॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ পাহাড়ের আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল গুলোর আধিপত্য বিস্তার ও হুমকীর কারণে বাঘাইছড়ির দুর্গম কয়েকটি ইউনিয়নের প্রায় ৫৬ টি পরিবার গৃহীন হয়ে বাঘাইছড়ি সদরে আশ্রয় নিয়েছে। পাহাড়ের বৈসাবী উৎসবের পর থেকে পাহাড়ের আঞ্চলিক দল গুলোর দ্বন্ধ সংঘাতের কারণে এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয়েছে পরিবার গুলো। বর্তমানে বাঘাইছড়ির বাবু পাড়া কমিউনিটি সেন্টারে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন পরিবার গুলো।
আঞ্চলিক দল গুলোর কোন্দলের জের ধরে উপজেলার বঙ্গলতলী, সাজেক, রুপকারী, বালুখালী, ডাংগাছড়া, হাগলাছড়া, করেঙ্গাতলী ও বি-ব্লক এলাকার ৫৬ টি পরিবারের প্রায় দেড় শতাধিক লোক নির্যাতন নিপীড়ন সহ্য করতে না পেরে ঘর ছেড়ে উপজেলা সদরের বাবুপাড়া কমিউনিটি সেন্টারে আশ্রয় নিয়েছে।
আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়া উপজাতীয় পরিবার গুলোর চোখে মুখে এখন হতাশার ছাপ। বাড়ীঘর ফেলে গরু বাচুর ফেলে নিজেদের সোনার সংসার ফেলে অসহায়ের মতো জীবন যাপন করছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করবে তা তারা খুজে পাচ্ছে না। কেউ মুখ খুলতে রাজি হচ্ছে না। কেউ বলছে জেএসএস সংস্কারের ভয়ে ঘর ছাড়া, কেউ বলছে ইউপিডিএফ এর ভয়ে ঘর ছাড়া কেউ বলছে আঞ্চলিক দল গুলোর ভয়ে সব ফেলে চলে এসেছি। কিছুই করার নেই। বাড়ী
রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার বঙ্গলতলী এলাকার বাসিন্দা সোনাবী চাকমা তার দেড় বছরের শিশুকে নিয়ে উদ্বাস্তু জীবন যাপন করছেন। যে শিশু এখনও পৃথিবীর হালচাল সম্পর্কে কিছুই জানে না, সে কিনা এখনই প্রাণনাশের হুমকি পেয়ে বসেছে। পার্বত্য এলাকার আঞ্চলিক দলগুলোর অন্তঃকোন্দলের কারণে বেশ কিছুদিন ধরেই উত্তপ্ত এ অঞ্চল।
দেড় বছরের শিশু বিদ্যা সাগর চাকমাকে কোলে নিয়ে জীবন বাঁচাতে আশ্রয় কেন্দ্রে আসা সোনাবী চাকমা বলেন, আমার স্বামী বান্টর চাকমা। তিনি পেশার একজন জুমচাষি। তিনি জেএসএস (এম এ লারমা) দলটি সমর্থন করার কারণে তাকে ইউপিডিএফ’র লোকেরা মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে। আমাদের পরিবারের সকলকে মেরে ফেলবে বলেও হুমকি দিয়েছে। এমনকি আমাদের গ্রামে থাকা সকল মানুষকে তারা হুমকি দিয়েছে।
দুই বছরের শিশু অর্জুন চাকমাকে সঙ্গে নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে জীবনের নিরাপত্তার জন্য আসা পলাশি চাকমা বলেন, আমার স্বামী স্থানীয় সংগঠন জেএসএস (এম এ লারমা) সমর্থন করাই ইউপিডিএফ’র (প্রসিত) নেতাকর্মীরা মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে বেশ কয়েকদিন ধরে। তাই এখানে এসে আশ্রয় নিয়েছি।
তিনি বলেন, ঘরবাড়ি ছেড়ে এখানে থাকতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। আমরা চাই সরকার যাতে আমাদেরকে নিরাপত্তা দেয়। তাহলে আমরা আমাদের নিজ নিজ ঘরবাড়িতে ফিরে গিয়ে থাকতে পারবো।
এ বিষয়ে ইউপিডিএফ (প্রসিত) সংগঠক মাইকেল চাকমা বলেন, বাঘাইছড়িতে কারা এসেছে তা আমার জানা নেই। এরা কারা আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে তা আমরা জানি না। অন্য কোন রাজনৈতিক দল নিজেদের উদ্দেশ্যে ফায়দা লোটার জন্য এসব করছে তারা।
এই বিষয়ে বাঘাইছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বাবু পাড়া কমিউনিটি সেন্টারে বেশ কয়েকটি উপজাতীয় পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। আমরা খোঁজ নিয়েছি, তারা বাঘাইছড়ি বিভিন্ন দুর্গম গ্রামের লোকজন। আঞ্চলিক দল গুলোর আধিপত্য বিস্তারের কারনে প্রাণের ভয়ে তারা এখানে আশ্রয় নিয়েছে। আমরা তাদের বলেছি তারা আইনী সহযোগিতা চাইলে আমরা তা দিতে প্রস্তুত রয়েছি।
বাঘাইছড়ি উপজেলার নির্বাহী অফিসার মো. নাদিম সারোয়ার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, বাঘাইছড়ি উপজেলার বেশ কিছু গ্রামের কয়েকটি পরিবার বাবু পাড়া কমিউনিটি সেন্টারে আশ্রয় নিয়েছে আমরা জেনেছি। তারা আঞ্চলিক দলের বিরুদ্ধে সাংবাদিক সম্মেলনও করেছে। বর্তমানে তারা এখানে নেই। তারা তাদের উপজেলা সদরের আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে আছে বলে আমরা শুনেছি। ইতোপূর্বে তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে থানায় একটি মামলা হয়েছে। মামলার তদন্ত শেষে আসল কারণটি জানতে পারবো। তবে তারা বাংলাদেশের নাগরিক, সে হিসেবে আমরা মানবিক কারণে তারা সহযোগিতা চাইলে আমরা সহযোগিতা দেবো।