র্যাবের পরিচালক (গণমাধ্যম) মুফতি মাহমুদ খান বলছেন, ওই ব্যক্তি কোনো জঙ্গি দলের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন তারা।
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে দুটি জঙ্গি আস্তানায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ও গুলিতে সন্দেহভাজন চার জঙ্গিসহ পাঁচজনের মৃত্যুর ঠিক পরদিন শুক্রবার দুপুরে জুমার নামাজের আগে আগে আশকোনায় এ ঘটনা ঘটল।
র্যাব কর্মকর্তারা বলছেন, অজ্ঞাতপরিচয় ওই ব্যক্তির দেহ তার সঙ্গে থাকা বোমার বিস্ফোরণে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। আহত দুই র্যাব সদস্যকে ভর্তি করা হয়েছে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে।
ঘটনাস্থলের আশপাশে আরও বিস্ফোরক আছে কি না, তা খুঁজে দেখছেন র্যাবের বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দলের সদস্যরা। সারা দেশের সব কারাগারে জারি করা হয়েছে সতর্কতা।
মুফতি মাহমুদ খান বলেন, আশকোনার ওই কম্পাউন্ড র্যাব সদর দপ্তর নির্মাণের জন্য নির্ধারিত জায়গা। নির্মাণকর্মী ও তদারককারীরা ওই কম্পাউন্ডের ভেতরে অস্থায়ী ব্যারাকে থাকেন। পাশেই একটি জায়গা আছে, যেখানে তারা গোসল করা বা কাপড় ধোয়ার কাজটি করেন।
“আনুমানিক বেলা ১ টার দিকে নামাজের আগে আগে ডানপাশের বাউন্ডারি, যা গ্রিল ও ওয়াল দিয়ে নির্মিত, সেটি টপকে একজন অপরিচিত লোক ঢোকে। র্যাব সদস্যরা তাকে দেখে চ্যালেঞ্জ করলে সে এস্কেপ করতে চায় এবং সাথে সাথে এক্সপ্লোশন ঘটে। এতে তার সাথে যে বোমা ছিল তা বিস্ফোরিত হয়ে তার মৃত্যু হয় এবং দুজন র্যাব সদস্য আহত হন।”
সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দুই র্যাব সদস্য আশঙ্কামুক্ত বলে জানান তিনি।
মুফতি মাহমুদ খান বলেন, হামলাকারীর কাছ থেকে কিছু উদ্ধার হয় নি। তবে লাশের সঙ্গে আরও বোমা আছে কি না, সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এই হামলা কারা চালিয়ে থাকতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এ বিষয়ে এখুনি নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে যেভাবে হামলা হয়েছে, তাতে ধারণা করা যায় যে সে (হামলাকারী) জঙ্গিগোষ্ঠীর।”
ছুটির দিনের দুপুরে ওই বিস্ফোরণের খবর পেয়ে র্যাব ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আশকোনায় ছুটে যান। ক্যাম্পের বাইরে ভিড় করে উৎসুক জনতা।
ক্যাম্পের ফটক থেকে দেখা যায়, ৫০ গজ দূরে ব্যারাকের সামনে একটি খোলা জায়গা হলুদ ফিতা দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। ঘটনার কিছুক্ষণ পর বেলা ২টার দিকে একটি অ্যাম্বুলেন্স ওই ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে যেতে দেখা যায়।
সুলতান নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, নামাজ শুরুর আগে আগে তিনি বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পান। পরে র্যাব ক্যাম্পে ছুটোছুটি দেখে বুঝতে পারেন, ঘটনা সেখানেই ঘটেছে।
গতবছর জুলাই মাসে গুলশান ও শোলাকিয়ায় হামলার পর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক অভিযানের মধ্যে বেশ কিছুদিন পরিস্থিতি শান্ত থাকে। এরপর গত ৭ মার্চ কুমিল্লায় একটি বাসে তল্লাশির সময় পুলিশের দিকে বোমা ছোড়ার পর ধরা পড়ে দুই জঙ্গি।
তাদের মধ্যে একজনকে সঙ্গে নিয়ে ওই রাতেই মিরসরাইয়ের একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে অস্ত্র ও বোমা উদ্ধার করে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট।
এরপর বুধবার বিকালে সীতাকুণ্ডের এক বাড়ি থেকে বিস্ফোরকসহ এক জঙ্গি দম্পতিকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পাশের ওয়ার্ডে আরেক বাড়িতে দীর্ঘ ১৯ ঘণ্টা অভিযান চালায় পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট ও সোয়াট।
আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ও গুলিতে এক নারীসহ চার জঙ্গি নিহত হওয়ার মধ্যে দিয়ে সীতাকুণ্ড অভিযানের সমাপ্তি ঘটে। নিহত নারী জঙ্গির পাশে পরে এক শিশুর বোমায় বিক্ষত লাশ পাওয়া যায়।