় ৪ শ ৫ টি নৌকায় ১ হাজার ২শ ১৫ জন লোক ডিম সংগ্রহ করে। প্রতি নৌকা থেকে গড়পড়তা ৫ বালতি হারে ডিম পাওয়া যায় বলে ডিম আহরণকারীরা জানান। এতে করে ডিম আহরণের পরিমাণ ২ হাজার ২৫ বালতি হতে পারে। হালদা নদীর দুইপাড়ে স্থাপিত ৬টি হ্যাচারীতে সংগৃহীত ডিম ইতিমধ্যে রেণু ফোটানোর উপযোগী করে তোলা হয়েছে।
কুমারখালী-রামদাশহাট এলাকার স্বেচ্ছা সেবক ও ডিম সংগ্রহকারী মো: ইলিয়াছ জানান, তিনি এবার দুইটি নৌকার মাধ্যমে প্রায় ৮ বালতি ডিম সংগ্রহ করেছে নদী থেকে।তিনি ও এবারের ডিম ছাড়ার পরিমাণ বেশী বলে উল্লেখ করেন।
হাটহাজারী উপজেলা মŤস্য কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) কাজী আবুল কালাম জানান, এবারে নদীতে ডিম আহরণের পরিমাণ মোটামুটি ভাল। তিনি মŤস্য বিভাগের কর্মরতদের নিয়ে মদুুনাঘাট হ্যাচারীতে ডিম ফোটানের ব্যাপারে হ্যাচারী সংস্কার ও সংরক্ষণ করছে বলে উল্লেখ করেন।
চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক ও হালদা নদী গবেষক অধ্যাপক মঞ্জুরুল কিবরিয়া জানান, তার মতে বিগত ১০ বছরের মধ্যে এবার সব চেয়ে বেশী ডিম সংগৃীত হয়েছে। এবার ৪ শ ৫ টি নৌকার মাধ্যমে হাজার খানেক লোক হালদা নদী থেকে ডিম সংগ্রহ করেছে। এবারের সংগৃীত ডিমের পরিমাণ আনুমানিক ২২ হাজার ৬ শ কেজি। সরকারের সদ্ইচ্ছা, প্রধান মন্ত্রীর কার্যালয়ের কঠোর নিদের্শনার কারণে ড্রেজারের মাধ্যমে বালু উত্তোলনের পরিমাণ কমে যাওয়া,ইঞ্জিন চালিত নৌযান চলাচল বন্ধ,মা মাছ শিকারের উপর নজরধারী,সর্বপরী নদী পাহাড়ার ব্যবস্থার কারণে মা মাছের অবাধ বিচরণ এর কারণে এবার নদীতে সব চেয়ে বেশী ডিম ছেড়েছে মা মাছ। সর্বমহলের সহযোগীতার কারণে নদীতে ডিম ছাড়ার পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে । এ অবস্থা ধরে রাখা গেলে ভবিষ্যতে ডিম ছাড়ার পরিমাণ আরো বৃদ্ধি পাবে বলে তিনি আশাবাদী বলে উল্লেখ করেন।