চট্টগ্রাম : যেকোন মূল্যে দখল ও দুষণের কবল থেকে সকল নদ-নদীগুলোকে রক্ষা করতেই হবে–নদী রক্ষা কমিটি

সরকারের জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার বলেছেন, অবৈধ স্থাপনা, দখল, ময়লা আবর্জনা, বালু উত্তোলন, শিল্প কারখানা বর্জ্য পদার্থ ও জাহাজের পোড়া তেল নদীতে ফেলার কারনে কর্ণফুলী ও হালদাসহ দেশের সকল নদ-নদী গুলোর আসল রূপ পাল্টে যাচ্ছে। ভরাটের কারণে নদী গুলো ক্রমান্বয়ে ছোট হয়ে আসছে। বিভিন্ন কারণে দেশের নদীগুলো পরিণত হচ্ছে দুর্বৃত্তায়নের অভয়ারণ্যের। নদীর আশ পাশে গড়ে উঠেছে অবৈধ ইট ভাটা। এসব বিষয় বিবেচনায় এনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশের নদ-নদী বাঁচাতে নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছেন। অবৈধ দখলদারদের কবল থেকে উদ্ধার ও দুষণ মুক্ত করতে পারলে নদী তার নিজস্ব স্মৃতি চিহ্ন ফিরে পাবে। নদীমাতৃক আমাদের বাংলাদেশ। যেকোন মূল্যে দখল, দুষণের কবল থেকে কর্ণফুলী ও হালদাসহ সকল নদ-নদীগুলো রক্ষা করতেই হবে। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন সকল প্রকার সহযোগিতা দেবে। নদীর দু’পাড়ে বাঁধ দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে যাতে কেউ অবৈধভাবে দখল করতে না পারে। এরপরও যদি নদী দখল ও দুষণে কোন লিপ্ত থাকে তাদের ছাড় দেয়া হবে না। একই সাথে নদীর দু’পাড় ঘিরে যারা বসবাস করছে তাদেরকে উচ্ছেদ করে পুনর্বাসনের বিষয়ে সরকারকে অবহিত করা হবে। আমরা সবাই এ মাটির সন্তান, এ দেশের সন্তান। দেশকে বাঁচাতে হলে নদীকে বাঁচাতে হবে। এ জন্যে নদীর দখল-দূষণকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রয়োজনে তালিকা করে দখল-দূষণকারীদের নাম-পরিচয় মিডিয়ায় ছাপাতে হবে। আজ ২২ মে ২০১৮ ইং মঙ্গলবার সকাল ১০টায় চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে বিভাগীয় কমিশনার অফিস আয়োজিত চট্টগ্রাম বিভাগাধীন ‘নদ-নদীর বর্তমান অবস্থা, বিদ্যমান সমস্যা এবং সমস্যা সমাধানে করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এসব কথা বলেন। সেমিনারের এবারের প্রতিপাদ্য বিষয়ক হচ্ছে- ‘বাঁচাও নদী, বাঁচাও মানুষ, বাঁচাও দেশ’। নদীর দখল ও দূষণের বিরুদ্ধে অভিযানের আগাম তথ্যদাতাকে খুঁজে বের করার তাগিদ দিয়ে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, প্রশাসনের কেউ দখল-দূষণের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার আগাম তথ্য না দিলে দখল-দূষণকারীরা সতর্ক হয় কীভাবে?
নদী থেকে ড্রেজিং করে মাটি উত্তোলনের পর তা নির্দিষ্ট স্থানে ফেলার তাগিদ দিয়ে নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, জরিপ ছাড়া কাজ করলে হবে না। পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করতে হবে। স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে ড্রেজিংয়ের মাটি কোথায় ফেলতে হবে, তা নির্ধারণ করুন। অধিক স্বচ্ছতার জন্যে পুরো কার্যক্রম ভিডিও করে রাখুন।
ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, জেলা প্রশাসন উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার জন্য ১ কোটি টাকা বরাদ্দ পায় না। টাকার অভাবে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করতে পারে না। অথচ সিডিএকে কোনো সুষ্ঠু পরিকল্পনা ছাড়াই ৫ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হলো? এত তড়িঘড়ি করার কী আছে। আই ডোন্ট আন্ডারস্ট্যান্ড! কমিশন ডোন্ট আন্ডারস্ট্যান্ড! তিনি আরো বলেন, চট্টগ্রাম নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে সিডিএকে ৫ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প দেওয়া হয়েছে। তারা এ লক্ষ্যে কাজও শুরু করেছে। কিন্তু খালের দুই পাড়ের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ না করে তারা কাজ শুরু করলো কীভাবে? অনুষ্ঠানের শুরুতে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল মান্নান কর্তৃক নদী সম্পর্কে লেখা পড়ে শোনান সহকারী কমিশনার (ভূমি-বাকলিয়া) সাবরিনা মুস্তফা।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল মান্নানের সভাপতিত্বে ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাকারিয়ার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) শংকর রঞ্জন সাহা। বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সার্বক্ষণিক সদস্য মো. আলাউদ্দিন, বিভাগীয় পরিচালক (স্থানীয় সরকার) দীপক চক্রবর্তী ও অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মো. নুরুল আলম নিজামী। নদ-নদীর বর্তমান অবস্থা ও সমস্যা বিষয়ে মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) মোমিনুর রশিদ আমিন এবং বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, চট্টগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী বিদ্যুৎ কুমার সাহা। উন্মুক্ত আলোচনা অংশ নেন- চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন, পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক মো. মকবুল হোসেন, মেট্রোঅঞ্চলের পরিচালক আজাদুর রহমান মল্লিক, নোয়াখালীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) কাজী মাহবুবুল আলম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) সোহেল মাহমুদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও হালদা বিশেষজ্ঞ ড. মনজুরুল কিবরীয়া, কোস্ট গার্ডের অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন শহীদুল ইসলাম, পানি উন্নয়ন বোর্ডের চীফ ইঞ্জিনিয়ার একেএম শামসুল করিম, চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা পরিদপ্তর চট্টগ্রামের আঞ্চলিক পরিচালক মো. আজিজ উদ্দিন, সিটি কর্পোরেশনের নগর পরিকল্পনাবিদ প্রকৌশলী রেজাউল করিম, সিএডিএ’র নির্বাহী প্রকৌশলী মনজুরুল হাসান, ওয়াসা প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম প্রমুখ। সেমিনারে বিভাগীয় ও জেলা প্রশাসেনর পদস্থ কর্মকর্তা, সিটি কর্পোরেশন, সিডিএ, ওয়াসা, পানি উন্নয়ন বোর্ড, পরিবেশ অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন দপ্তরের প্রতিনিধি ও গণমাধ্যম কর্মীরা অংশ নেন। সেমিনারের পূর্বে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউস থেকে নদ-নদীর দখল, দুষণ প্রতিরোধ ও নাব্যাতা রক্ষাথে জনসচেতনতা বৃদ্ধি মূলক এক বর্ণাঢ্য র‌্যালি বের করা হয়। র‌্যালিটি প্রধান প্রধান সড়ক ঘুরে পুনরায় সার্কিট হাউসে এসে শেষ হয়।

Archive Calendar
MonTueWedThuFriSatSun
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930